সাকিবময় ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে টাইগাররা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ২৪ ২০১৯, ২৩:৫৮

বিশ্বকাপের মহারণে সেমি-ফাইনালের স্বপ্নে এগিয়ে চলা টাইগাররা আবারো পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে উঠে এসেছে। প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট-বলে দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন সাকিব আল হাসান। সাবেক কিংবদন্তিদের টপকে বিশ্বকাপের একই ম্যাচে ফিফটি আর পাঁচ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। বিশ্বমঞ্চে ১ হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন। দারুণ ব্যাট করে দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর পাইয়ে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। ম্যাচ সেরা হন সাকিব।

৬ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে গতবারের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড। সমান ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ভারত ৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তিনে, স্বাগতিক ইংল্যান্ড ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে। বাংলাদেশ ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে উঠে এসেছে পাঁচ নম্বরে। ছয়ে নেমে যাওয়া শ্রীলঙ্কা ৬ ম্যাচে পেয়েছে ৬ পয়েন্ট। ৭ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে সাতে পাকিস্তান। ৬ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে আটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ নম্বরে। আর ৭ ম্যাচের সবকটিতে হেরে কোনো পয়েন্ট নেই আফগানিস্তানের। এরই মধ্যে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে আফগানিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।

টুর্নামেন্টের ৩১তম ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগান দলপতি গুলবাদিন নাইব। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা তোলে ২৬২ রান। ফিফটি হাঁকিয়েছেন ইনফর্ম দুই টাইগার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসান। দারুণ ব্যাট করেছেন তামিম, মোসাদ্দেক, মাহমুদউল্লাহরা। ৪৭ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে আফগানরা তোলে ২০০ রান।

সোমবার (২৪ জুন) সাউদাম্পটনের হ্যাম্পশায়ার বোলে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে আফগানদের মুখোমুখি হয় টাইগাররা। বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটা ৪০ মিনিটে শুরু হয় ম্যাচটি। গাজী টিভি ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করে। এই ম্যাচে সাব্বির রহমানের জায়গায় মোসাদ্দেক হোসেন এবং রুবেল হোসেনের জায়গায় এসেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে বিদায় নেন লিটন দাস। মুজিব উর রহমানের বলে শর্ট কাভারে হাশমতউল্লাহ শহিদির তালুতে বন্দি হন লিটন। মাঠের আম্পায়ার আউটের সফট সিগন্যাল দিয়ে তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে পাঠান। টিভি রিপ্লে দেখে থার্ড আম্পায়ার পাকিস্তানের আলিম দার লিটনকে আউট বলে ঘোষণা করেন। যদিও আউটটি নিয়ে যথেষ্টই বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিদায়ের আগে ১৭ বলে দুই বাউন্ডারিতে ১৬ রান করেন লিটন। বাংলাদেশ দলীয় ২৩ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায়।

ইনিংসের ১৭তম ওভারের শেষ বলে তামিমকে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ নবী। দলীয় ৮২ রানের মাথায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায়। তামিম বিদায়ের আগে করেন ৩৬ রান। তার ৫৩ বলের ইনিংসে ছিল চারটি বাউন্ডারি। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে সাকিবকে এলবির ফাঁদে ফেলেন রশিদ খান। বাংলাদেশ রিভিউ নিলে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বেঁচে যান সাকিব। ব্যক্তিগত ২৩ রানে সাকিব আবারো সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে উঠেন। আর ব্যক্তিগত ৩৫ রান করে সাকিব ১৯তম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বমঞ্চে এক হাজার রান করেন। ইনিংসের ৩০তম ওভারে মুজিব উর রহমানের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন সাকিব। তার আগে চলতি বিশ্বকাপে তিনটি ফিফটি আর দুটি সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন। ৬৯ বলে এক বাউন্ডারিতে করেন ৫১ রান। দলীয় ১৪৩ রানের মাথায় বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারায়।

ইনিংসের ৩২তম ওভারের শেষ বলে মুজিব এলবির ফাঁদে ফেলেন সৌম্য সরকারকে। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি ১০ বলে ৩ রান করা সৌম্য সরকার। দলীয় ১৫১ রানের মাথায় বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়। এরপর জুটি গড়েন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। এই জুটিতে আসে ৫৬ রান। দলীয় ২০৭ রানের মাথায় বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। গুলবাদিন নাইবের বলে মোহাম্মদ নবীর হাতে ধরা পড়ার আগে তিনি ৩৮ বলে দুই বাউন্ডারিতে করেন ২৭ রান।

