রামাযান আত্মশুদ্ধি ও আত্মতুষ্টির”মাস”, মুমিনদের করণীয় বর্জনীয়

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ২৮ ২০২০, ১৬:৩১

•মুফতি সৈয়দ নাছির উদ্দীন আহমদ•

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,আমি মানব ও জিন জাতি কে শুধু আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। (সুরা যারিয়াত আয়াত: ৫৬)

জেনে রাখা ভালো ইবাদত তিন প্রকার :

১,শারীরিক ইবাদত । যেমন : নামায ও রোযা ।

২,আর্থিক ইবাদত । যেমন : যাকাত ।

৩,শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত । যেমন : হজ ।

ইসলামের মুল ভিত্তিগুলোর অন্যতম একটি ভিত্তিহচ্ছে শারীরিক ইবাদত রোযা । রোযার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক ।

রমযান মাসের রোযা প্রত্যেক মুকাল্লাফ মুসলমানের উপর أداء (আদা) এবং قضاء (কাযা) ফরয ।

মহানআল্লাহ পাক এরশাদ করেন,হে মুমিনগণ যেভাবে পূর্বকার লোকদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছিল,

সেভাবে তোমাদের উপর রমজানের রোযা ফরজ করা হয়েছে। যাতে করে তোমরা মুত্তাকি তথা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।(সুরা বাকারা: ১৮৩)

ফরয রোযা যে মাসে রাখা হয়,তাকে কুরআনের ভাষায় শাহরু রামাযান বলা হয়। সে মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অন্যসব মাস থেকে ব্যতিক্রম । সে মাসটি বারো মাসের মধ্যে শ্রেষ্টতম মাস।শুধু তাইনা,সে মাসের মধ্যে একটি রাত আছে,যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।

যাকে কুরআনের ভাষায় লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর বলা হয়।

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ•وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ• لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ (القدر 1-3)

তাছাড়া মাহে রমজানুল মুবারক এজন্য সব মাসগুলো থেকে উত্তম,এ মাসে মানব জাতির পথ-নির্দেশনার জন্য মহান স্রষ্টা নাযিল করেছেন সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। যার কাছে আল্লাহ পাক এই পবিত্র মহা-গ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল করেছেন,তিনি হলেন,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহা-মানব ও সর্বশেষ নবী ও রাসুল বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) ।

● كماقال الله تعالى : شهر رمضان اللذي انزل فيه القرآن هدي للناس الخ:( البقرة 185)

● حم• وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ• إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ•(الدخان 1-3)

তাই রামযানুল-মুবারক অতিগুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ একটি মাস।এ মাসে মহান আল্লাহ পাক,তার রোযাদার বান্দাদের জন্য অপরিসীম নিয়ামত ও অনুগ্রহ বরাদ্দ করে রেখেছেন।

মুমিনদের তাকওয়া বৃদ্ধির জন্য এ মাসটি হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তাই এ মাসে রোযা রেখে রোযাদারগণ মানবীয় সর্বোত্তম গুণাবলী (তাক্ওয়া) অর্জন করবে ।

এজন্যই তো রোযার উদ্দেশ্য হলো,সব মিথ্যা-অসত্য, অন্যায়-অবিচার-অনাচার, লোভ-লালসা,পাপ ও গর্হিত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে শুধুমাত্র আল্লাহর হুকুম পালনার্থে ত্যাগ,সংযম,আত্মবিশ্লেষণ এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে উন্নত মানবীয় গুণাবলী অর্জন।

এর দ্বারা রোযাদার প্রকৃত ইনসানে কামিল তথা উন্নত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার সাথে সাথে সমাজ এবং এই পৃথিবীকেও সুন্দর,শান্তিপূর্ণ,কল্যাণময় আদর্শ সমাজ রূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। রোযার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য এটাই। কারণ তাকওয়াভিত্তিক জীবন গঠন করতে রমজানুল-মুবারক হল মুসলিম মিল্লাতের জন্য আত্মতুষ্টির ও আত্মশুদ্ধির মাস ।

