অধুনা বাংলার নারীরা প্রাণঘাতী কেন হচ্ছে?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ০৩ ২০১৯, ২১:২১

মাসুদ পারভেজ হানিফ

আগে আমরা সিনেমা দেখতাম। সিনেমার নায়ক পুরুষ, খলনায়কও পুরুষ। এরপর সিরিয়াল এলো। সিরিয়ালেও নায়ক পুরুষ, খলনায়কও পুরুষ। তখনকার সিরিয়ালগুলো মূলত আমেরিকা ও ইউরোপের ছিল। যেমন ম্যাকগাইভার, হারকিউলিস, এক্স ফাইলস, দ্য ওশান গার্ল, রবিনহুড, ক্লিউপেট্রা ইত্যাদি।

উপমহাদেশে ভারতে প্রথম সিরিয়াল চালু হয় আলিফ লায়লা, আলি বাবা চল্লিশ চোর, সিনবাদ, হাতেম তাঈ, ইত্যাদি দিয়ে। এই সিরিয়ালগুলো ছিল নিছক বিনোদন ও ঐতিহাসিক কল্পকাহিনি বা গল্প-কিচ্ছা কিংবা কারো জীবন কাহিনী নিয়ে।

হাল আমলের ভারতীয় সিরিয়ালগুলো মূলত হিন্দুত্ববাদকে উপজীব্য করে তৈরি করা। প্রত্যেকটা সিরিয়াল উজবুক কাহিনী। যার মাঝে না আছে বিনোদন, না আছে ঐতিহাসিক কাহিনী। এই সিরিয়ালগুলোতে নায়ক নারী, আবার খলনায়কও নারী।

এই সিরিয়ালগুলোর মূলত ৯০% ইন্ডোর শুটিং করা। এক‌ই ডাইনিং রুমে সবাই দাঁড়িয়ে কথা বলা। এসবে টাইটেল শিরোনামের লিড রুলকে ঘিরে কাহিনি গড়ে উঠে।

একাধিক বিয়ে হিন্দু সমাজে নিষিদ্ধ এবং তারা করেও না। চাচাত, খালাত, মামাত, ফুফাত ভাইবোনদের এরা বিয়ে করে না। তবে বিয়ের আগেই মেয়ে ছেলের ঘরে চলে আসে। এসে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এমনকি খুন-খারাপি, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল জাতীয় সব নোংরা ষড়যন্ত্র ছাড়া কোন সিরিয়াল নেই।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার, প্রতিপত্তি নিয়ে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রসহ সব কিছুর মূলেই নারী, পুরুষ শুধু পার্শ্ব চরিত্র বা শোভা হিসেবে থাকে। আগে যেমন সিনেমাতে নারীরা শোভা বা উহ্য হিসেবে থাকত। এখন সিরিয়ালেও পুরুষ চরিত্র উহ্য।

এই সিরিয়ালগুলো এতটা নোংরা মানসিকতা তৈরি করছে যা কল্পনাও করা যায় না। এই সিরিয়াল নিয়ে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে পর্যন্ত তার জনসভায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

কয়েকদিন আগে ধানমন্ডিতে এক কাজের মেয়ে জোড়া খুন করে। ২জন নিরীহ নারীকে জবাই করে হত্যা করে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কাজের মেয়েকে শুধু বাইরে যেতে দেয়নি, এই কারণেই জোড়া খুন! ভাবা যায়!?

যে নারী সামান্য রক্ত দেখলে বেহুঁশ হয়ে যেত; আমাদের ঐতিহাসিক প্রবাদ ছিল ‘অবলা বাঙ্গালী নারী’; সেই নারী আজ জোড়া খুনের আসামি! কিসের প্রভাবে এই নারী এমন দুর্দান্ত সাহসী খুনি? ত্রি নয়নি, কৃষ্ণ কলি’র মত সিরিয়ালের প্রভাবে নয় কি?

কিছুদিন আগে এক সরকারী চাকরিজীবি নারী তার স্বামীকে খুন করে। খুনের পর কয়েক টুকরা করে ওয়্যারড্রভে ভরে রাখে। কারণ কী ছিল? স্বামী টাকা চাইত তার কাছে! স্রেফ এটাই কারণ!

সিরিয়ালের জন্য অনেক মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। অনেক মেয়ের সংসার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অকারণ ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে। নারীদের ভেতর এক Fantasy Kingdom তৈরি হয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ালের পেছনে কী ঘটেছে, সামনে কী ঘটবে, সব বলে দিচ্ছে তারা। সিরিয়ালের কাহিনীগুলো তাদের মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সিরিয়ালের প্রভাবে নারীরা মানসিক রোগি হয়ে যাচ্ছে। যার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে সমাজে, পরিবারে, ব্যক্তি জীবনে।

গান শুনে, নাটক দেখে, সিনেমা দেখে কেউ ভয়ঙ্কর খুনি হয়নি। তবে এখন হয়ে উঠছে। কেন? ভারতীয় অসামাজিক সিরিয়ালের প্রভাবেই। সুতরাং পরিবার ও সমাজে শান্তি চাইলে এসব সিরিয়াল বর্জন করা অপরিহার্য।