শেখ সাহেব হুজুর রহ.; কিছু স্মৃতি কিছু অভিজ্ঞতা 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ৩০ ২০২০, ১৯:৫৫

মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী;

আল্লাহু আকবার! কী সুন্দর ঝলমলে হাস্যজ্বল চেহারা! গোলাকার মুখাবয়ব, মুখভর্তি সফেদ-শুভ্র দাড়ি, আর আলোর ঝিলিক চেহারায় ঔজ্জ্বল্য-জৌলুস অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। কাফনে মোড়ানো পুরো দেহের উন্মুক্ত চেহারায় অপূর্ব নুরানি আলো ফুটে ওঠেছে; যা ইতোপূর্বে তাঁর চেহারায় আমি কখনও দেখিনি! সম্ভবত, আর কেউই দেখেননি! তখন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে বারেবার

প্রলুব্ধ করছিল- আমি যেন অপলক দৃষ্টিতে তাঁর প্রস্ফুটিত নতুন চেহারার দিকে, কতোটা সময় ধরে চেয়ে থাকি। কিন্তু, সে সুযোগ যে ছিল না! আবার ভেতরে ভেতরে একটা প্রচন্ড ঝংকার অনুভব করছিলাম- এ আত্মা, এ মরদেহ জীবিত শেখ সাহেবের (আত্মার) চেয়ে অনেক গুণ মর্যাদাপূর্ণ, শক্তিশালী; এ কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব, নশ্বর ধরার বুকে যেভাবে সম্মানিত ছিলেন, মহান রবের কাছে সেভাবে বা তার থেকেও বেশি সম্মানিত হয়েছেন! বলছি- সিলেট তথা দেশের অন্যতম শীর্ষ আলেম জামেয়া দারুসসুন্নাহ গলমুকাপন, ওসমানীনগর, সিলেট এর মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মাওলানা আব্দুস শহীদ শায়খে গলমুকাপনী রাহিমাহুল্লাহ’র কথা।

তিনি কয়েকবছর যাবৎ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। প্রায় প্রতিবছরই তাঁর হাসপাতাল-ক্লিনিকে যেতে হতো। এ বছর এ গমনাগমনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। মাস চারেক আগেও ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন। উন্নতি হলে বাড়িতে আসেন। ইন্তেকালের দিন দশেক আগে আবারও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চার-ছয়দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আসার খবর শুনে আমরা সকলেই অনেকটা আশান্বিত এবং আনন্দিত হয়েছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, সুযোগ করে দুয়েকের মধ্যেই দেখতে যাবো, কিছুসময় সান্নিধ্যে থাকবো, দুয়া নেবো। কিন্তু একদিনের মাথায় আবার যখন হাসপাতালে নেওয়ার খবর শুনি, তখন থেকেই ভেতরে একটা শংকা সৃষ্টি হয় যায়, বিচলিত হয়ে পড়ি। রাত পেরোনোর আগেই সে শংকা বাস্তবে রূপ নেয়। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে, আমাদের অনেকটা ছায়া শুন্য করে শায়খ ২৪ জুন বুধবার দিবাগত রাত (সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে) পাড়ি জমান মহান মাওলার সান্নিধ্যে।

এ মনীষা একাধারে ছিলেন- সুন্নতে নববি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি, অনুপম আমল-আখলাকের ধারক, বাহক, দুনিয়া বিমুখ, নিরহংকারী, সদালাপী, একনিষ্ঠ দা’য়ি ইলাল্লাহ, হাজার হাজার আলেম ও ছাত্রের উস্তাদ, অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির সজ্জন, বৃহত্তর সিলেটের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাদরাসার কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন ধর্মীয় সভা-সমিতির সভাপতি বা উপদেষ্টা, আধ্যাত্মিক জগতের শক্তিমান রাহবর, আমাদের সুবিশাল বটবৃক্ষ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি। তিনি শেখ সাহেব এবং শায়খে গলমুকাপনী হিসেবে সমাজে সমধিক পরিচিত ছিলেন।

