৫মে : মুক্তিযুদ্ধ দেখি নি, দেখেছি নৃশংসতা-মনযূরুল হক

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ০৫ ২০১৮, ১২:৫৪

একুশে জার্নাল মতামত:
ঘটনাটা কি আসলেই ঘটেছিলো? পশ্চাদপদ যাত্রীর মতোই সন্দেহ জাগে, জাগছে, জেগে আছে। কিন্তু কেনো যে সে সন্দেহ, নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। তসবি জপা ধ্যানের ঘোর। বেঁচে থাকার বিস্ময়। প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে ভাবনা হয়, আসলেই কি সেই পৃথিবী আমি দেখছি, যে পৃথিবী দেখেছিলাম ভয়াল রাতের আগে।

যা হোক, এসব বাদ দেয়া যাক। হতেই পারে তাই না? মগের মুল্লুকের দেশ বললে তো মাইন্ড করবেন। নইলে খোঁজ নিয়ে দেখুন, ফেনী থেকে আরাকান আকিয়াব পর্যন্ত রাজ্যটাই একসময় মগরাজ্য বা মগের মুল্লুক নামে পরিচিত ছিলো। এই প্রশ্ন উত্থাপনটা নেহাতই বোকামি যে, কী করে খোদাভীরু তসবিধারী শশ্রূশোভিত মানুষগুলোর ওপর হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে? হোক হায়েনা, তবু তো দেখতে-শুনতে মানুষের মতোই ছিলো। আকারে আকৃতিতেও তো মানুষ বলে ভ্রম হয়। তো এই আকার আকৃতির সৌজন্যেও কি হায়েনার মনে মানবিকবোধের বিক্রিয়া ঘটা সম্ভব ছিলো না? যদ্দূর মনে পড়ে, স্বভাব গবেষকেরা তো এমনটাই বলে থাকেন- সাহচর্যের ফলে আমূল পরিবর্তন ঘটা সম্ভব। তাহলে কি হলো? ওরা কি হায়েনা ছিলো না? তারচেয়েও নিকৃষ্ট কোনো জন্তু-জানোয়ার কিংবা সাক্ষাৎ শয়তানই ছিলো নাকি?

কিসের হেফাজত? কোনোভাবেই হেফাজতের নামটা উচ্চারণ করা যাবে না। মানুষ বলো, মানুষ। শয়তান এই ‘হেফাজত’ শব্দটাকে কানে বাজিয়ে ‘মানুষ’ বিশেষণটাকে ভুলিয়ে রাখতে চায়। কেনো দেখেন নি, প্রথমে বললো তাওহিদি জনতা, তারপর বলা হলো হেফাজত, ক্রমান্বয়ে সেটা পরিণত হলো জঙ্গিতে? তাহলে ফলাফল কী দাঁড়ালো? কোনো তাওহীদিজন শহীদ হয়নি, হেফজতের কর্মী নিহত হয়েছে, না না, কতগুলো নরাধম জঙ্গিকে মেরে ফেলা হয়েছে। ডাস্টবিনে, শহরের দুর্গন্ধ ছড়ানো ভাগাড়ে নিক্ষেপ করো ওদের। খেয়ে যাক অভুক্ত দাঁড়কাক আর চিল শকুনের পাল। হেহ, আমগো শয়তানি থামাইতে আইছে। নিশ্চিত এমন করেই বলেছিলো কোনো অফিসার। সে অফিসার বাংলাদেশি ডিজিটাল লীগের হোক, কিংবা ইন্ডিয়ান বিএসএফ গুণ্ডার হোক, তাতে কিছু আসে যায় না। অসুবিধাটা হলো, যাদেরকে বলা হয়েছে, তারা শুনেছে বটে, তবে কাউকে কথাগুলো বলে যেতে পারে নি, সুযোগ পায় নি। চলে গেছে অনন্ত অসীমের দেশে, না ফেরার জগতে।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে কতজন মারা গিয়েছিলো, মনে আছে? ১১ জন নাকি? হয়তো ভুলেই গেছি। ৬ দফায়? মারা যায় নি? বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে? তারপর বঙ্গভঙ্গ রদের সময়? ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে? সব শেষে ২৫ মার্চ রাতে? যে রাতটাকে বলা হয়ে থাকে কালো রাত। কেনো যে বলে কে জানে? কালোরাত বলার মতো কি আদৌ কিছু ঘটেছিলো? আমার মনে পড়ে না। যেহেতু আমি সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নই। শুনেছি, পড়েছি, এইটুকুই। তবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। কার কথা বিশ্বাস করবো? যারা সেই রাতের কথা বলে, মায়াকান্না কেঁদে কেঁদে, সেই রাতের কালিমা মাখা পশুদের বিচার করার দৃপ্ত আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় বসেছে, আর সেই রাতের গুণগান গাইতে গাইতে, হাসতে হাসতে, ২৫ মার্চের রাতের ছোবল থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ কিংবা তাদের সন্তানগুলোকে রাতের আঁধারে তারচেয়েও নৃশংসতমভাবে হত্যা করে লুকিয়ে ফেলতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে, তাদের? তাদের রচিত-কথিত ইতিহাস আমাকে বিশ্বাস করতেই হবে- বিশ্বাসের এতো বড়ো কন্টাক্ট নিয়ে আমি খোদার কাছ থেকে আসি নি। ওরা কী করে মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে? যুদ্ধ ওরা করে নি। ওরা হলো ক্রিমিনাল। সত্য ইতিহাস নির্ণয় করা হোক, ওদের চরিত্র বলে, ২৫ মার্চের কালোরাত কায়েম পেছনেও বিভীষণ ছিলো ওরাই। ৭১ এর কতিপয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যেসব ক্রাইমের কলঙ্ক এখোনো ইতিহাসকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়, খুঁজে দেখা হোক, বেরিয়ে আসবে, ওরাই ছিলো সেই নেপথ্যের নায়ক। সেই রাতের অভিজ্ঞ হাতের ছায়া পড়েছে এই রাতে। ৫ মে’র রাতে।

বাংলাদেশ ক্রিমিয়া ভাগ্যের কবলে পড়তো অনেক আগেই। অন্তত পরিকল্পনা মতো এগোলে সেটাই হওয়ার কথা। হয় নি। কারণ ৫ মে’র কালো রাতটাকে ডিঙানো সহজ নয়। বস্তুর চেয়ে বস্তুর ছায়া অনেক বেশি শক্তিশালী। জীবিত মানুষের তুলনায় মৃত মানুষের বাঁধা অনেক বেশি কঠিন। মানুষকে অতিক্রম করা গেলেও ছায়াকে অতিক্রম করাটা সহজ নয়। অদৃশ্য দেয়াল ডিঙানোর ক্ষমতা মানুষের নেই। বিষয়টা এরকমই। এখন যে ক্ষমতাধররা পাগলের মতো আচরণ করছে, বোকার মতো কথা বলছে, মাতালের মতো লম্ফ-ঝম্ফ আর উন্মাদের মতো হম্বিতম্বি করছেÑ এটাই কি প্রমাণ করে না যে, অদৃশ্য কোনো পোকা তাদের বুদ্ধিকে হয় গিলে ফেলেছে, নয় গুলিয়ে ফেলেছে।

