স্মৃতির ক্যানভাসে শায়েখ ইদ্রীস সন্দীপী র.

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ১৪ ২০২০, ১০:৫৫

মাহবুবুর রহমান
আমার বাবা তার ছাত্রজীবন থেকে তাবলিগপ্রিয় একজন মানুষ। কর্মজীবনের শুরু থেকেই দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত। সকল বিষয়ে কাকরাইলের মুরুব্বি উলামায়ে কেরামের পরামর্শ নিয়ে চলাকে কল্যানকর মনে করেন। সেই সুবাদে ১৯৯৬ সালের রমজানে আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করানোর জন্য পরামর্শ করতে কাকরাইল গেলেন। সেখান থেকে মাওলানা কারী জুবায়ের সাহেব হুজুর সন্দ্বীপের হযরতের কাছে মাদানীনগর যেতে বলেন। তখন আমার আব্বা ও আমি সহ এলাকার দুই মুবাল্লিগ সাথী মাদানী নগর হযরতের সাথে দেখা করতে গেলাম। হযরত শব্দের সাথে আমি পরিচিত ছিলাম না, তেমনি কওমি মাদ্রাসা ও আনুষঙ্গিক বিষয় একেবারেই অচেনা। শুধু আগ্রহ ছিল হাফেজে কুরআন হব। আমার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ফাজায়েলে আমল কিতাবের ফাযায়েলে কোরআন অধ্যায় ও মাওলানা তাওহীদুল ইসলাম বর্তমান গাজীপুর জেলা মারকাজের ইমাম। তিনি খুবই অল্প সময়ে মাদানীনগর মাদরাসাতে হিফজ সমাপন করেছেন।
শাওয়ালের প্রথম দশকেই মাদানীনগর মাদ্রাসার মক্তব বিভাগে ভর্তি হই। সেই থেকেই মনে হযরতের প্রতি একটা দুর্বলতা অনুভব করতে থাকি। হযরতের বয়ান, দোয়া ও কান্নাকাটি হৃদয়ে রেখাপাত করে। বাহ্যিকভাবে হযরতের নূরানী চেহারা ও পরিপাটি চলাফেরা আমাকে বেশ মুগ্ধ করে। মাঝেমধ্যে সকালবেলা ফজর বাদে গন্ধরাজ বা গোলাপ ফুল হাতে হাঁটতে বের হতেন। ওই অবস্থায় হযরত কে দেখে থাকার অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না। সেই ভালোলাগা থেকে ওস্তাদের খেদমতে নিজেকে সঁপে দেই। কারণ মাঝেমধ্যে দেখতাম বিভিন্ন হুজুরদের খাদেমরা হযরতের কাছে সহজে আসা-যাওয়া করে। হযরতের প্রতি যেমন ছিল মনের টান, তেমন ছিল ভয়। ভয় ও  ভালোবাসার মাঝামাঝি সময় পার করতাম। তবে কোন ইস্যুতে একটু সামনে যাওয়া যায় কিনা সুযোগ খুজতাম। একটু সামনে গিয়ে একান্তে সালাম বিনিময় ও নূরানী চেহারা মোবারক দেখার একটা ক্ষুধা অনুভব করতাম।
এমনই এক দিনের কথা মনে পড়ে, তখন হযরতের কামরার খাদেম ছিলেন হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী ভাই (হাবিবুল্লাহ মোমেনশাহী)। আমি গেলাম হযরতের কামরার সামনে। একবার আগাই আবার চলে আসি। এমন উঁকিঝুঁকি মারছি। এমন সময় হাবিবুল্লাহ ভাই জিজ্ঞেস করলেন কি খবর? কি জন্য এসেছ? কি চাই এখানে? ইত্যাদি প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন। হাবিবুল্লাহ ভাইয়ের অঙ্গভঙ্গির কথা কাউকে নতুন করে বলতে হবেনা। আমি উত্তরে বললাম, কিভাবে বেশি বেশি পড়তে পারি সেজন্য জানতে এসেছি। তিনি আমাকে বললেন এগুলো তোমার ওস্তাদজীর কাছ থেকে জেনে নিও, এগুলোর জন্য হযরতজীর কাছে আসতে হয় না। মনে মনে বললাম এটাতো একটা ছুতা, শুধু দেখার জন্য আসা। এক ধরনের নিরাশ হয়ে ফিরে আসলাম। তার কিছুদিন পরে হিফজখানায় উঠলাম। আস্তে আস্তে বুঝতে শিখলাম মাদ্রাসা পরিবেশের অনেক বিষয়াদি। মাদ্রাসার খেদমতে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করতাম।
