পুণ্যময় রমজান প্লানিং

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ০৭ ২০২৪, ১১:১৮

কাজী শহিদুল্লাহ ওয়াহেদ: আবারও এসে দুয়ারে কড়া নাড়ছে ১৪৪৫ হিজরীর মাহে রমজান। আপনার আমার মুমিন মুসলমানদের পুণ্যময় আরও একটি মাসের আগমন।

মুসলমান হিসেবে আমিও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম রহমত, বরকত আর নাজাতের মাস রমজানুল মুবারকের অভাবনীয় অফার লুফে নিতে আর শামিল হতে মহান আল্লাহ পাকের সম্বোধিত মুমিনদের কাতারে।

কি সেই সম্বোধন শুনি? হ্যাঁ! হ্যাঁ অবশ্যই!! হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যাতে তোমরা খোদাভীরুতা অবলম্বন করতে পার। (সূরা বাক্বারা, ১৮৩)

রমজান আসতেই আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য দারুণ দারুণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়, ভাগ্যবান তারা, যারা মহান রবের ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় পড়ে যায়।

পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে মহান রব্বুল আলামিনের এমন কিছু প্যাকেজের কথা আজ আমি আপনাদের জানাচ্ছি।

১. হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন রমজান মাস আসে তখন আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে বন্দি করা হয়, অন্য এক বর্ণনায় আছে, রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় ( বুখারী ও মুসলিম, মেশকাত শরীফ হাদিস নং ১৮৬০)

২. হযরত সাহল ইবনে সা’দ ( রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল( সা.) ইরশাদ করেছেন, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। ঐ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদারগণই প্রবেশ করবেন। ( বুখারী ও মুসলিম, মেশকাত শরীফ হাদিস নং ১৮৬১)

৩. হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও ছওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখে তার পূর্বের সমুদয় গুনাহ [সগীরা] মাফ হবে, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও ছওয়াবের আশায় রমজানের রাতে ইবাদাতে কাটাবে তারও পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ছওয়াবের আশায় কদরের রাত কাটাবে তারও পূর্বকৃত সমুদয় গুনাহ মাফ করা হবে। ( বুখারী ও মুসলিম, মেশকাত শরীফ হাদিস নং, ১৮৬২)

জানেন তো! আমাদের প্রিয় নবী মাহে রমজানকে কিভাবে গুরুত্ব দিতেন? জানতে হলে যেতে হবে আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা.) ও হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে।

১. হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) শা’বান মাসের খুব হিসাব করতেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত হিসাব করতেন না। অতঃপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। ( আবু দাউদ, মেশকাত শরীফ হাদিস নং, ১৮৮৩)

২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখনই রমজান মাস আসত, তখনই রাসূল (সা.) সব বন্দিকে মুক্ত করে দিতেন এবং সব সওয়ালকারীকেই দান করতেন। ( বায়হাকী শু’য়াবুল ঈমান, মেশকাত হাদিস নং ১৮৬৯)

আল্লাহ পাক ও তার হাবীব ( সা.)-এর দেখানো পথে চলার ভিতরই রয়েছে আমাদের জন্য মঙ্গল। তাই আমি ১৪৪৫ হিজরির রমজানকে সেলিব্রেট করার জন্য, আমার জীবনকে রঙিন করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইনশা আল্লাহ। সবগুলো রোজা রাখব। খতম তারাবি পড়বো। ব্যক্তিগতভাবে রহমত ও মাগফিরাতের বিশদিনে ন্যূনতম ছয় খতম কুরআন ও নাজাতের দিনগুলোতে চার খতম কুরআন পড়ব।

আমার সাধ্যনুযায়ী প্রতিদিন ইফতারে আল্লাহর মেহমান রোজাদারদের সঙ্গী বানাব। তাহাজ্জুদকে কমপক্ষে ত্রিশদিনের জন্য হলেও অলংকার বানাব।

স্পেশালি ইফতার ও সেহরি পূর্ব সময়টাকে তওবা, ইস্তিগফার ও কান্নাকাটির জন্য বরাদ্দ রাখব। গুনাহ, পাপ, অশ্লীলতা, অন্যায়, গীবত, মিথ্যা থেকে দুইশগজ দূরে থাকব।

প্রিয় মুমিন মুসলমানগণ চৌদ্দশ পয়তাল্লিশ হিজরির মাহে রমজানুল মুবারককে স্বাগত জানানোর জন্য আমি এভাবেই প্ল্যান করে রেখেছি। দেরি না করে আপনিও আপনার রমজানকে অর্থবহ করে তুলতে আজই একটি অঙ্গীকারনামা তৈরি করে ফেলুন।

মহান রাব্বুল আ’লামীনের দয়ায় সকালের সূর্যোদয়ের মতো স্নিগ্ধ একটি প্রভাত চাঁদ রাতের আগেই আমাদের সবার মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করে দিবে ইনশাআল্লাহ।