একজন মানুষকে সর্বাধুনিক অস্ত্র দিয়ে একদল মানুষ দেখিয়ে যদি বলা হয়, যা, তোর ইচ্ছেমতো খুন কর। তো সে অবিরাম গুলি চালিয়ে দিলো। তারপরও কি কোনোক্রমে এই কথা বলা যায় যে, হ্যাঁ, গুলি হয়েছে বটে, তবে একজনও খুন হয় নি? খুন করতে গিয়ে হাত না কাঁপলেও- যেহেতু তাকে অনুমতি দেয়া হয়েছেÑঅন্তত এতো বড় জ্বলন্ত একটা মিথ্যে বলার বেলায় তার বুক কাঁপবে না, সেটা কী করে বিশ্বাস করা যায়! অথচ সেটাই হয়েছে। ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ উপস্থিত। কেউ বিশ্রাম নিচ্ছে। কেউবা তাহাজ্জুদের সেজদায় পড়ে কাঁদছেন। কেউ আল্লাহ আল্লাহ জিকিরে প্রশান্তি খুঁজছেন বিভোর হয়ে। গভীর রাত। কোনো প্রতিরোধ নেই। রুখে দাঁড়াবার প্রচেষ্টা নেই। একদল সশস্ত্র গুণ্ডা এসে গ্রেনেড আর বুলেটের ঝড় বইয়ে দিলো। শত বছরের পুরোনো অস্ত্র ক্যাম্পে রেখে এসে একে-৪৭ ও এম-১৬-এর মতো রাইফেল হাঁকিয়ে দিলো নির্বিচারে। রাত দুইটা থেকে ভোর পর্যন্ত চলে যুদ্ধের আবহ। না, যুদ্ধ তো বলা যায় না, নিধনযজ্ঞের মহড়া বলতে হবে। কেননা, বুলেটের বৃষ্টির মুখে দু’টা পাটকেল মেরে কোনো যুদ্ধের সংজ্ঞা দাঁড় করানো যায় না। একলক্ষ ষাটহাজার রাউন্ড গুলি হলো। হাতবোমা যে কত ফোটানো হলো তার ইয়ত্তা নেই। অথচ আমাদের সবার পরিচালক, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্তারা বললেন, নাকি প্রলাপ বকলেন, না, কেউ মারা যায় নি। সবাইকে শুধু একটু টোকা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রেস কনফারেন্স হয়েছিলো বোধ করি শুঁড়িখানায় বসে। রক্তের রঙ নিয়ে তামাশায় মেতে উঠলেন ‘দেশের প্রথম খলিফাতুল মুসলিমীনের’ মদিনা সনদওয়ালী কন্যা। পুলিশ বললো, মরেছে মোটে ১৩ জন জঙ্গি। বাম ঘরের মৌলবাদি নেতা বললেন, না, দিনের বেলায় মুসল্লিদের হাতে রুটি-পানি খাওয়ার ফলে হয়তো পুলিশ তার কৃতিত্ব অস্বীকার করছে। আসলে মরেছে ৩৯ জন। ঠুঁটো জগন্নাথের মতো একটি বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন বললো, কৃতিত্ব বলুন আর যাই বলুন, মানুষ কিন্তু ৬১ জনের কম মরে নি। বিরোধী দল যেনো মুখ ফসকে বলতে চেয়েছিলো, ২০০ লোকের নিচে হয় কী করে? এভাবে রাতের আঁধারে মওলানাদের মেরে আপনারা কাজটা ভালো করেন নি। আরো আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ করা যেতো। এভাবে সংখ্যা যত বাড়ে তত বাড়ে নিরীহ মানুষের লজ্জা। আর বুকের ছাতিটা উঁচু হয় সশস্ত্র হায়েনার। গুজবে ছড়িয়ে পড়ে তিন হাজার মানুষের সংবাদ। পালে হাওয়া লেগে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার পর্যন্ত। তুরাগের পাড়ে লাশ ভেসে উঠতে দেখা গেছে বলে বাতাসে ভেসে আসে রক্তের ঘ্রাণ। পদ্মার তীরে ফেরিঘাটে আটকা পড়ে কতগুলো বেওয়ারিশ ট্রাক। জুরাইন গোরস্তানে দেখা মেলে নতুন গোরের তাজামাটি ফেঁপে উঠছে। আহত অজ¯্র মানুষ রক্ত¯œাত দেহে টলতে টলতে যখন অন্তত ট্রেন বা বাসস্টেশনের দিকে পা বাড়ান, তখন আবারো উড়ে আসে সরকারের মদদপুষ্ট রক্তখেকো ড্রাকুলার পাল।