মুশফিক টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পিছনেই ছুটছিলেন। ইনিংসের ৪৯তম ওভারে বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৮৩ রানে। তার আগে মোসাদ্দেককে নিয়ে স্কোরবোর্ডে ৪৪ রান যোগ করেন মুশফিক। ৮৭ বলে চারটি চার আর একটি ছক্কায় মুশফিক তার ইনিংসটি সাজান। মোসাদ্দেক হোসেন ২৪ বলে চারটি চারের সাহায্যে ৩৫ রান করে ইনিংসের শেষ বলে বোল্ড হন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২ রানে অপরাজিত থাকেন।

মুজিব উর রহমান ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে পান তিনটি উইকেট। দৌলত জাদরান ৯ ওভারে ৬৪ রান দিয়ে পান একটি উইকেট। মোহাম্মদ নবী ১০ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে পান একটি উইকেট। গুলবাদিন নাইব ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে দুটি উইকেট তুলে নেন। রশিদ খান ৯ ওভারে ৫২ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। ১ ওভারে ৭ রান দিয়ে রহমত শাহ উইকেটশূন্য থাকেন।

২৬৩ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামে আফগানরা। ইনিংসের ১১তম ওভারে এসে বাংলাদেশ প্রথম উইকেটের দেখা পায়। সাকিব নিজের প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন ওপেনার রহমত শাহকে। দলীয় ৪৯ রানের মাথায় বিদায় নেওয়ার আগে রহমত শাহ ৩৫ বলে তিন চারে করেন ২৪ রান। ইনিংসের ২১তম ওভারে মোসাদ্দেক ফিরিয়ে দেন তিন নম্বরে নামা হাসমতউল্লাহ শহিদিকে। দলীয় ৭৯ রানের মাথায় স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ৩১ বলে ১১ রান করা হাসমতউল্লাহ।

ইনিংসের ২৯তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন সাকিব। ৪৭ রান করা গুলবাদিন নাইবকে ফিরিয়ে দেওয়ার এক বল পরে বোল্ড করেন মোহাম্মদ নবীকে। দলীয় ১০৪ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় আফগানরা। দলীয় ১১৭ রানের সময়ে পঞ্চম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ম্যাচের ৩২.২ ওভারে সাকিবের বলে অতিরিক্ত ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নামা সাব্বিরের তালুবন্দি হন আসগর আফগান। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল ২০ রান। ৩৬তম ওভারে লিটনের দুর্দান্ত এক সরাসরি থ্রোতে সাজঘরে ফেরেন ১২ বলে ১১ রান করা ইকরাম আলী। ৪৩তম ওভারে সাকিব নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নেন, স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন ২৩ বলে ২৩ রান করা নাজিবুল্লাহ জাদরান। ইনিংসের ৪৫তম ওভারে মুস্তাফিজের চতুর্থ বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকে কাছে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেন দৌলত জাদরান।

৪৪তম ওভারে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন ২ রান করা রশিদ খানকে। ১৯১ রানে অষ্টম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। নবম উইকেটটি তুলে নেন মোস্তাফিজ, ফিরিয়ে দেন ০ রান করা দৌলত জাদরানকে। শেষ উইকেটটি নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, ফিরিয়ে দেন মুজিব উর রহমানকে। সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ৫১ বলে ৪৯ রান করে অপরাজিত থাকেন।

সাকিব ১০ ওভারে ২৯ রান দিয়ে পান পাঁচটি উইকেট। মোস্তাফিজ ৮ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট। মাশরাফি ৭ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। মিরাজ ৮ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। সাইফ ৮ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে একটি উইকেট পান। মোসাদ্দেক ৬ ওভারে ২৫ রান দিয়ে পান একটি উইকেট।

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা জয় দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে শুভ সূচনা হয় টাইগারদের। তবে এরপর দুই ম্যাচেই হেরে বসে। আর একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। নিজেদের পঞ্চম ম্যাচেই উইন্ডিজকে সর্বোচ্চ ৩২২ রান তাড়া করে হারিয়েছে টাইগাররা। আর অজিদের বিপক্ষে লড়াকু হারেও প্রশংসিত হয়েছে। ছয় ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের মোট পয়েন্ট ৫ ম্যাচ। অন্যদিকে নিজেদের ছয় ম্যাচের ছয়টিতেই হার আফগানদের। অবস্থানও করছে পয়েন্ট টেবিলের একদম তলানিতে। স্বাগতিক ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারতে হয়েছে টাইগারদের। কিউইদের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে টাইগাররা হেরেছে মাত্র ২ উইকেটে আর ইংলিশদের বিপক্ষে ১০৬ রানের বিশাল পরাজয়। আর শেষ ম্যাচে অজিদের বিপক্ষে লড়াকু হার।