সৌদি কোরআন প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান হওয়ার খবরটি অসত্য

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

অক্টোবর ১২ ২০১৮, ০০:৫৫

একুশে জার্নাল ডেস্ক : সম্প্রতি সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বিশ্ব কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের চতুর্থ স্থানে বিজয়ী হবার খবরটি মিথ্যা বলে একুশে জার্নালের অনুসন্ধানী রিপোর্টে প্রমানিত হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষে হাফেজ হুসাইন উক্ত প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে বলে যে খবর অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে, সেটা আসলে মিথ্যা।
বরং উক্ত প্রতিযোগিতায় চতুর্থ কোন স্থানই রাখা হয়নি। কেবল প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অধিকারীকেই বিজয়ী এবং সিরিয়াল হিসেবে রাখা হয়েছে।

অনলাইনজুড়ে যখন এই খবরটি নিয়ে চারদিকে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছিলো, তখন একুশে জার্নালের পক্ষ থেকে খবরের সত্যতা যাচাই করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
অন্য সব নিউজ পোর্টালের মতো একুশে জার্নালও চতুর্থ স্থান হবার নিউজটি প্রকাশ করেছিলো হাফেজ হুসাইনের উস্তাদ হাফেজ নেসার আহমেদ আন নাসেরীর বরাত দিয়েই। যিনি এই প্রতিযোগী ছাত্রের সাথেই সৌদি আরবে গেছেন সফরে।
যেহেতু একুশে জার্নাল নিউজটি প্রকাশ করেছিলো, তাই নিউজের সত্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে পাঠকদের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা অবশ্যই রয়েছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই একুশে জার্নাল একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট করার উদ্যোগ নেয়।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সকালে হাফেজ নেসার আহমেদের সাথে ম্যসেঞ্জার কলে যোগাযোগ করেন একুশে জার্নাল এর সহসম্পাদক মাসরুর আহমেদ বুরহান।

হাফেজ নেসার আহমেদ যা বললেন;

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে হাফেজ নেসার সাহেব কিছুটা জোড় দিয়েই বলেন, তার ছাত্র হাফেজ হুসাইন চতুর্থ স্থানে বিজয়ী হয়েছে।
উনাকে প্রশ্ন করা হলো,
-যদি সত্যিই চতুর্থ স্থান পেয়ে থাকে, তাহলে মূল অনুষ্ঠান মঞ্চে এই পুরষ্কার গ্রহনের কোন ভিডিও বা ছবি নেই কেনো? যে ছবি আপনি প্রকাশ করেছেন সেটা তো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের মঞ্চে তুলা ছবি মনে হচ্ছে না। তাছাড়া এই ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ড মনে হচ্ছে এডিট করা। ছবিতে হাতের সার্টিফিকেটও ক্লিয়ার নয়। এমন কেনো?

উত্তরে হাফেজ নেসার সাহেব বললেন, “আসলে এক থেকে তৃতীয় যারা হয়েছে, কেবল তাদেরকেই অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে পুরষ্কার এবং সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ স্থানে বিজয়ীসহ বাকিদের পুরষ্কার,সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে হোটেলে”।

-তাহলে হোটেলে গ্রহন করা পুরষ্কারের একটা ভিডিও ক্লিপ দেখান অথবা সার্টিফিকেটের ক্লিয়ার একটি ছবি ইনবক্সে পাঠান?
তারপর আর কোন উত্তর আসেনি। লাইন কেটে যায়।

অতপর দ্বিতীয় দফায় একুশে জার্নাল এর সম্পাদক কে আই ফেরদৌস চেষ্টা করেন হাফেজ নেসার আহমেদের সাথে যোগাযোগ করতে। অনেকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। দুই এক সেকেন্ড কথা বলার পর বার বার লাইন কেটে যাচ্ছিলো। উনাকে ম্যাসেজে অনুরোধ করা হয়েছিলো এ বিষয়ে উনার একটা বক্তব্য লিখিত অথবা রেকর্ড করে পাঠাতে। কিন্তু সারাদিন অপেক্ষা করার পরও হাফেজ নেসার সাহেবের উত্তর পাওয়া যায়নি।