বাবা ফোনের বাটন দাবাচ্ছেন। বলতে চাচ্ছেন, বাড়িতে এ পর্যন্ত ৩ টি লাশ এসেছে, বাবা। তুইও চলে আয়, লাশ হওয়ার আগেই চলে আয়, বাপ আমার। মা কথা বলতে পারলেন না। দীনের জন্যে দোপাট্টা উড়িয়ে তিতিক্ষার বিদায় দিয়েছিলেন যে বোন, ও ততোক্ষণে দুশ্চিন্তায় মূক হয়ে গেছে। শাপলা চত্বর, হ্যাঁ, সেখানেই ঘটেছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচে’ নিকৃষ্টতম হত্যাযজ্ঞ। শাপলা চত্বরের সঙ্গে যেই বিশাল রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকটা দাঁড়িয়ে আছে, যে ব্যাংকের কর্মকর্তা এই বাবা। ছেলেকে ফোনে না পেয়ে টিভির স্ক্রিনে চোখ রাখলেন। হ্যাঁ, ওই তো আমার ছেলে। সোনালী ব্যাংকের সিঁড়িতে কী নির্ভার হয়ে শুয়ে আছে। কালো পাজামা পঞ্জাবি পরা বাপধন কি গায়ে রঙমেখে শুয়ে আছে? চোখে মুখে পানির ছিটা দিলেই উঠে দৌড় দেবে? পর্দায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, পাশেই পড়ে থাকা ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। এতো গভীর ঘুম ছেলের। বাড়িতে এলেও ফজর নামাজে বড় কষ্ট করে তুলতে হয়। আজ এই একবছর পরে সেই ব্যাংকার বাবা ভাবতে পারছেন না, ঘুম থেকে জেগে ছেলেটা কোথায় গেলো? কেনো আর ফিরে এলো না?

এইসব ঘটনা কি কিছুতেই বিশ্বাস করা যায়? গুজব, গুজব। কিছ্ইু ঘটে নি এদেশে। আচ্ছা একাত্তরে যুদ্ধটাও কি হয়েছিলো সত্যি? ওই যে নয়মাস। তিরিশলক্ষ মানুষের ‘গুজব’ ছড়িয়েছিলো যখন। যেই গুজব থেকে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য হৃদয়বিদারক কাহিনী। কতগল্প, কত উপন্যাস, কত শিল্প আর চিত্র যে গড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ। কত যে বীজ বপন হলো সুফলা এই মাটিতে। তাহলে কি ৫ মে’র রাতের নৃশংস ঘটনাটা একটু গুজব হওয়ার যোগ্যতাও রাখে না? একেবারে মিথ্যে হয়ে যেতেও কি পারে না? সেটুকু হলেও তো মিডিয়ায় স্থান পাওয়ার কথা ছিলো। খোঁজ পড়তো পাড়ায় পাড়ায়। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অন্তত সাংবাদিকেরা প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন, না তো, জোবায়ের মারা যায় নি, রিহান মরে নি, আনোয়ার শহীদ হয় নি। এগার, তেরো, উনচল্লিশ, একষট্টি, দুইশ, তিনহাজার কিংবা তিরিশ হাজার- এসবই মিথ্যে কথা। বাবার শোক, মায়ের অশ্রু মিথ্যে। গুলি-বোমায় আজকাল যে আধুনিক ‘আয়রনম্যান’ মানুষ আর মরে না, সেটাও প্রমাণ হতো। সন্ত্রাসী প্রতিরোধে আরো ভালো বুলেট-বোমার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হতো দেশের অভিভাবক সরকার। বিশাল এক শ্রেণীর মানুষ যে স্মৃতি বিভ্রাটে ভুগছে, তাও জানতে পারতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