 হিফজ বিভাগের প্রথম বছর আমিরগঞ্জের হুজুর এক বয়ানে মাদ্রাসায় সব সময় থাকার জন্য ওয়াদা নিলেন। তখন হাত উঠিয়ে ওয়াদা করেছিলাম। সেই থেকে শুরু বন্ধে মাদ্রাসায় থাকা। সেই সুবাদে হযরতের কাছাকাছি যাওয়া ও দেখা-সাক্ষাতের পথ সুগম হতে থাকে। আস্তে আস্তে টুকটাক হযরতের বাড়ির বিভিন্ন কাজ-কর্মে হযরতের কাছে আসা যাওয়া হতো। যতটা দূর থেকে দেখলে ব্যক্তিত্বের ছাপ ভেসে উঠতো, কাছে গেলে ততোটা আপন মনে হতো। এভাবে বছর পেরিয়ে ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি। মাদ্রাসা তখন পরীক্ষার ছুটিতে বন্ধ। আমি বাড়িতে যাইনি, দেশজুড়ে স্মরণকালের বন্যা চলছে। ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ ডিএনডি বাঁধ ছুঁই ছুঁই পানি। কোথাও কোথাও ভেঙে গেছে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা কোনমতে বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে। মাদানীনগর এলাকা বেরিবাঁধের আওতাধীন হলেও মূলত নিচু। যদি বাঁধ রক্ষা না হয়, প্রথম ধাক্কাতেই ঘরবাড়ি সব তলিয়ে যাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে হযরতজীর আমেরিকার সফর চুড়ান্ত। যতটুকু মনে পড়ে, আমেরিকার ওয়াশিংটনে একটা মাদ্রাসা উদ্বোধন করতে যাবেন। মসজিদের সামনে গাড়ি অপেক্ষায়: হযরত কামরা থেকে বের হয়ে আসলেন। আমি একনজর দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। আড়াইহাজারের হুজুর, নাজেম সাহেব হুজুর ও আওলাদদের কেউ কেউ সাথে ছিলেন। নাজেম সাহেব হুজুর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, হযরত আমাদের কি হবে? আল্লাহ না করুন, যদি বাঁধ ভেঙে যায় তবে সব ডুবে মারা যাবে।হযরতজী ভারী গলায় বললেন, আল্লাহর হুকুমে কিছুই হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে। উঠে গেলেন গাড়িতে। আল্লাহর হুকুমে ঠিকই পরদিন থেকে পানি কমতে শুরু হলো। ওই বছরই একদিন রাতে চিটাংরোড গ্লাস ফ্যাক্টরি মসজিদের মাহফিলে হযরতের বয়ান ছিল। মাদ্রাসা বন্ধ থাকার সুবাদে সঙ্গী হয়েছিলাম।
 এভাবে ধীরে ধীরে হৃদ্যতা বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে মাদসার বা বাড়ির পুকুরে মাছ ধরতে যেতাম। মাছ ধরে যখন দেখাতাম তখন খুব খুশি হতেন। সেই হাসিমাখা চেহারা আজো চোখে ভাসে।
এক আষাঢ়ের রাতে আকাশ ডাকছে, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। আমি ইকরাম ভাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, মাদ্রাসার পুকুরের পাড়ে পাড়ে ঘুরে চোখে পড়ার মতো বড়-বড় অনেক গুলো কৈ মাছ কুড়িয়ে নিয়ে গেলাম হযরতের কাছে, দেখে যে খুশি হয়েছেন আর দোয়া করেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
 ২০০০ সাল,হিফজ বিভাগের শেষ বছর। হযরত হিফজ বিভাগে আসলে জিম্মাদার হুজুর কখনো কখনো তেলাওয়াত করতে বলতেন। হযরতের সামনে তেলাওয়াত করতে ভিন্ন অনুভূতি কাজ করতো। আমি হযরতের কাছ থেকে সরাসরি কিছু খেদমত শিখেছি।যার মধ্যে,লেবু কাটা, হাত ধোয়ানো, দস্তরে চিলমুচী না দেয়া, বাঁশের ট্যাংরা বেড়া বাধা, গাছ লাগানো ইত্যাদি গোছালো অনেক কিছু।
 হিফজখানা থেকে ফারেগ হবো, কিতাবখানার নতুন জীবন শুরু হবে।ইত্যাদি নানা ধরনের চিন্তাভাবনা মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এরমধ্যে বয়স হয়েছে অনেক, কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কোন এক সুযোগে হযরতের কাছে বলতে পারলাম মনের ব্যথা। পরবর্তীতে জিম্মাদার হুজুরের মাধ্যমে পরামর্শক্রমে আমি ইকরাম ভাই, মনির ভাই তিনজনকে খুসুসীভাবে পড়ানোর জন্য নির্দেশ দিলেন। পরবর্তীতে আমাদের সাথে এমদাদ ভাই যুক্ত হয়েছিলেন।
