সঙ্গীত অনুরাগীদের ভালোবাসায় নগর আড্ডা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ০২ ২০১৯, ১১:৫৩

একুশে জার্নাল ডটকম

ঢাকঢোল পেটানো আয়োজন নয়, নয় বর্ণীল আলোকমঞ্চ। ইটপাথরের শহরে মরমী গান ও ধামাইলের আসরে এ যেন একদল মানুষের সুখপাখি খোঁজা। তাঁরা এসেছেন গাইতে, নাচতে। তাঁদের গানে প্রাণভরা সুরের দোলা, রক্তে থইথই নাচ। এখানে না আছে বৈষয়িক অঙ্ক কষা, না আছে বিত্তবৈভবের ঝলক। তাঁদের মন ভর্তি এক মরমী কাতরতা, যেখানে সবকিছুকে তুচ্ছ করে বেজে ওঠে- ‘মাটিরও পিঞ্জিরায় সোনার ময়না রে/ তোমারে পোষিলাম কত আদরে’, কিংবা ‘আমার বন্ধুরে কই পাবো সখি গো/ ও সখি আমারে বলোনা/ আমার বন্ধুবিনে পাগল মনে বুঝাইলে বুঝেনা’। গানগুলো বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের।

মানুষের প্রাণের ভেতর দোলা দেওয়া গান। এ রকম রাধারমণের ‘আমার বন্ধু দয়াময়/ তোমারে দেখিবার মনে লয়’, অথবা পীর মজির উদ্দিনের ‘আমার শ্যাম আইবা ঘরে গো/ প্রাণবন্ধু আসিবা ঘরে’, অথবা মরমী কবি মনফর উদ্দিনের ‘আমার গুইছা গেল সব জ্বালা/ ভাগ্যগুণে উদয় হইলা শ্যাম কালা’।

লোকজ সংস্কৃতির আত্মা খ্যাত মরমী গান ও ধামাইল নৃত্য বসেছিল গতকাল সোমবার কেমুসাস বইমেলামঞ্চে। সিলেট নগরের দরগাহ গেইটে সাহিত্য ও প্রকাশনা সংস্থা ‘নগর’-এর আয়োজনে সঙ্গীত অনুরাগীদের অন্তরের ভালোবাসায় সম্পন্ন হয় এ আয়োজন। অনুষ্ঠানে মরমী কবিদের গান-কীর্তন, দেহতত্ত্ব, ধামাইল ও ভাটিয়ালী পরিবেশন করেন সুনামগঞ্জের গ্রামীণ শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের নাম ছিল নগর আড্ডা। সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট গবেষক আবদুল হামিদ মানিক। এরপর গবেষক সৈয়দ মবনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ করিম চৌধুরী, কেমুসাসের সাবেক সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরী, দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আজিজ আহদম সেলিম, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, গল্পকার সেলিম আউয়াল, কবি মুহিত চৌধুরী, বইমলো কমিটির সদস্যসচিব আবদুস সাদেক লিপন, কবি আবদুল মুকিত অপি, দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক ফায়যুর রাহমান, তরুণ গবেষক কিশোয়ার মোশাররফ, প্রগতিশীল পাঠকসংঘ শৈলীর উপদেষ্টা মাহবুব মুহম্মদ, গল্পকার সাহেদ হুসেন, সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের, হেলাল হামাম, শিল্পী নাওয়াজ মারজান ও সাইয়্যিদ মুজাদ্দিদ। আবৃত্তিশিল্পী শেখ মনিরুজ্জামান কিরন ও ফিদা হাসানের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন শিল্পী সৈয়দ মারুফ আহমদ, সৈয়দ মাসুদ, মাসুম বিল্লাহ, কামাল উদ্দিন, জাকারিয়া আহমদ প্রমুখ।

উদ্বোধনী বক্তব্যে গবেষক আবদুল হামিদ মানিক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আমাদেরকে গতিশীল করলেও কেড়ে নিয়েছে আমাদের আবেগ। আমরা দিন দিন নিষ্প্রাণ ও যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। যান্ত্রিক সভ্যতার এই যুগে নগর আড্ডার মত অনুষ্ঠান নাগরিক জীবনে প্রাণ সঞ্চার করেছে।

তিনি সিলেটের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের আড্ডার অতীতস্মৃতি মন্থন করে বলেন, এ ধরনের আড্ডা অব্যাহত থাকলে মানুষে মানুষে প্রাণের বন্ধন অটুট থাকবে।