দিনাজপুরে ২২৫ বছরের পুরনো নয়াবাদ মসজিদ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ০১ ২০১৯, ১৪:১১

দিনাজপুরের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ। ইট, বালু, টেরাকোটা ও টাইল দ্বারা নির্মিত ২২৫ বছরের পুরনো মসজিদটি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত¡ অধিদফতরের ‘হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ২০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর পশ্চিম তীরে নয়াবাদ গ্রামে এর অবস্থান। ১.১৫ বিঘা জমির ওপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে প্রতœতত্ত¡ বিভাগ মসজিদটি সংস্কার করেছে। মসজিদের সামনে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
ইতিহাস বিখ্যাত মসজিদটির প্রবেশদ্বারের ওপর ফারসি ভাষায় রচিত শিলালিপি থেকে জানা যায়, মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সময় ২ জ্যৈষ্ঠ ১২০০ বাংলা সনে (১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ) মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। মসজিদের নির্মাণ সম্বন্ধে জানা যায়, আঠারো শতকের মধ্যভাগে ঢেঁপা নদীর তীরে যখন বিখ্যাত কান্তজীউ মন্দির নির্মিত হয়, তখন পশ্চিমা দেশ থেকে আগত মুসলিম স্থাপত্যকর্মীরা পাশর্^বর্তী নয়াবাদ গ্রামে মোকাম তৈরি করেন এবং সেখানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন।
তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির চার কোনায় রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির টাওয়ার। বাইরের দিক থেকে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২.৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ৫.৫ মিটার। দেওয়ালের প্রশস্ততা ১.১০ মিটার। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি খিলান। মাঝের খিলানের উচ্চতা ১.৯৫ মিটার, প্রস্থ ১.১৫ মিটার। পাশের খিলান দুটি সমমাপের এবং অপেক্ষাকৃত ছোট।
উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে দুটি জানালা রয়েছে। প্রবেশদ্বার ও জানালার খিলান বহু খাঁজযুক্ত। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দিকে রয়েছে তিনটি মেহরাব। মাঝের মেহরাবের উচ্চতা ২.৩০ মিটার এবং প্রস্থ ১.০৮ মিটার। দুই পাশের মেহরাব দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট। মসজিদের তিনটি অর্ধগোলাকৃতির গম্বুজের মধ্যে মাঝেরটি অন্য দুটির তুলনায় কিছুটা বড়। গম্বুজের অবস্থান্তর পর্যায়ে পেন্ডেন্টিভ ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের কার্নিশ এবং প্যারাপেট সমান্তরাল।
মসজিদের চার কোনের কর্নার টাওয়ারের মধ্যে দুটির ওপর (উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম কোনের) কুপলা রয়েছে। বাকি দুটির ওপরে ছোট গম্বুজ। গম্বুজ দুটো বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। কর্নার টাওয়ারগুলো সাদামাটা ইট ও পলেস্তারা দিয়ে তৈরি। কর্নার টাওয়ারের গায়ে চারটি ব্যান্ড আছে। টাওয়ারগুলো ক্রমশ সরু হয়ে উঠে গেছে, ওপরে ছোট গম্বুজ।
সমস্ত দেওয়াল জুড়ে আয়তাকার বহু পোড়ামাটির ফলক রয়েছে। পোড়ামাটির নকশাগুলো বহু জায়গা খুলে পড়েছে। ফলকগুলোর আয়তন ০.৪০ মিটার ও ০.৩০ মিটার। ফলকগুলোর মধ্যে লতাপাতা ও ফুলের নকশা রয়েছে। একটিতে জোড়া ময়ূরের প্রতিকৃতিও আছে। এ ধরনের মোট ১০৪টি আয়তাকার ফলক রয়েছে, তবে ফলকের মধ্যে অলঙ্ক রণের অনেকটাই প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।
এলাকাবাসী ও দিনাজপুর পর্যটন মোটেল সূত্র মতে, দেশ ও বিদেশের বহু পর্যটক ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি দেখার ও এখানে দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য প্রতিদিন ভিড় করছেন। মসজিদ এলাকায় পর্যটকদের জন্য চলাচল ও বসার ব্যবস্থা রয়েছে।