কী করবেন বাবা? কী করার আছে ভাইয়ের? আপনার আমার? একটা মামলা পর্যন্ত হলো না। কেউ বিচারকের দরবার পর্যন্ত যেতে রাজি হলো না। যে হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট কুকুর-বেড়ালের কষ্টে স্বপ্রণোদনে রুল জারি করেন, সে পর্যন্ত একটা টু শব্দ গলা থেকে বের করলো না। কাপুরুষের মতো পালিয়ে বেড়ালেন সদ্যগজানো নেতারা। পরদিন থেকে দেশব্যাপী শুরু হলো গণপ্রেপ্তার। পালালেন ইমাম। তো মুসল্লিশূন্য হয়ে গেলো মসজিদ। আজানের মিনার থেকে টেনে হিঁচড়ে নামানো হলো মুয়াজ্জিনকে। নামাজের কাতার থেকে গলাধাক্কা দিতে দিতে মসজিদের বাইরে নিয়ে আসা হলো কেনো জীবনে প্রথমবারের মতো কংক্রিটের তৈরি বিশালকায় শাপলাফুলটা দেখতে ঢাকায় গিয়েছিলো, সেই অপরাধে। শহীদানের জানাযাটা পর্যন্ত নির্বিঘেœ আদায় করতে দেয়া হলো না। চোখের পানি শুকোবার আগেই গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো জেঁকে ধরলো ভয়। শুরু হলো গুমরাজ্যের যাত্রা। কী করার আছে বলুন?

কাঁদবেন? নাকি তলোয়ার নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নেবেন। ২৫ মার্চের কালো রাতের পরে তো স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছিলো। ফলে মানুষের মড়ক দেখতে হয়েছে আরো নয়মাস। আপনিও কি সেপথ বেছে নেবেন? নেয়াটা কি উচিত হবে? একটা পতাকা হয়তো পাওয়া যাবে। মিলতে পারে একটুকরো মানচিত্রও। কিন্তু স্বাধীনতা তো আসবে না। পরবর্তী চল্লিশ বছরেও না। তাহলে? আমরা জানি এখন আর যুদ্ধটা সেখানে নেই। সেরকমও নেই। ইসলামের জয়ের ধারাবাহিকতায় যখন স্পেনের জয়ের মুখ দেখতে পেলেন মুসলিম সৈন্যরা। ভাবলেন, আরো আগে বাড়া উচিত আমাদের। পিরিনিজ পর্বতমালায় গিয়ে ধাক্কা খেলো তাদের বিজয়যাত্রা। অসি হাতে নিয়ে ইউরোপ জয় যেনো অসম্ভব হয়ে দেখা দিলো। মুসলিম সৈন্যরা দমলেন না। যুদ্ধের কৌশলে পরিবর্তন আনলেন কেবল। অসির বদলে মসি হাতে শানিয়ে দিলেন অন্যরকম এক লড়াই। তরবারির শির ভেঙে দিতে পারলেও ইউরোপ এই কলম আর কালির সামনে মুখ থুবড়ে পড়লো। মুসলিমদের অসহনীয় নিগ্রহে আক্রান্ত করার পরেও আজ যে আমেরিকাতে ‘মেভলানা রুমি’র কাব্য বেস্ট সেলার, ধর্ম নিয়ে নাক সিটকানো সত্ত্বেও ইবনে খলদুনের ‘আসাবি পলিসি’ রাষ্ট্রনায়কদেরকে জাপ্টে ধরে রাখে আর জাতিসংঘের ক্যাপশনে দোলে শেখসাদির বাণীচিরন্তনী- সেটা সেই যুদ্ধ কৌশলের পরিবর্তনের ফলেই সাধিত হয়েছে।

২৫ মার্চের কালোরাত যে যুদ্ধ উসকে দিয়েছিলো, ৫ মে’র কালো রাতও একই যুদ্ধের আহ্বান করেছে। যুদ্ধ ছাড়া স্বাধীনতা আসবে না নিশ্চিত। তাই সেদিন থেকেই একটা যুদ্ধের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমরা। নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শীরা। শুধু কৌশলটা আলাদা। কেবল এইটুকু মাথায় রাখলেই হবে।

-মনযূরুল হক
তরুণ লেখক, কলামিস্ট।