এ মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিন বান্দা আল্লাহর নৈকট্যতার গভীরতা লাভ করবে এটাই রোযার মুল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ।

সে হিশেবে রমজান আত্মশুদ্ধি ও আত্মতুষ্টির’মাস’ মুমিনদের করণীয় বর্জনীয়? এ নিয়ে অধমের কলমে আজকের এই নিবন্ধ ।

● রোযার সংজ্ঞা :

রোযার আভিধানিক অর্থ : যে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। (بدائع الصنا ئع) গ্রন্থপ্রণেতা বলেন :

الصوم لغة بمعنى الإمساك المطلق من أي شيء كان

পারিভাষিক অর্থ :- নিয়তের সাথে সুবহে সাদেক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকাকে রোযা বলা হয়।আল্লামা জুরজানী(রহ:)বলেন,

هو الإمساك عن الأكل والشرب والجماع من الصبح الى المغرب مع النية-

● রোযার উপকারিতা :

রোযার দ্বারা চরিত্র ও আত্মার মধ্যে শক্তি সৃষ্টি হয় । অন্তর ও মস্তিষ্ক আলোকিত হয় । রোযা মুসলমানকে চিন্তাশীল বুদ্ধিমান ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ করে তুলতে অপরিসীম ভুমিকা পালন করে। রোযার মাধ্যমে বিনয় নম্রতা অর্জিত হয় । ক্ষুধার জ্বালা এবং কষ্ট উপলব্ধি করা যায় । ফলে মানুষের ভেতর দান-সদকা করার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়। রোযাদার ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে গণ্য হয় । এছাড়াও রয়েছে অসীম ও অগণিত আধ্যাত্মিক উপকারিতা ।

যেমন; ফিরিশতারা খাওয়া দাওয়া ও সহবাস থেকে

পুতঃপবিত্র । এমনিভাবে আল্লাহ পাকও পুতঃপবিত্র । কাজেই রোযা রাখার দ্বারা মানুষকে কিছু সময়ের জন্য ফিরিশতাদের গুণে গুণান্বিত হতে দেখা যায় ।

● রোযার গুরুত্ব :

রমযনের রোযা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম।ঈমান, নামায ও যাকাতের পর রোযার স্থান।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে । সূরা বাকারা (১৮৫)

সুতরাং রমযান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ,মুকীম,প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয নেফাসমুক্ত প্রাপ্তবয়স্কা নারীর উপর পূর্ণ রমযান রোযা রাখা ফরয।

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন,রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন-যখন তোমরা (রমযানের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে । (সহীহ বুখারী, হাদীস :১৯০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১০৮০ )

উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস এবং এ বিষয়ক অন্যান্য দলীলের আলোকে প্রমাণিত যে,রমযান মাসের রোযা রাখা ফরয, ইসলামের আবশ্যক বিধানরূপে রোযা পালন করা ও বিশ্বাস করাও ফরয ।

হাদীস শরীফে এসেছে-

مَنْ أَفْطَرَ يَوْمًا مِنْ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ رُخْصَةٍ وَلَا مَرَضٍ، لَمْ يَقْضِ عَنْهُ صَوْمُ الدّهْرِ كُلِّهِ وَإِنْ صَامَهُ.

যে ব্যক্তি কোনো ওযর অথবা অসুস্থতা ব্যতিরেকে রমযানের একটি রোযা পরিত্যাগ করবে,সে যদি ঐ রোযার পরিবর্তে আজীবন রোযা রাখে তবুও ঐ এক রোযার ক্ষতিপূরণ হবে না । (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২৩)

তাছাড়া কোনো শরয়ী ওযর ছাড়া কোন মুসলমান যদি রমযান মাসের একটি রোযাও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে,তাহলে সে বড় পাপী ও জঘন্য অপরাধীরূপে গণ্য হবে ।

দ্বীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ঈমান-ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারী হিসেবে পরিগণিত হবে

ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ত্যাগকারী ও ভঙ্গকারীর জন্য কঠিন শাস্তির কথাও বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত আছে।

● রোযার ফজিলত:

রোযার প্রতিদান আল্লাহ পাক নিজেই দিবেন এবং বিনা হিসাবে দিবেন ।

প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে,যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন।কিন্তু রোযার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ রোযার বিষয়ে আছে আল্লাহর অনন্য এক ঘোষণা।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সা:) ইরশাদ করেছেন,

كل عمل ابن آدم يضاعف الحسنة بعشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف، قال الله تعالى : الا الصوم فإنه لى وانا أجزى به يدع شهوته وطعامه من أجلى.

মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত।আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,কিন্তু রোযা আলাদা।কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।-(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১)

অন্য বর্ণনায় আছে-

عن أبى هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : قال الله : يترك طعامه وشرابه وشهوته من أجلى، الصيام لى وانا اجزى به، والحسنة بعشر امثالها.

হযরত আবু হুরায়রা (রা.)বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন,আল্লাহ পাক বলেন,বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে,রোযা আমার জন্যই, আমি নিজেই তার পুরস্কার দিব আর (অন্যান্য) নেক আমলের বিনিময় হচ্ছে তার দশগুণ ।(সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৯৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৯৯৯; মুয়াত্তা মালেক ১/৩১০)

রোযা বিষয়ে-অন্য বর্ণনায়-আললাহ তাআলা বলেন,

প্রত্যেক ইবাদতই ইবাদতকারী ব্যক্তির জন্য, পক্ষান্তরে রোযা আমার জন্য । আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। (সহীহ বুখারী হাদীস-১৯০৪)

রোযার এত বড় ফযীলতের কারণ সমুহের একটি হতে পারে যে, রোযা ধৈর্য্যের ফলস্বরূপ ।

আর ধৈর্য্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহর সুসংবাদ হল-

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ

ধৈর্য্যধারণকারীগণই অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে।(সূরা যুমার : ৩৯)

রোযাদারগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা দিয়ে।

হযরত সাহল ইবনে সা’দ(রা:) থেকে বর্ণিত রাসুল(সা:) ইরশাদ করেছেন,

عن سهل بن سعد رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم :- إن فى الجنة بابا يقال له الريَّان يدخل منه الصائمون يوم القيامة، لا يدخل منه أحد غيرهم، يقال : اين الصائمون فيقومون، لا يدخل منه أحد غيرهم، فاذا دخلوا اغلق، فلم يدخل منه احد(باب الريان للصائمين)

জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান । কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোযাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে । অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা হবে- কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোযাদারগণ? তখন তারা উঠে দাড়াবে । তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর রোযাদারগণ যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না ।(ফয়জুল বারী শরহে সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫২; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২৮১৮)

হযরত আবু হুরায়রা রা.হতে বর্ণিত,রাসূল(সা:) ইরশাদ করেছেন-

من صام رمضان ايمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه،

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসের রোযা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।(সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৮, ২০১৪; সহীহ মুসলিম ৭৬০(১৬৫); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭১৭০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৬৮)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত,রাসুল (সা:) ইরশাদ করেছেন-

রোযা ও কুরআন উভয় কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।রোযা বলবে,হে রব! আমি তাকে খাদ্য এবং যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি ।

(অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।রাসুল(সা:) বলেন,অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে ।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৬২৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ২০৮০; বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস : ১৯৯৪)

● মাহে রমাযানে রোযাদারের জন্য করণীয় আমল হচ্ছে।

☆ তারাবীহ নামায গুরুত্ব সহকারে আদায় করা ।

☆ বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা ।

যাদের কুরআন তিলাওয়াত সহীহ নয়,তাদের জন্য কমপক্ষে ফরজ নামাযে যেটুকু আয়াত পড়া জরুরী সে পরিমাণ সুরা বা আয়াত সহীহ করা ফরজ ।

☆ মাহে রমাযানে গুরুত্বপূর্ণ একটি এবাদত হচ্ছে শেষ দশকে এতাকাফ করা । এনিয়ে বিশেষ একটি পর্ব আপনাদের সামনে পেশ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ ।

