বৃক্ষরোপণ নেকি অর্জনের সহজ মাধ্যম

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ০৬ ২০১৯, ২২:২৮

হাবীব আনওয়ার

আল্লাহ তা’লার অসংখ্য অগণিত সৃষ্টির মাঝে সুন্দরতম একটি সৃষ্টি হচ্ছে গাছ,বৃক্ষ ৷ আরবিতে বলা হয় ‘সাজারাতুন’। উর্দুতে বলা হয় ‘দরখত’।
পৃথিবীর প্রিতিটি দেশেই গাছ রয়েছে। গাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ এরা ভূমিক্ষয় রোধ করে। গাছ অক্সিজেন তৈরি ও বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড দূরীকরণ এবং ভূমির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাঠ ঘরবাড়ি তৈরি সহ নানান কাঠামো তৈরিতে এবং জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গাছ থেকে আমরা নানারকমের ফল পাই।যা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়।বিভিন্ন গাছে নানা রঙ্গের ফুল ধরে।যা আমাদের হৃদয়ঙ্গম করে।ফুল-ফল বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। গাছ আমাদের প্রতিনিয়ত সেবা করে যাচ্ছে।গাছের সাথে মানুষ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।কারণ, গাছের নির্মল বাতাস মানুষের জীবনের জন্য অতিপ্রয়োজন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের থমাস ক্রাউথার ও তার সহকর্মীরা স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ এবং মাঠপর্যায়ে ব্যাপক সমীক্ষার পর এ তথ্য জানান যে তাদের তথ্যমতে, পৃথিবীতে বর্তমানে প্রতি মানুষের জন্য ৪২০টির মতো গাছ রয়েছে।

গাছ আল্লাহ তাআলার এমন একটি সৃষ্টি যা শুধু দুনিয়াতেই নয়, আখেরাতের জন্য আমাদের পরম বন্ধু। ইসলাম গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে। আল্লাহর নবী ছা. নিজেও গাছ রোপন করতেন এবং সাহাবাদেরও গাছ লাগাতে উৎসাহ দিয়েছেন।
আল্লাহর নবী ছা. গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেন,
হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে কোন মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা হতে পাখী কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ হতে সদাকা বলে গণ্য হবে।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৩২০

হযরত জাবির রা.তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম ফলজ বৃক্ষ রোপন করবে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য দান স্বরূপ, যা কিছু চুরি হয় তাও দান স্বরূপ, বন্য জন্তু যা খেয়ে নেয় তাও দান স্বরূপ। পাখী যা খেয়ে নেয় তাও দান স্বরূপ। আর কেউ কিছু নিয়ে গেলে তাও তার জন্য দান স্বরূপ।

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৮৬০

অন্য হাদীসে আছে, কোনো ব্যক্তি যখন
গাছ লাগায়, তো এ গাছে যত ফল হবে,
তার আমলনামায় এ ফলপরিমাণ সওয়াব লেখা হবে।
(মুসনাদে আহমাদ)

মহানবী ছা. বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বৃক্ষরোপণ করে তা ফলদার হওয়া পর্যন্ত তার পরিচর্যা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যা নষ্ট হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহপাক তাকে সদকার নেকি দেবেন। (মুসনদে আহমদ)

গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ প্রধানের সাথে সাথে অযথা গাছ কাটার প্রতিও আল্লাহর রাসূল ছা. ধমকি দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ বিন হুবশী রা. কর্তৃক বর্ণিত, রাসুল ছা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (খামোখা) কোন কুল গাছ কেটে ফেলবে (যে গাছের নিচে মুসাফির বা পশু-পক্ষী ছায়া গ্রহণ করত), সে ব্যক্তির মাথাকে আল্লাহ সোজা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’।(আবু দাউদ ৫২৪১)
আর তাবারানী বর্ণনা করেছেন, ফলদার গাছ-পালার নিচে ও প্রবাহমান নদী নালার কিনারায় পায়খানা করা নিষেধ।
বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ৯৩

মোটকথা ইসলাম গাছ লাগানো ও তার পরিচর্যার প্রতি ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছেন। সেই সাথে বৃক্ষ রোদনকারীদের প্রতি ভৎসনাও জানিয়েছেন। গাছ আমাদের খুবই আপন।তাই আমাদের চারপাশ সুন্দর ও পরিপাটি রাখতে বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই।তাই আসুন, আমরা আমাদের জীবনকে সুরক্ষা ও পরিবেশ সুন্দর এবং আখেরাতে নেকির পাহাড় নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে বেশি বেশি গাছ লাগাই ও তার পরিচর্যা করি।

গাছ লাগাতে তেমন বেগ পেতে হয় না! খরচও তেমন নেই।অথচ, নেকি অনেক বেশি। আমরা বাজার থেকে আমাদের খাওয়ার জন্য যে ফল ক্রয় করি। তার আঁটি মাটিতে পুঁতে দিলেও সেখান থেকে গাছ জন্ম নেয়। রাস্তার দু’পার্শ্বে, বাড়ির আঙ্গিনায়, এমনকি বাড়ির ছাদেও আমরা গাছ রোপন করতে পারি। হোক তা কোন শবজি কিংবা কোন ফুলের গাছ। যার দ্বারা পরিবেশের সুন্দর্য রক্ষার সাথে সাথে আমাদের আমাল নামও বেশি হবে। তবে মনে রাখতে হবে , গাছ পরিবেশের রক্ষক নয়। বরং আল্লাহ তাআলা-ই পরিবেশের মহান রক্ষক। আসুন! গাছ লাগাই নেকী অর্জন করি এবং সাথে সাথে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখি ৷

লেখক: শিক্ষার্থী, মেখল মাদরাসা হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।