সার্বজনীন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

অক্টোবর ০৮ ২০১৯, ২২:০০

সার্বজনীন, যা সবার জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু এই “সবার” অন্তর্ভুক্ত কারা? বিশেষত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শীর্ষ ধর্মীয় উৎসব “দুর্গাপূজার” ক্ষেত্রে এই ‘সার্বজনীন’ শব্দ ব্যবহার করে বলা হয় “সার্বজনীন দুর্গাপূজা” কথাটি ঠিকাছে, কিন্তু আমরা যথার্থভাবে বুঝতে পারিনা। দুর্গাপূজার ক্ষেত্রে যে সার্বজনীন শব্দ প্রয়োগ করা হয়, সেই সার্বজনীন এর মধ্যে যে “সবার” আছে, সে সেটা সনাতনধর্মালম্বী সবার জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই উৎসব। এর অর্থ এটা নয় যে, এই সার্বজনীন দ্বারা সকল ধর্মের সবাই উদ্দেশ্য বা সকল ধর্মের সবার জন্য পালনীয়। বুঝিয়ে বলছি,

সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে অনেক জাত আছে, যেমন- ব্রাহ্মণদের মধ্যে-
চক্রবর্তী/চক্রবর্ত্তী,
ভট্ট/ভট্টাচার্য্য/ভট্টাচার্য্যী/ভট্টাচার্য, বন্দ্যোপাধ্যায়/ব্যানার্জী/ব্যানার্জি, গঙ্গোপাধ্যায়/গাঙ্গুলী/গাঙ্গুলি, আচার্য্য/আচার্য্যী, চট্টোপাধ্যায়/চ্যাটার্জী/চ্যাটার্জি, উপাধ্যায়, গোস্বামী, দেবশর্মা/শর্মা, সরখেল, লাহিড়ী, মিশ্র, মৈত্র, সান্যাল, রায় নারায়ণ, ভাদুড়ী, ঘোষাল, পুতিতুন্ড,
তেওয়ারি/ত্রিবেদী, মৌলিক, কাঞ্জিলাল, শাস্ত্রী, পিরালি, অধিকারী ইত্যাদি।
ক্ষত্রিয়দের মধ্যে আছে-
সিংহ, রুদ্র, ভদ্র, সেনগুপ্ত, ভাওয়াল, পালিত, রক্ষিত, ভানুশালী, আদিত্য, সোম, চন্দ্র, রায়, রাহুত, ভূঁইয়া, রাষ্ট্রী, পাইক, বালা ইত্যাদি।
বৈশ্য কপালীদের মাঝে আছে-
রায়, কুরী, মন্ডল, ব্যাপারী, সরকার, খাঁ, বালো, মল্লিক, মৃধা, তরফদার, ভৌমিক, দাস, পোদ্দার, বসাক, সাহা, বণিক, প্রমাণিক, সিকদার, লাহা ইত্যাদি।
কায়স্থদের মাঝে আছে-
চাকী, কর, গুপ্ত, মিত্র, বাগচী, নন্দী, দে, ধর, দত্ত, গুহ, পাইন, বসু, বোস, সেন, দেব, রায়, কন্ঠ, কেওট, সুর, চন্দ, কুন্ডু, আইচ, দাস ইত্যাদি।
ভূ-স্বামীদের মাঝে আছে-
মুন্সী, চাকলাদার, তালুকদার, রায় বাহাদুর, চৌধুরী, ঠাকুর, প্রধান, মল্লিক, রায়চৌধুরী, দস্তিদার, খাস্তগীর, সরকার, বর্ধন, মহলানবীশ, মজুমদার, দেওয়ান ইত্যাদি।
পেশায় প্রাপ্তদের মাঝে আছে-
কানুনগো, কারিগর, কর্মকার, ঘটক, গোঁসাই, পালাকার, কীর্তনীয়া, নাগ, ভাঁড়, শোলাকার, মালাকার, ঘরামী, মিস্ত্রী, সূত্রধর/সুতার, পাঁটিকার, বাড়ৈ, হাজরা, হালদার, দেওরী, পটুয়া, পাটোয়ারি, ডাকুয়া, পাল, বৈদ্য ইত্যাদি।

আবার তাদের অনেক ধর্মীয় উৎসবও আছে। যেমন- দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মী পূজা, কালিপূজা, জন্মাষ্টমী, মকর সংক্রান্তি, শিবরাত্রি, পোঙ্গল, দোলযাত্রা, নবরাত্রি, থাইপুসম, রাম নবমী, গণেশ চতুর্থী, শিগমো, দশেরা, দীপাবলি, গুদী পাডবা, উগাদি, বিহু, বোনালু, রথযাত্রা, গুরু পূর্ণিমা, রাখিবন্ধন, ওনাম, গৌরী হব্য, ছট্ পূজা, গণেশ চতুর্থ ইত্যাদি।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উল্লেখিত সব জাতের জন্য উপরোল্লিখিত সব ধর্মীয় উৎসব নয়। প্রায় ধর্মীয় উৎসবই কিছু জাতের লোক পালন করেন, কিন্তু অন্য জাতীরা তা পালন করেন না। কিন্তু “দুর্গাপূজা” সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এমন একটি উৎসব, যা জাত-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রযোজ্য বা পালনীয় এবং তারা সবাই এই উৎসব পালনও করেন। সে জন্যই দুর্গাপূজাকে বলা হয় “সার্বজনীন” মানে সকল সনাতনীদের জন্য।

তাই আমার প্রিয় মুসলমাদের ভাইবোনদের সদয় অবগতির জন্য বলছি, মুসলমানদের জন্য এই উৎসবে অংশগ্রহণ করাকে ইসলাম সমর্থন করেনা। তবে রাষ্ট্রের কর্ণধার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের নির্দেশনা হল, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে, নিরাপদে যথাযথ ভাবে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া।