☆ পুরুষেরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামাতে আদায় করা ।

☆ নারীরা নিজ গৃহে পাচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।

☆ তাহাজ্জুদ নামাজ যথা সময়ে প্রতিদিন পড়া ।

☆ নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত দিনে বা রাতে বেশি করে নফল নামাজ আদায় করা ।

☆ তাসবীহ তাহলিল জিকির আজকার বেশি করে পাঠ করা ।

☆ তাওবা ইস্তেগফার বেশি করে করা ।

☆ শরীয়তসম্মত ওযরবশত পানাহার করতে হলে প্রকাশ্যে না করা ।

এব্যাপারে চিন্তা করার বিষয় এই যে, অনেক ক্ষেত্রে শরীয়তে ‘তাশাববুহ বিস সা-ইমীন রোযাদারগণের সাদৃশ্য গ্রহণ এর বিধান আছে ।

এর তাৎপর্য রমাযানের মর্যাদা রক্ষা করা । যেমন মুসাফিরের জন্য রোযা না-রাখার অবকাশ থাকলেও কোনো মুসাফির যদি দিনের বেলা মুকীম হয়ে যায় তাহলে তার কর্তব্য,অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা । এতে কি রোযা হবে? রোযা হবে না, কিন্তু রোযার মর্যাদা রক্ষা হবে ।

তেমনি হায়েয বা নিফাসের অবস্থায় মহিলাগণ রোযা রাখতে পারেন না, কিন্তু কোনো মহিলা যদি দিনের বেলায় হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্র হন তাহলে তার কর্তব্য, বাকী দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা ।

যদিও হায়েয বা নিফাসগ্রস্ত অবস্থায় তার পানাহারের অনুমতি আছে । তবে সেক্ষেত্রেও নিয়ম হল গোপনে পানাহার করা । একে ‘তাশাববুহ বিস সা-ইম’ বলে ।অর্থাৎ রোযাদারের সাদৃশ্য অবলম্বন। এ বিধান রমযানের মর্যাদার জন্যই দেওয়া হয়েছে।

● মাহে রমাযানে রোযাদারের বর্জনীয় কাজ

☆ যেসব গুনাহের কাজ প্রকাশ্যে ও ব্যাপকভাবে করা হয় সেগুলো থেকে নিজেও বিরত থাকা, অন্যকেও বিরত রাখা । যেমন:- গান-বাজনা, প্রাণীর ছবি ও প্রাণীমূর্তির প্রদর্শনী, বেপর্দা চলাফেরা ইত্যাদি।

☆সর্বাবস্থায় তো মিথ্যা ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকা, তবে বিশেষ করে রমযান মাসে।

☆সর্বাবস্থায় তো গীবত শিকায়ত থেকে বিরত থাকা তবে বিশেষ করে রমজান মাসে ।

☆ মারামারি হানাহানি থেকে বিরত থাকা ।

☆ দিনের বেলা হোটেল-রেস্তোরাঁয় পানাহার বন্ধ রাখা।

☆ রোযা রেখে বাইরে ঘোরাঘুরি, আড্ডা, গল্প-গুজব ও অন্যান্য কর্মব্যস্ততা থেকে বিরত থাকা ।এরকম আরো বিষয় আছে ।

সর্বশেষ যে বিষয়টি বলে নিবন্ধটির ইতি আনছি তা হচ্ছে,বর্তমান সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃত কোভিড ১৯ মহামারী পরিস্থিতি বিরাজ করছে । তাই আসুুুন সবাই মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে এই মহামারী থেকে মুক্তির প্রার্থনা করি । আর আমরা যারা ব্যবসায়ী তারা যেন দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে এ মাসকে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জন্য কষ্টের মাসে পরিণত না করি ।

অন্তত মুসলিম ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের তো কিছুটা ‘ত্যাগ’ স্বীকার করে হলেও এদিকে নজর দেয়া অতি জরুরি।

আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে সিয়াম সাধনা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার তাওফিক দান করুন । আমীন —