সরকারি মাদরাসা শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হচ্ছে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ২১ ২০১৮, ২০:২৬

কোনও ধরনের রাজনীতিতেই অংশ নিতে পারবেন না মাদ্রাসা শিক্ষকরা। ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড-২০১৮’ আইনের চূড়ান্ত খসড়ায় এ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সম্প্রতি চূড়ান্ত খসড়াটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।

ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে বেতন কাঠামোর আওতায় নেওয়ার উদ্যোগের পর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন সরকার স্বীকৃত সব স্তরের মাদ্রাসা শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ করা হচ্ছে। এর আগে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য আইনি এই বাধ্যবাধকতা ছিল না। এই প্রথম বেসরকারি শিক্ষকদের রাজনীতি করার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আনা হচ্ছে। এছাড়া নতুন আইনে সরকার স্বীকৃত ইসলামি শাস্ত্র শিক্ষা ও চর্চার জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও রাজনীতি করতে পারবেন না।

মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) রওনক মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৯৭৮ সালের মাদ্রাসা শিক্ষা অর্ডিনেন্সকে আইনে রুপান্তরের পাশাপাশি তা যুগোপযোগী করা হচ্ছে। চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য।’ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুল খালেক গত ১৭ সেপ্টেম্বর আইনের সারসংক্ষেপসহ চূড়ান্ত করা খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন।

প্রস্তাবিত আইনে সরকার স্বীকৃত ধর্মীয় শিক্ষা ও চর্চার জন্য প্রতিষ্ঠান, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা ও আলিম মাদ্রাসার শিক্ষকদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ হয়েছে। অন্যদিকে, ফোরকানিয়া ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে প্রাথমিক শিক্ষার সমমান নির্ধারণ করা হয়।

রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়- এসব মাদ্রাসার কোনও শিক্ষক রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নিতে, যোগ দিতে ও সহায়তা করতে পারবেন না। সরকারের বিরুদ্ধে কোনও প্রকার গণঅসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারবেন না। জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে শত্রুতা বা বিভেদ সৃষ্টি হয়, কিংবা জনশান্তি নষ্ট হয়; বিঘ্নিত হয়— এমন কোনও কাজে জড়িত হতে পারবেন না। কোনও শিক্ষক ও কর্মচারী স্থানীয় সরকার পদ্ধতির কোনও নির্বাচনি প্রচারণায়ও অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি কিংবা প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। কেউ এই শর্ত ভঙ্গ করলে চাকরিচ্যুতসহ শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার।

প্রস্তাবিত আইনে ইসলামি শাস্ত্র ও চর্চার জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ফোরকানিয়া, ইবতেদায়ি, দাখিল ও আলিম মাদ্রাসার পাঠের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে পবিত্র কোরআন শিক্ষা, ইসলামিয়াত অর্থাৎ তাফসির, হাদিস, ফিকহ্ কালাম, উসুল, মা’কুলাত, ফারায়েজ, বালাগাত, মানতিক, আকাইদ এবং সংশ্লিষ্ট প্রাসঙ্গিক বিষয়। মানবিকবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে -আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ইসলামের ইতিহাস, সাধারণ ইতিহাস, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। এছাড়া রয়েছে বিজ্ঞান, বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা। এসব বিষয় ছাড়াও সরকারের অনুমতি নিয়ে অন্যান্য কারিগরি ও বিশেষ বিষয় চালুর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে প্রতিষ্ঠানগুলো।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদ্রাসা শিক্ষার পরিচালন, তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও অগ্রগতি সাধনে ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড-২০১৮’ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। ১৯৭৮ সালের মাদ্রাসা শিক্ষা অর্ডিনেন্সকে আইনে রুপান্তর ও যুগোপযোগী করতে এই উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আইনের খসড়া যাচাই-বাছাই কমিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উত্থাপন করা হবে।

উৎস-Bangla Tribune