শরীয়তপুরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ০৮ ২০২০, ১২:৩৭

ইয়ামিন কাদের নিলয়, শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি: শরীয়তপুর জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র একে একে বেরিয়ে আসছে। দুর্নীতির সাথে উচ্চাভিলাষ ও অতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আ. হান্নান শেখ ও তার সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌলশীগণ।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ঠিকাদারদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ। গণমাধ্যম কর্মীদের ভয়ে দপ্তর ছেড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ উপ-সহকারী ও সহকারী প্রকৌশলীগণ। মাঝে মধ্যে গোপনে রাতের আঁধারে অফিসে এসে ফাইলপত্র ঘাঁটছে প্রকৌশলীরা।

গণমাধ্যম কর্মীদের সংবাদ পেলে সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যান প্রকৌশলীগনরা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না তাদের।
ঠিকাদারদের লিখিত অভিযোগ সূত্র ও সরেজমিন পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, শরীয়তপুর জেলাধীন জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মানের জন্য মেসার্স এমডি দেলোয়ার হোসেন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়। ১ হাজার ৪০৭ ফুট বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩৬ লক্ষ টাকা। যাহার কার্যাদেশ নম্বর ও তারিখ এমওএইচএফডব্লিউ/এইচইডি/জিডি/ওপি-আরইপি/২০১৮-১৯/টিআই-২৭২৯৪৭/৪৩৫ তারিখ০২-০৪-২০১৯। এর প্যাকেজ নং ডব্লিউপি-৮৬৭৯/এসডিপি-৪(জিওবি)এইচইডি। সেখানে মাত্র ৬৩০ ফুট বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ করে চুড়ান্ত বিল উঠিয়ে নেয় সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা মোসা. জাকিয়া সুলতানা। ঠিকাদারদের অভিযোগের ভিত্তিতে গণমাধ্যম কর্মীরা অনুসন্ধানী কার্যক্রম শুরু করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করে দুর্নীতির তদন্ত করেন।

যাচাই-বাছাই করে সেখানে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন তদন্ত কমিটি। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশলের নির্বাহী পরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা প্রদান করেছেন তদন্ত কমিটি।

মূল ঠিকাদার মেসার্স দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ক্রয় করে কাজ সম্পন্ন করেন আদিল শরীফ নামে অন্য একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আদিল শরীফের সাথে আলাপকালে জানায়, ৬৩০ ফুট কাজ করে সে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আ. হান্নান শেখ ও দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী মোসা. জাকিয়া সুলতানার নির্দেশে সমুদয় বিল তুলেছেন। সেই অর্থ তাদের সাথে বন্টন করেছেন ঠিকাদার আদিল শরীফ।

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষের কর্মকর্তা ডা. মাহামুদুল হাসান বলেন, দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী জাকিয়া সুলতানা চুড়ান্ত বিলের কাগজ নিয়ে আমার কাছে এসে বলে ৬৩০ বর্গফুট দেয়াল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ৬৩০ ফুট দেয়াল বুঝে নিয়ে বিলের কাগজে স্বাক্ষর করি। এখন দেখছি সহকারী প্রকৌশলী জাকিয়া সুলতানা আমাকে ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর নিয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আমি বিষয়টি অবগত করেছি।

নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আ. হান্নান শেখ ও সহকারী প্রকৌশলী জাকিয়া সুলতানা মাদারীপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বসেন। তাদের মুঠো ফোনে শতাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন তুলেনি। গত ১ সেপ্টেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কাউকেই দপ্তরে পাওয়া যায় নাই। দপ্তর থেকে কম্পিউটার অপারেটর মোস্তফা কামাল জানায় নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী ফিল্ডে আছেন আর উপ-সহকারী প্রকৌশলী রানা দাস ঢাকায় আছেন। এরপর ওইদিন বিকাল ৫টায় নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবনে গিয়ে দেখা যায় তার সরকারি গাড়ি চালক গাড়িতে বসে আছেন। তিনি জানায়, ‘স্যার সারাদিন বাসায় ছিলেন, আজ কোথাও যায় নাই’। অথচ তিনি মোবাইল ফোনও রিসিভ করেনি।

এই প্রকল্পের সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোসা. জাকিয়া সুলতানাকেও মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। ওইদিন রাত ৮টার পরে অফিসে ঢুকে ভিতর থেকে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে কোন কথা না বলে ভাড়া করা প্রাইভেট গাড়িতে করে দ্রুত পালিয়ে যায় সে।

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর দেখা যায়, তরিঘরি করে অবশিষ্ট ৭৭৭ ফুট পুরাতন বাউন্ডারি ওয়ালের উপরের অংশে ২ ইট করে বর্ধিত করে খষেপরা ওয়ালে মেরামত করছেন। অথচ আরও দুই বছর পূর্বে সেই বাউন্ডারি ওয়াল নতুন করে নির্মাণ করার বরাদ্দ পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন তারা। এই চক্রটি এমনি ভাবে আরও ১১টি প্রকল্পের সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

বাউন্ডারি ওয়াল মেরামত কাজের সাইডে দেখা যায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী রানা দাসকে। তিনি জানায়, এই প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমি যোগদান করার পূর্বেই এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।