২০০১ সালের কালো অধ্যায়, রমনা বটমূলে ঘটে যাওয়া বোমা হামলার কথিত সংশ্লিষ্টতার বর্ণনা নতুন করে লিখার অপেক্ষা রাখে না। তৎকালীন সময়ে হযরতের চোখের পানি কোনদিন ভুলবার নয়। এই অধ্যায়ে লিখতে কয়েক রাতের প্রয়োজন। তখন সাজানো-গোছানো মাদানীনগরের চেহারা কেমন বেদনাতুর ছিল, তা সকলেরই জানা। তখন বিভিন্ন কাজের সুবাদে হযরতের সাথে একান্তে অনেক কাছে যাওয়ার সুযোগ মিলেছে। অনেক স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি, যে ভালোবাসা আমাকে আজও আঁকড়ে ধরে আছে। সেই সময় কোন এক কথার প্রসঙ্গে হযরত আমাকে বলেছিলেন, ও মিয়া! মনে করো যে হুজুর খালি দ্বীন ধর্ম বুঝে, দুনিয়াদারি বুঝে না। আসলে এমন না, দ্বীন যে রকম বুঝি দুনিয়াও ঐরকম বুঝি। দ্বীনের লাভ জাইনা ধরছি ও দুনিয়ার ক্ষতি জাইনা ছাড়ছি”। সেদিনের অভিজ্ঞতায় বলছি, হযরত দ্বীনের পাশাপাশি দুনিয়াদারি বিষয়ে এত সচেতন তা কল্পনাতীত। আমার জীবনে এমন চতুর্মুখী সচেতন বুজুর্গ দ্বিতীয় আর কাউকে পাইনি।
এভাবেই ছোটখাটো অনেক ঘটনার মধ্যে কেটে যায় স্মরণীয় তিনটি মাস।  ২০০১ সালের ক্যালেন্ডারের পাতা ফুরিয়ে ২০০২ সাল উপস্থিত। হযরতের অসুস্থতা মাঝে মধ্যে বাড়তে থাকে। কখনো ভালো কখনো মন্দ। কিন্তু কখনই দেখিনি শেষ রাতে আল্লাহর বান্দা অসুস্থতা বা সফরের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন। শেষ রাতে অধিকাংশ সময় পাহারাদারীর জিম্মাদারী ছিল। সেই সুযোগে তাকিয়ে থেকে দেখতাম বিছানা ছেড়ে উঠা, তাহাজ্জুদ, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি। বাসায় থাকলেও যে সময় উঠেন মাদ্রাসায় থাকলেও একই সময়ে ওঠেন। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অধ্যায়, লম্বা করার সুযোগ নেই…
কখন বছর শেষ হয়ে শাবান মাস এসে গেল।হযরত অসুস্থ হয়ে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি। রমজানের আর কয়েকদিন বাকি মাত্র। আমার তারাবি ঠিক হলো মুক্তিনগর সেলিম ভাইয়ের মসজিদে। কমিটির লোকজন সন্ধ্যায় মসজিদে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। আমি দুপুরের পর হযরতের বাসা থেকে খাবার নিয়ে হাসপাতালে রওনা দিলাম। হাসপাতালের ১৩ তলায় হযরতের কেবিন। রাতের খাবার পৌঁছে দিয়ে কিছু জিনিস বাসায় আনার জন্য জিয়া ভাই গুছিয়ে দিলেন। মাগরিবের পর মসজিদে থাকার কথা ভেবে আসার জন্য খুবই অস্থিরতা প্রকাশ করছিলাম। কিন্তু নিজের সাহস না পেয়ে জিয়া ভাইয়়ের মাধ্যমে মসজিদের কথা জানালাম। হযরত শুধু বললেন এখন থাকো…
মাগরিবের আযান হল, মোহতামীম সাহেব হুজুর, আড়াইহাজারের হুজুর ও জিয়া ভাই সহ জামাতে মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। নামাজান্তে একা ডাকলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিহতের মধ্যে একটা এমন ছিল:  দুনিয়াতে চলে ফিরে খেতে পারবে, ঠেকবে না ইনশা আল্লাহ। তবে দ্বীনের খেদমত করতে পারো মতন কিছু করার চেষ্টা করো।
বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। পরদিন থেকে তারাবি শুরু হল। হযরত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেন সবকিছু চলছে স্বাভাবিক চলছে। হযরত আবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বারডেমে ভর্তি, সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। খুবই নাজুক অবস্থা।