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে গলমুকাপন গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। প্রাথমিক জ্ঞানার্জন গলমুকাপন মাদরাসাতেই। অতঃপর চলে যান গহরপুর জামিয়ায়। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদিস শেষ করে নিজ গ্রামের মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। কালের পরিক্রমায় তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন তাঁকে সিনিয়র শিক্ষক, মুহাদ্দিস, শায়খুল হাদিস এবং মুহতামিম পদে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর সুযোগ্য চাচা ‘আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ’ এর দীর্ঘ দিনের সভাপতি ও সেক্রেটারি এবং দারুসসুন্নাহ গলমুকাপন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও মুহতামিম মুহিউসসুন্নাহ শায়খ ফখরদ্দীন রাহিমাহুল্লাহ’র ইন্তেকালের পর থেকে আমৃত্যু তিনি মুহতামিম ছিলেন। তাঁর প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠাপূর্ণ খেদমত তাঁকে অগ্রজ, সমসাময়িক, পরবর্তী এবং অনুজ আলেম সমাজ ও সর্বসাধারণের কাছে আস্থা, ভালোবাসা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, যার ফলশ্রুতিতে সিলেটের ছোট-বড় অসংখ্য মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটিতে, তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনিত করা হতো।

শিক্ষাজীবনের প্রায় নয়টি বসন্ত কাটিয়েছি শায়খের মাদরাসাতেই। তাঁর সাথে আমার আব্বু ও আমাদের পরিবারের গভীর সম্পর্ক এবং যোগাযোগ ছিল। এ সুবাদেই সেখানে আমার লেখাপড়া। অবশ্য প্রথম দিকে কয়েকবছর মুহিউসসুন্নাহ শায়খ ফখরদ্দীন রাহিমাহুল্লাহ ও তাঁর আদর-মায়া পেয়েছি। মূলত, শায়খ ছিলেন আমার অন্যতম অভিভাবক। শায়খের সাথে আমার বিশেষ স্মৃতি হচ্ছে, আমি একবার দরগাহ মাদরাসায় যেতে তাঁর অনুমতি চাইলে তাতে সফল হয়নি। পরের বছর এ ইচ্ছায় চলে যাই যে, সুযোগ করে হুজুরের সাথে দেখা করে খুশি করে নেবো। এরই মধ্য ১ম সাময়িক পরীক্ষার পরেই আব্বু ইন্তেকাল করেন। হুজুর জানাযার অনেক আগেই বাড়িতে চলে আসেন। আমার আরেক প্রিয় উস্তাদ শায়খ শামসুদ্দিনও রাহিমাহুল্লাহ তখন সাথে ছিলেন। উভয়ে আমাদের সান্ত্বনা দেন, আব্বুর স্মৃতিচারণ করে দুয়া করেন। আমি শায়খকে জানাযা পড়ানোর অনুরোধ করলে তিনি আমাকেই পড়ানোর জন্য নির্দেশ করেন। সেদিন তিনি আমাকে আবারও গলমুকাপন ফিরে আসার পরামর্শ দিয়ে বলেন- ‘তোমার আব্বার ইচ্ছা ছিল তুমি আমাদের মাদরাসা থেকে দাওরা পাশ করবে। এখন তিনি নেই, আর তোমার কোনও ভাইও যেহেতু নেই, তাই তুমি বাড়িতে আসা যাওয়ার বেশি প্রয়োজন হবে। দরগাহ তোমার যাতায়াতের জন্য দূরে হয়ে যায়। গলমুকাপন আর তোমার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ৫/৭ কিলোমিটার। আর আমিতো আছিই। সুতরাং তুমি চলে আসো।’ তাঁর মহব্বত ও প্রীতি সুলভ নির্দেশনা আমি সানন্দে শিরোধার্য হিসেবে মেনে নিই। আলহামদুলিল্লাহ, আমি চলে আসি এবং এখানেই দাওরায়ে হাদিস শেষ করি। পরবর্তীতে মাঝেমধ্যে দুয়া নিতে তাঁর সান্নিধ্যে যেতাম। এছাড়া তিনি আমাদের গ্রামের মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে আসতেন। প্রায়ই আমাদের বাড়িতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করতাম। শায়খ আমার জীবনের উল্লেখযোগ্য আরেকটি বিষয়েও উদ্যোগী হয়েছিলেন। সব মিলিয়ে দীর্ঘ দিন শায়খকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। মাদরাসায় শিক্ষাদানের পাশাপাশি তিনি দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতেন। ছাত্র-জনতা-আলেম সকলকে এ মহৎ কাজের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করতেন। মাহফিলের মওসুমে লম্বা কোর্তা, হরিণ রংয়ের আবায়া আর সবুজ পাগড়ি পরে বৃহত্তর সিলেটের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের ওয়াজ-মাহফিলে তাঁর সরব পদচারণ, মিষ্টি-দরাজ কন্ঠের নসিহত, জিকির, তেলাওয়াত শ্রোতাদের আন্দোলিত করতো, আবেগাপ্লুত করতো।

