পরিবহণ ধর্মঘট : প্রভাব পড়তে পারে ভোটেও!
একুশে জার্নাল
অক্টোবর ২৮ ২০১৮, ১৩:৫৩
আমিন ইকবাল: দুপুরে যে রিকশায় করে অফিসে আসলাম—এর চালক ‘মালঞ্চ’ বাসের ড্রাইভার। তাকে বললাম, ‘আপনারা না ধর্মঘট ডেকেছেন, আন্দোলন না করে রিকশা চালাচ্ছেন কেন?’
তিনি জানালেন, ‘আমরা দিনে আনি, দিনে খাই। ধর্মঘটে গাড়ি বন্ধ থাকলে আমাদের পেটে ভাত পড়ে না। মালিকদের তো কিছু যায় আসে না, কিন্তু আমরা যারা শ্রমিক—আমাদের বউ বাচ্চা আছে। ইনকাম না হলে নিজে খাব কী, পরিবারকেই বা খাওয়াব কী!’
তিনি জানালেন, ধর্মঘটের এই দু’দিন ভাড়ায় রিকশা চালাবেন তিনি।
খেয়াল করে দেখলাম, ধর্মঘট পালনে রাস্তায় খুব একটা পিকেটার নেই। শ্রমিকরা পেটের দায়ে বাসায় কাতরাচ্ছেন কিংবা অন্য কাম ধরছেন দুদিনের জন্য। ( যে কজন রাস্তায় আছে, তারা নৈরাজ্য চালাচ্ছে। ড্রাইভারের কালে মুখে কালি-মবিল মেখে দিচ্ছি, ডাক্তার-এম্বোলেন্সও চলতে দিচ্ছে না। কোথাও কোথাও রিকশাও বন্ধ করে দিচ্ছে।) আর মালিকরা এসি রুমে বসে রাজনীতি করছেন!
বর্তমানে পরিবহন খাতটা সরকারি নেতাদের হাতে জিম্মি! তবে খুব বেশি না, গুটি কয়েক নেতা এর পেছনে কল-কাঠি নাড়ায়। তারা য়েভাবে বলে—সেভাবেই চলে গণপরিবহণ। কথা নাই, বার্তা নাই যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। সময়ে অসময়ে অবরোধ-ধর্মঘট পালন করছে। এর জন্য রাস্তায় লোক নামাতে হয়, গাড়িটা কেবল বন্ধ রাখলেই হচ্ছে তাদের!
এদিকে, প্রশাসন বা সরকারের যেন কিছুই করার নেই জনগণ ও মানবতা বিরোধী এই কর্মকাণ্ডে।
অথচ সরকার যদি আন্তরিকভাবে চাইত, এসব নৈরাজ্য বন্ধ করা মুহূর্তের ব্যাপার। সরকার পরিবহন নেতা-মালিকদের ডেকে শুধু বলবে, ‘খামাকা কোনো ধর্মঘট দিতে পারবা না। দিলে গাড়ির লাইসেন্স বাতিল।’
তাইলেই দেখতেন মালিকরা কিভাবে বুম বুম করে গাড়ি চালাতে শুরু করে…।
কিন্তু না, সেটা না করে যাত্রীদের ভোগান্তিতে রাখবে শাহজাহান খান, মসিউর রহমান রাঙ্গা, খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহর মতো কিছু মন্ত্রী-এমপি-আমলারা।যারা নেতা সেজে বসে আছেন পরিবহণ সেক্টেরে।
নৌ-মন্ত্রী শাহজাহানকে আজকের ধর্মঘট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘(এ বিষয়ে) আমি জানি না, আমি কিছু জানি না। আমি এটা নিয়ে কিছুই বলবো না।’
এসব মন্ত্রীদের লজ্জা-শরম থাকা উচিত! কিছু দিন আগে ‘হেসে’ কী আগুনটাই না লাগিয়ে ছিলেন মন্ত্রী সাহেব। আজ ‘জানি না’ বলে আগুনে ঘি ঢালতে চান নাকি?
সামনে নির্বাচন, সরকারের বোঝা উচিত—কিছু নেতাকে সুবিধা দিতে গিয়ে দেশের মানুষের যে ভোগান্তিটা হচ্ছে, এর প্রভাব কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের ভোটেও পড়তে পারে!