দেখতে দেখতে ১৯ রমজান শেষ হয়ে ২০ রোজার সেহরি খাচ্ছিলাম তখন খবর পেলাম অবস্থা খুবই খারাপ। ফজরের নামাজ শেষ করে নাজেম সাহেব হুজুর ও গজারিয়ার হুজুর গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তখন আমি ও মাজহার ভাই হসপিটালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। হুজুর আমাদের দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোথায় যাবে? আমরা হাসপাতালে কথা বলতেই বললেন চল একসাথে যাই। দিনের আলো ফুটে ওঠার আগেই সোহরাওয়ার্দীতে গিয়ে উপস্থিত। সেখানে গিয়ে স্বস্তি ফিরে পেলাম, অনেক বড় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হলাম। সালাম বিনিময়ের পর ডাক্তার বললেন, এখন বেশি কথা বললে রোগীর কষ্ট হবে, রোগীর রেস্ট দরকার। হযরত শুধু বলছিলেন, আমি মাদ্রাসায় যাবো।এতেকাফের সময় হয়েছে। নাজেম সাহেব হুজুর বললেন, আমার দিল এতমিনান হয়ে গেছে। আমার আব্বাজান রহমাতুল্লাহ আলাইহি মৃত্যুর আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সে সময় একেবারে যায় যায় অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং অনেকদিন সুস্থ থেকে বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। পরামর্শ মতে দেরি না করে মাদ্রাসার দিকে ফিরে আসি। চোখে ঘুম নেই তাই আমি আর মাজহার ভাই বসে টুকিটাকি করে সময় পার করছি।কিছুক্ষণ পর হালকা কান্নার আওয়াজ পেলাম, ভাবছিলাম হয়তো মসজিদে জিকির হচ্ছে। কিন্তু এতমিনানের জন্য দরজা খুলে বের হয়ে যা দেখলাম আর বুঝলাম, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
মুহূর্তেই পাল্টে যেতে লাগল দৃশ্যপট। কিছুক্ষণ পর লাশ এসে পৌঁছল মাদ্রাসার মাঠে। সেদিন কতবার ওই হাসি মাখা নুরানী চেহারাটা দেখে থেকেছি তার হিসাব নেই। এদিকে মোহতামিম সাহেব হুজুর ও এহসানুল্লাহ সাহেব হুজুর ছিলেন বাইতুল্লাহর সফরে। এখনো পৌঁছতে পারেননি,পথে আছেন। মাওলানা মাহবুবুল্লাহ সাহেব বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। রাত দশটায় জানাজার সিদ্ধান্ত হয়। সেদিন শাইখুল হাদীস আজিজুল হক সাহেব, মুফতি আমিনী সাহেব, কাকরাইলের মুরুব্বিরা সহ হাজারো মুমিনদের রাজার সমাগম হয়েছিল প্রিয় মানুষটির জানাযায়। শুধু ফারুক সাহেব আসতে পারেননি। তিনি সবার সাথে ফোনে সমবেদনা জানিয়েছেন অশ্রু বিনিময় করেছেন। সেদিন হযরতের জানাযা পড়িনি ইচ্ছে করেই। আমি, মাজহার আরো অনেকে মিলে পরামর্শ করলাম একটা কাজ করি। এই অপ্রস্তুত আয়োজনে হাজার লোকের সমাগম হবে।যদি কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে পরিস্থিতি কী হতে পারে তা ভেবে দেখেছো? চিন্তা করে সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লাম। সকাল থেকেই লেগে পড়লাম মাদ্রাসার ঢাল থেকে সানারপাড় পর্যন্ত কোন গাড়ি ঢুকতে না দিয়ে লোক চলাচলে সহায়তা করতে। সেদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চিটাগাং রোড থেকে সানারপাড় পর্যন্ত লম্বা গাড়ি পার্কিং ছিল। জানাযা শেষ হলে আর নিজেকে মানাতে পারিনি শেষবারের মতো দেখার লালসায়। কিন্তু গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকার কোন ফুরসত নেই। অগত্যা মেইন গেটের পিলার বেয়ে দারুল হাদীসের পিছন দিয়ে উঠলাম দোতালায়। সেখান দিয়ে ছাদে গিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম শুধু সাদা পোশাকের জান্নাতের পথ যাত্রিকে।
“রমজানে প্রথম দেখা রমজানেই শেষ” হযরতকে হারিয়ে ব্যক্তি জীবনের যে শূন্যতা অনুভব করি তা অপূরণীয়। আজও হযরতের কিছু স্মৃতি সংরক্ষণ করি, ভালোবাসা ও স্নেহের সাক্ষীরূপে।