প্রসঙ্গ: মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ২৬ ২০১৯, ০৪:৩২

মুফতী জিয়াউর রহমান

কিছু কিছু বিষয়ে হযরত মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী দা,বা, এর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দ্বিমত পোষণ করি৷ বিশেষ করে যেসব ক্ষেত্রে নমনীয় থেকেও কাজ হওয়া সম্ভব সেসব ক্ষেত্রেও তাঁর কঠোর ভাষা প্রয়োগ অনেকের মতো আমিও একমত নই৷ আমরা অনেকেই হয়ত তাঁর কিছু দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হতে পারি না৷

কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, জানতে হবে ওলীপুরী হুজুর কী জিনিস! এ দেশের পাবলিক অঙ্গনে তাঁর অবদান কেমন রয়েছে৷ একজন ওলীপুরীকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়ত সম্ভব, কিন্তু বাতিলের মোকাবেলায় তাঁর শূন্যস্থান পূরণ হবার নয়৷ বিশেষ করে বাংলাদেশে যখন বিদআত পন্থীদের দৌরাত্ম্য তুঙ্গে, সর্বত্র বিদআতীদের দাপট আর প্রভাবে কওমি অঙ্গন প্রায় কোনঠাসা, সেই নাজুক সময়ে একজন নুরুল ইসলাম ওলীপুরী দালিলিক মোকাবেলায় বুক টান করে দাঁড়িয়েছেন৷ দলিল ও যুক্তির সমন্বয়ে তাদেরকে লা-জওয়াব করে দিয়েছেন৷ পেছনে সাহস ও দুআ দিয়ে নিজেদের মুখপাত্র হিসেবে সম্মানিত করেছেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম৷

তাঁর গাজীপুরের বয়ানের অংশবিশেষ শুনেছি৷ কন্ট্রাকি বক্তাদের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার অবস্থান আজ থেকে নয়, ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি৷ আজকে যারা নতুন বক্তা হয়েছেন, তখন হয়ত তারা ‘তিফলে মক্তব’ ছিলেন৷ তিনি তো নির্দিষ্ট করে কাউকে কিছু বলেন নি৷ কারো নামও নেন নি৷ নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ্য করেছেন কী না, সেটাও বোধগম্য নয়৷ তিনি যখন থেকে হকের আওয়াজ বুলন্দ করে আসছেন, আজকে যারা তাঁর বিরুদ্ধে একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিষোদগার উগলে ছাড়ছে, তখন হয়ত তাঁদের জন্মই হয় নি৷

তিনি বিদআত অধ্যুষিত এমন অনেক এলাকায় গিয়ে হকের আওয়াজ বুলন্দ করেছেন, যেখানে প্রকাশ্যে যাওয়াই সম্ভব হয় নি৷ ছদ্মবেশ ধারণ করে যেতে হয়েছে৷ কখনো আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনিসহ তখনকার সংগ্রামী উলামায়ে কেরাম ওই সমস্ত এলাকা আবাদ করেছেন৷ আজকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন প্রোগ্রামগুলো তো তাঁদেরই ত্যাগের ফসল৷

আরেকজন সংগ্রামী ও বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব হযরত মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারী৷ আল্লাহ তাআলা এই মনীষীর নেক হায়াত দান করুন, সুস্থতা নসিব করুন৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চষে বেরিয়েছেন৷ তাঁর মধুর কণ্ঠ আর সুমধুর তিলাওয়াত, অপরদিকে ওলীপুরী হুজুরের সুস্পষ্ট উপস্থাপন, দলিল ও যুক্তি তখনকার সময়ে আহলে হকের জন্যে ছিলো রহমতস্বরূপ৷ অন্যথায় আজ সমাজ শিরক-বিদআতে সয়লাব থাকত পুরো অঞ্চল৷

আজকে যারা ওলীপুরী হুজুরকে তুলোধুনো করছে, কিছুদিন আগে একদল উগ্র আহলে হাদিস ভাইরাও তো এমনটা করেছে৷ এরও আগে বিদআতী বেরেলভী ও রিজভীরা করেছে৷ তাহলে ‘এদের’ আর ‘ওদের’ মধ্যে পার্থক্য থাকল কই? এটা ঠিক যে, তাঁর ‘তাশাদ্দুদ’ ‘তবিয়তে’ পরিণত হয়েছে৷ একজন বড় ব্যক্তিত্বের কট্টর স্বভাবের কারণে তাঁর পেছনের অবদানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই৷ অমর্যাদা কিংবা অশ্রদ্ধা করার তো প্রশ্নই আসে না৷

#লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া