প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা;

সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বিশ্ব কোরআন প্রতিযোগিতায় দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশী শেখ ওয়ালিদ আল হামিদী।
তিনি বলেন, “পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। রেজাল্ট ঘোষণার পূর্বে বাছাই পদ্ধতির উপর ছোট্ট একটি ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে বিশ্বের শতাধিক দেশ থেকে আগত প্রতিযোগীদের চুড়ান্ত পর্ব পর্যন্ত কিভাবে বাছাই করা হয়েছে সেটা উল্লেখ ছিল।

তিনি আরো বলেন,
আসলে প্রতিযোগিতায় ৪র্থ স্থান বলে কিছু ছিল না। সর্বশেষ বাছাইয়ে যারা ছিল সবাইকেই হোসাইন এর হাতে অধিষ্ঠিত সার্টিফিকেট এর ন্যায় সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে।

শেখ ওয়ালিদ আল হামিদী বলেন, আরেকটি বিষয় : প্রতিযোগী ১১৫ ছিল। দেশ সংখ্যা ছিলো ৮২।

ভিভিওতে স্পষ্ট বলেছেন
مائة و خمسة عشر متسابقا
من إثنتا و ثمانين دولة 

কাতার প্রবাসী হাফেজ মোশাররফ হুসাইন জানান, হুসাইন   আমার কাছে পড়েছে সিলেট আলুর তল মাদ্রাসায়। তার প্রথম হিফজের শিক্ষক আমি ও আমাদের বাহুবলের হাফিজ জামাল। আমদের কাছেই তার হিফজে শুরু ও শেষ। আমি তার ভালো চাই সব সময়, কিন্ত এমন মিথ্যাচার কেনো? এর দায় কার? এই মিথ্যা খবর রটিয়ে প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদে হাফেজ হুসাইনকেই ছোট করা হয়েছে। বিব্রত করা হয়েছে। 

 

আসল খবরঃ

সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মদিনা মনোয়ারায় ৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ৪০তম আন্তর্জাতিক বিশ্ব হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ১০ অক্টোবর বুধবার মসজিদে নবব্বীতে বাদে এশা ফলাফল ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিস্ময় প্রতিভার অধিকারী, প্রথম স্হান অধিকার করেন, সৌদি নাগরিক ইব্রাহীম ইবনে আবদুল্লাহ কাসেমী।

#পুরুস্কার প্রাপ্তরা হলেন

১.সৌদি নাগরিক ইব্রাহীম ইবনে আবদুল্লাহ কাসেমী।২,৫০০০০ সৌদি রিয়াল।
২. জর্দান নাগরিক মালেক আদনান ২০০০০০ লক্ষ সৌদি রিয়াল,
৩.নাইজেরিয়ার আমের ইউনুছ কে১,৫০০০০ হাজার রিয়াল।
৪.কেনিয়ার হাইসন সফর আহমদ কে, ১,২০০০০ রিয়াল।
৫.জর্দানের আরেক নাগরিক উবাইদা ১০০০০০ রিয়াল ।
৬.ফিলিপিনের মুহাম্মদ শহীদ ৬০ হাজার রিয়াল।
৭.নাইজেরিয়ান আবদুল গণি ৪০ হাজার রিয়াল।
৮.লিবিয়ার আমিন ছাবের হামদি ৪০ হাজার রিয়াল।
৯. বসনিয়ার ওমর ফারুক ৩০ হাজার রিয়াল।
১০. শ্রীলংকান আহমদ হানিফ ২০ হাজার রিয়াল।

যদিও বাংলাদেশ চতুর্থ স্থান বা বিজয়ী হতে পারেনি, তারপরও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বিশ্বের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে সর্বশেষ বাছাইপর্বে নিজেকে ধরে রাখা কম কিসে? বাংলাদেশী ক্ষুদে হাফেজ হোসাইন আহমদের জন্য আমরা গর্বি। দোয়া করি আগামীতে উজ্জল দৃষ্টান্ত স্হাপন করে দেশের গৌরব অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ।
একুশে জার্নাল এর পক্ষ থেকে এই ক্ষুদে হাফেজ হুসাইন আহমেদকে অভিনন্দন।