বয়ানের ময়দানে তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠ ছিলেন। সত্য, ন্যায় ও আহ্লুসসুন্নাহ ওয়ালজামায়াতের আদর্শের ওপর অটল থেকে মাহফিলে মাহফিলে তিনি বিতরণ করেছেন কোরআন-সুন্নাহ’র সঠিক জ্ঞান আর অমিয় আলো। সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন এবং স্পষ্টভাষী ছিলেন, তাই মাহফিলে অতিরিক্ত জৌলুস দেখলে অভিমান করতেন, শাসাতেন। সকল প্রকার কৃত্রিমতামুক্তভাবে সাবলীল এবং স্বল্পভাষায় ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধনমূলক, পরকালীন ভয়, পিতামাতার আনুগত্য, পর্দা, জামাতে নামাজ আদায়, সালামের প্রচার-প্রসার, যাবতীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা ইত্যাদি অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর ওপর আলোচনা করাকে প্রাধান্য দিতেন।

ইসলামের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এবং পূর্ববর্তী মনীষীগণের রাহিমাহুল্লাহ ত্যাগ, ভালোবাসা, আগ্রহ-উৎসাহ বর্ণনা করা ছিল তাঁর নসিহতের বিশেষ বৈশিষ্ট।

দূরে বা কাছে, কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করলেও যেখানেই জামাতের সময় হতো সেখানেই নামাজ আদায় করে নিতেন। কোরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামাজ ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। মাদরাসা বা বাড়িতে অবসর সময়ে কিংবা চলার পথে গাড়িতে বা পায়চারী কালে তিলাওয়াত কিংবা তাসবিহ পাঠে সর্বদা তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। সময়ানুবর্তিতা, পাড়া-পড়শী, আলেম-বুযুর্গ, ছাত্র-শিষ্য, আত্নীয় এবং পরিচিতজনদের হাল-অবস্থার খোঁজ খবর নেওয়া, দেখাসাক্ষাতে আগে সালাম দেওয়া, কুশল বিনিময়, আতিথেয়তাসহ প্রশংসনীয় সকল গুণই তাঁর চরিত্রে বিদ্যমান ছিল।

মাদরাসায় প্রায় প্রতিদিন জোহরের নামাজের পর ছাত্রদের নিয়ে স্বল্প কথায় হলেও, শায়খে মাদানি রাহিমাহুল্লাহ, শায়খে বাঘা রাহিমাহুল্লাহ, শায়খে কৌড়িয়া রাহিমাহুল্লাহ, শায়খে বরুণী রাহিমাহুল্লাহ, শায়খে গহরপুরী রাহিমাহুল্লাহ, শায়খে কাতিয়া রাহিমাহুল্লাহ প্রমুখ বুযুর্গদের স্মরণ করতেন।

বয়ান শেষে বা যে কোনও দুয়া’য় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠসহ বিভিন্নভাবে তাঁকে স্মরণ, নিজ উস্তাদ, পূর্ববর্তী আহলে ইলম, আত্মীয়-অনাত্মীয় নির্বিশেষে উম্মতে মুসলিমার জন্য মাগফিরাত, সকল মানুষের হেদায়াত এবং বায়তুল্লাহ ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা যিয়ারতের জন্য মহান রবের কাছে অনুনয়-বিনয় করে প্রার্থনা করা ছিল যেন তাঁর প্রাকৃতিক স্বভাব এবং নিত্তনৈমিত্তিক কাজ।

তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রেম-ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক এবং আপাদমস্তক সুন্নতের অনুসারী, ওয়ারাছাতে আম্বিয়ার দেদীপ্যমান তারকা। আকাবির ও আসলাফের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। নিজ ছাত্র-শিষ্য, ভক্ত, অনুসারীসহ আপামর মুসলিম সমাজ সে আলোকে গড়ে তুলতে জীবনভর চেষ্টা-সাধনায় ব্রত থেকেছেন, শিক্ষা-দীক্ষা, উৎসাহ-প্রেরণা বিলিয়ে দিয়ে দিয়ে মুসলিম মিল্লাতকে আলোকিত করতে সর্বোচ্চ ত্যাগ ও সাধনা করে গেছেন। সন্দেহ নেই, কৃতিত্ব ও সফলতায় তিনি নিজ আলোতে সমুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি আদর্শ ও চেতনার বাতিঘর হিসেবে যুগ যুগ ধরে জাতির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

রাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রে আমৃত্যু তিনি শায়খুল আরব ওয়াল আজম সায়্যিদ শায়খ হোসাইন আহমদ মদনী রাহিমাহুল্লাহ’র আদর্শকে গ্রহন ও লালন করেছেন। এজন্যে রাজনৈতীক জীবনে তিনি মদনী রাহিমাহুল্লাহ’র সংগঠন জমিয়তের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে শেখ সাহেব রাহিমাহুল্লাহ’র মানেই ছিল জমিয়ত। একসময় সিলেটে- গলমুকাপন মাদরাসাকেই জমিয়তের প্রাণকেন্দ্র মনে করা হতো। ১৯৯৬ সালে তিনি সিলেট-২ (বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ) সংসদীয় আসনে জমিয়তের প্রার্থী হিসেবে খেজুর গাছ দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।

তিনি মদনি রাহিমাহুল্লাহ’র বিশিষ্ট খলিফা, শায়খ লুৎফর রহমান বরুণী রাহিমাহুল্লাহ’র খলিফা ছিলেন। শহর-গ্রাম, পাড়া-মহল্লা এমনকি মফস্বলের অজপাড়াগাঁয় ইসলাহে নফস বা আত্মা পরিশুদ্ধ করার সুচিকিৎসক হিসেবে নিঃস্বার্থ ও আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন।

অনুসরণীয় আলেম, বরেণ্য বুযুর্গ পরিবারের সাথে তাঁর সিংহভাগ আত্মীয়তার সম্পর্ক। তিনি বিবাড়িয়ার শায়খ নূরুল হক ধরমন্ডলী রাহিমাহুল্লাহ’র ভগ্নিপতি ছিলেন। শায়খ লুৎফর রহমান বরুণী রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ আব্দুল করীম কৌড়িয়া রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ আব্দুল মুমিত ঢেউপাশী রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ প্রমুখ আলেমগণ তাঁর নিকটাত্মীয় ছিলেন।

পারিবারিক জীবনে তিনি ৬ কন্যা ও ৪ পুত্রের জনক। ২৫ জুন বৃহস্পতিবার সিলেটের শীর্ষ আলেম-বুযুর্গ, ইসলামী রাজনৈতিক দলসমূহের জাতীয় ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি, আত্মীয়স্বজন, অগণিত ভক্ত-অনুরক্ত, ছাত্র-শিষ্য, এলাকাবাসী, সর্বস্তরের কয়েকহাজার মুসলমানের উপস্থিতিতে দুপুর ২:৩০ ঘটিকায় গলমুকাপন মাদরাসা মাঠে কীর্তিমান এ মহাপুরুষের নামাজে জানাযা তাঁর বড় পুত্র, সিলেট শহরের নয়াসড়ক জামে মসজিদের ইমাম, জনাব হাফিজ মাওলানা মুহাম্মদ এর ইমামতিতে সম্পন্ন করা হয় এবং তাঁর বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। করোনার এ দুঃসময়ে জানাযায় এতো বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি, তাঁর প্রতি মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, ভালোবাসার স্মারক হয়ে হয়ে থাকবে যুগের পর যুগ।

সর্বশেষ গত ঈদুল আযহার দু’চারদিন পর আমার ভাগ্নেসহ আমরা কয়েকজন শায়খের সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। তখন তিনি অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠেছিলেন। সেদিনই প্রথম আমরা তাঁকে শারীরিকভাবে অনেকটা দুর্বল দেখি এবং আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। বেশ কিছু দিন পর গিয়েছিলাম। তাই তাঁর কন্ঠে ভেসে ওঠেছিল- ‘ইমদাদ নিবা, আল্লায় তো তোমারে দেখাইলা।’ ঘন্টাখানেক সময় বসেছি, আমাদের পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ের খোঁজ খবর নেন, সমসাময়িক কিছু বিষয়ে কৌতুহলী হয়ে আআলাপচারিতা করেন। ভাগ্নের পরিচয় দিয়ে বলি, তার মা-বাবার বিয়ের আক্বদ ও দুয়া আপনি সম্পন্ন করেছিলেন। তখন উচ্চ কন্ঠে মা-শা-আল্লাহ বলে ভাগ্নের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে দুয়া দেন। তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করেন এবং প্রবাসে শুনে ভাগ্নের প্রতি আরও কোমল হয়ে তাদের সকলের জন্য কল্যাণ কামনা করেন। এটিই ছিল শায়খের সাথে শেষ সাক্ষাৎ।

মহার রাব্বে কারিম এর দরবারে বরেণ্য এ গুণীজনের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তাঁকে পরম প্রিয় হিসেবে কবুল করুন, অবারিত সুখে রাখুন। আমিন।।