সদকাতুল ফিতরের বিধান —মুফতি আহমদ যাকারিয়া

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ২৪ ২০২০, ১২:৫৮

সদকাতুল ফিতর কী? এটা কার উপর ওয়াজিব?

ইসলামী বিধান অনুযায়ী সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। (ফরজের কাছাকাছি) মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এক সা’ পরিমাণ যব, খেজুর, পনির, কিসমিস কিংবা এর সমপরিমাণ টাকা আদায় করতে হবে। সদকায়ে ফিতর আদায় করা না হলে গুনাহগার হবেন।

সদকাতুল ফিতর আদায়ের পরিমাণ উল্লেখ করে এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে।

হযরত ইবনে ‍উমর রাঃ থেকে বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ-নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূলুল্লাহ সাঃ সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন। লোকজনদের ঈদের নামাযে বের হওয়ার আগেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী)

রাসূলের যুগে সাহাবিগণও এ পরিমাণ সদকায়ে ফিতর আদায় করেছেন।

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন, আমরা এক সা’ পরিমাণ খাদ্য, এক সা’ পরিমাণ যব অথবা এক সা’ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা’ পরিমাণ পনির, অথবা এক সা’ পরিমাণ কিসমিস দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (বুখারী)

ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা, চাইলে বেশি দেওয়া যাবে।

গম কিংবা আটার বাজারমূল্য হিসাব করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবার ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করেছে জনপ্রতি কমপক্ষে ৬৫ টাকা। তবে চাইলে যে কেউ এর বেশি দিতে পারবেন (খেজুর কিংবা কিসমিদের দাম দিতে পারবেন)। ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা আটা অথবা খেঁজুর, কিসমিস, পনির বা যবের মধ্যে যেকোনো একটি পণ্যের ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের বাজার মূল্য ফিতরা হিসেবে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করা যায়। এই হিসেবে এবার সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কার কার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর দেওয়া ওয়াজিব?

সদকাতুল ফিতর নিজের এবং নিজের নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ হতে আদায় করবে, যদি তারা নেসাবের মালিক না হয়। আর তারা নেসাবের মালিক হলে তাদের মাল থেকেই সদকায়ে ফিতর আদায় করবে।

নিজের খেদমতের গোলাম চাই মুদাব্বির হোক কিংবা উম্মে ওয়ালাদ হোক তাদের পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। তবে ব্যবসার গোলামের পক্ষ হতে এবং নিজের স্ত্রী, বালেগ সন্তানাদি ও মুকাতাব গোলামের পক্ষ হতে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে না। তদ্রূপ কোন গোলাম মালিকের নিকট থেকে পালিয়ে গেলেও তার ফিতরা আদায় করতে হবে না, তবে পরে ফিরে আসলে আদায় করে দিবে।

সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত কি কি?

ঈদুল ফিতরের দিন কোন স্বাধীন মুসলমান নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে তার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব।

উক্ত নেসাব ঋণ এবং মৌলিক প্রয়োজনাদির অতিরিক্ত হতে হবে। তবে তা বর্ধনশীল মাল হওয়া শর্ত নয়। এরূপ নেসাবের অধিকারী ব্যক্তির জন্য সদকা গ্রহণ করা হারাম।

নেসাব কত প্রকার ও কি কি?

নেসাব তিন প্রকার হতে পারে।

প্রথমত: যার কাছে শুধু এক দিনের খাদ্য বিদ্যমান থাকে, এছাড়া আর কিছুই তার কাছে নেই। এ পরিমাণ মালের মালিকের উপর ভিক্ষা করা হারাম। যাকাত ও সদকায়ে ফিতরের মাল গ্রহণ করা তার জন্য হালাল। তবে এ ধরনের ব্যক্তি যদি অন্য প্রয়োজনে সওয়াল করে তবে তা তার জন্য জায়েজ হবে।

দ্বিতীয়ত: যার কাছে নেসাব পরিমাণ স্বর্ণ-রৌপ্য বা গৃহপালিত পশু নেই। তবে অন্য মাল এ পরিমাণ আছে যে, যার মূল্য সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমপরিমাণ হয়। তাহলে এমন মালিকের উপর সদকায়ে ফিতর আদায় করা ও কুরবানি করা ওয়াজিব হবে এবং সে যাকাত ও ফিতরার মাল গ্রহণ করতে পারবে না।

তৃতীয়ত: সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের সমপরিমাণ ব্যবসার পণ্য থাকলে এমন মালিকের জন্য যাকাত, ফিতরা, কুরবানি ইত্যাদি আদায় করা ওয়াজিব হবে।

সদকাতুল ফিতর কখন ওয়াজিব হয়?

ঈদের দিন সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। অতএব যে ব্যক্তি ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পূর্বে মারা গেল বা সুবহে সাদিকের পরে জন্মগ্রহণ করল বা মুসলমান হলো; তার উপর সফকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে না।

সদকাতুল ফিতর কখন আদায় করবেন?

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার আগেই প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। নাবালক ছেলে-মেয়ের পক্ষ থেকে অভিভাবককে ফিতরা আদায় করতে হয়।

“মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ (সাড়ে সাতভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ ভরি রূপা) সম্পদের অধিকারি প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। সদকায়ে ফিতর আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর থেকে ঈদের নামাজ আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত। যদি চাঁদ রাত কিংবা রমজানের কোনো একদিন বরং রমজানের আগেও যদি কেউ আদায় করে থাকে, তাহলে তার ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। আর সদকায়ে ফিতর দিতে হবে ঐ ব্যক্তিকে, যে যাকাত খাওয়ার উপযোগী। যাকে যাকাত দেওয়া যায় না তাকে ফিতরাও দেওয়া যায় না।” (ফতোয়া আলমগীরী, ১ম খণ্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা)।

সদকাতুল ফিতর ‘রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বংশধররা কখনো নিতে পারেন না। অর্থাৎ তাদের সদকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে না। (ফতোয়া আলমগীরী)

সদকাতুল ফিতর কখন আদায় করা সুন্নাত?

ঈদের দিনের পূর্বেও সদকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েয আছে। তবে ঈদগাহে রওয়ানা হওয়ার আগে আদায় করা সুন্নাত। যদি কেউ ঈদের দিন সদকাতুল ফিতর আদায় করতে না পারে তবে অন্য কোন দিন তা আদায় করবে।

আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন।