সিলেট-৫ ; মাওলানা উবায়দুল হক থেকে মাওলানা উবায়দু্ল্লাহ ফারুক

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ১৯ ২০১৮, ১৭:২৭

ফাহিম বদরুল হাসান: সিলেট যদি বাংলাদেশের ‘আধ্যাত্মিক রাজধানী’ বলা হয়, তাহলে কানাইঘাট-জকিগঞ্জকে বলতে হবে রাজধানীর কেন্দ্রস্থল (জৈন্তা-গোয়াইনঘাটকেও অবশ্য কেন্দ্রে শামিল করা যায়)। এই কানাইঘাট-জকিগঞ্জে মানুষের ধর্মানুভূতির কথা, সামাজিক জীবনে ধর্মের প্রভাব গল্প করার মতো। এতো এতো আলেম, এতো বেশি হারে টুপি পরা লোক দেশের অন্য কোথাও মেলা ভার। ছোট বেলায় দেখতাম- মাঠে বসে তাস খেলতেসে মধ্যবয়সী কিছু লোক, তাদের অধিকাংশের মাথায় টুপি, মুখে দাড়ি। সাংস্কৃতিক এতো আগ্রাসনের পরও গতবছর (দেশে থাকাকালীন) দেখলাম, একজন হিন্দু মহিলা বাজার পাস দিচ্ছেন মাথার কাপড় দিয়ে অনেকটা মুখ ঢেকে।

যা-হোক, শীবের গীত শেষ। মূল কথায় আসি। এই যে কানাইঘাট-জকিগঞ্জের মানুষের ধর্মের প্রতি টান, সেটার প্রমাণ ভোটের রাজনীতিতে মিলতো ব্যাপকভাবে।যেই বাংলাদেশে হুজুরদেরকে ভোট না দিতে প্রায় পুরো জাতি ঐক্যজোট, সেখানে সিলেট-৫ আসনে হুজুরদেরকে কখনো জনগণ হতাশ করেননি। যদিও চার-পাঁচ জন আলেমের ভোটবাক্সে ভাগাভাগি করতে করতে অন্যরা জিতে গেছে অনেকবার। তবে যখনই আলেমগণ মোটামুটি এক থেকেছেন, জনগণ আলেমগণকে সংসদে পাঠিয়েছে চোখ বন্ধ করে। ১৯৯১তে মরহুম মাওলানা উবায়দুল হক উজিরপুরীকে সংসদে পাঠিয়েছিল এই আসনের জনগণ, ‘অখ্যাত’ মিনার প্রতিকের মাধ্যমে। ১৯৯৬ সালে পাশ করতে করতে কারিশমাটিকভাবে সিটকে পড়েন জামায়াতে ইসলামির প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদউদ্দিন চৌধুরী। অবশ্য ২০০১ সালে এসে তিনি সংসদের চেয়ার পেয়ে যান। পরবর্তী ২০০৮ কিংবা ২০১৪’র নির্বাচনে তো তাঁর পাশ হওয়ার কথা নয়, তাই হতে পারেননি। তবে তিনি যে এ আসনের একজন হেভিওয়েট প্রার্থী- সেটা তাঁর চরম প্রতিপক্ষও অস্বীকার করতে পারবে না। এই অবস্থানে পৌঁছতে দল/কর্মীর চে’ তাঁর পারসোনালিটিই বেশি কার্যকর ছিল। আমাদের বাড়ি থেকে তাঁর বাড়ি হয়তো তিন কিলোমিটারও দূর হবে না। খুব কাছ থেকে দেখে আসছি, একজন দীনদার, দিলদার আলেম তিনি। একেবারে সাদামাটা চলাফেরা। সর্বমহলের মানুষের সাথে তাঁর সম্পর্ক, শ্রদ্ধাবোধ আসলেই রিমার্কেবল। ‘কাওমি-জামাত’র একধরণের বৈরি সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে মাওলানা ফরিদ চৌধুরি যেন শ্রোতের উল্টো। কাওমি মাদরাসার ওয়াজে গিয়ে ওয়াজ করা, মাদরাসা-মসজিদে যাতায়াত ইত্যাদি আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে।
এবার তাঁকে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মনোনীত করেনি, করেছে জমিয়তের মাওলানা উবায়েদুল্লাহ ফারুককে।

এটা আসলেই শক খাওয়ার মতো বাস্তবতা। কারণ, ঐক্যফ্রন্ট থেকে ফারুক সাহেবের নির্বাচিত হতে যতখানি বেগ পেতে হবে, যত চ্যালেন্জ ফেইস করতে হব, ফরিদ চৌধুরির তত বেগ পেতে হতো না। অতীতের তিন-চারটা সংসদ নির্বাচনের পাতা উল্টালে উবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেবের ভোটবাক্সের একেবারে তলানিতে কিছু ভোট পাওয়া যাবে। তবে যেহেতু অনেক দলের মিলিত জোট হচ্ছে- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, সেহেতু এখানে হিসেব-নিকেশটা বিভিন্ন সূত্রে হয়ে থাকে। হয়তো জামায়াতের চেয়ে জমিয়তের লবিং এ আসনে জোরালো ছিল, তাই জমিয়তকে এই আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উবায়দুল্লাহ সাহেব কি পারবেন ঐক্যফ্রন্টকে আসনটি এনে দিতে? তিনি কি পারবেন তেইশটি দলের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে পা রাখতে?
উত্তর সহজ। তাঁকে এবং তাঁর কর্মীদেরকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হব তিনি জমিয়তের নয়, বরং ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। আসনটি ভোটের মূল চালিকাশক্তি আলেমসমাজ এবং ইসলামি দলসমূহ। সকল ইসলামি দল এবং আলেমসমাজকে এক প্লাটফর্মে দাঁড় করাতে পারলে তিনি জয়ের একেবারেই নিকটে চলে যেতে পারেন।
কিন্তু এখনো কেমন যেন পরিলক্ষিত হচ্ছে- জামায়াত-জমিয়তের মাঝখানে ছাড়া ছাড়া ভাব, ঠেলাঠেলি স্বভাব। অন্যান্য ইসলামি দলেরও সেভাবে পার্টিসিপেশন দৃশ্যে নেই। এগুলো সমাধান না হলে ঐক্যফ্রন্টের ফ্রন্টে থাকা মহা মুশকিল।