রামাদ্বানুল কারীম: বিজয়ের এক মহাসড়ক

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ২৭ ২০১৮, ১৪:০৩

রামাদ্বান চন্দ্র মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এ মাসে আল্লাহ তা’আলা মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারীম নাযিল করেছেন। এ বিশেষ কারণে রামাদ্বানুল কারীমের গুরুত্ব ও মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। কুরআনে বলা হয়েছে – ‘রামাদ্বান হলো সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে। আর এ (কুরআন হচ্ছে) মানব জাতির জন্য হিদায়াত ও সুস্পষ্ট পথনির্দেশক এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য নির্ণয়কারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন অবশ্যই রোযা রাখবে। (সূরা বাকারা: ১৮৫)

রামাদ্বান মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান নর-নারীর ওপর রোযা রাখা ফরয। ইসলামের পাচ ভিত্তির মধ্যে এ রোযা হচ্ছে একটি।

যদি কেউ এটিকে অস্বীকার করে তাহলে তার ঈমান থাকবে না। কেউ যদি সারা জীবন পাচ ওয়াক্ত নিয়মিত নামায পড়ে আর কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই রামাদ্বানের রোযা না রাখে, তাহলে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। মৃত্যুর পর যেমন নামাযের হিসাব দিতে হবে, ঠিক তেমনি রোযারও হিসাব দিতে হবে। কারণ, নামাযের মতো রোযা আল্লাহ আমাদের ওপর ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সূরা বাকারা: ১৮৩)

রোযা কেন আমাদের ওপর আসলো এমন প্রশ্নের উত্তরে বলতে হবে, মানব জাতির কল্যাণেই রোযা এসেছে। আর এ কল্যাণ শুধুমাত্র দুনিয়ার নয়, আখিরাতেরও। রোযা তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহ ভীরু হতে সহায়তা করে। শয়তানি শক্তি ও কু-প্রবৃত্তির ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। মানব দেহের যে শিরা-উপশিরা দিয়ে শয়তান চলাচল করে রোযা রাখার ফলে সেগুলো নিস্তেজ ও কর্মহীন হয়ে পড়ে। বান্দাহ’র প্রতি আল্লাহর সার্বক্ষণিক নজরদারির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এজন্য রোযাদার লোকচক্ষুর আড়ালে গোপনেও কোন কিছু খায় না। রোযা ক্ষুধার অনুভূতিতে অভাবী ও দরিদ্র মানুষের দুরবস্থা অনুধাবন করতে শেখায়। অসহায় বঞ্চিত ও অনাহারী মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলে। রোযা মানুষকে নিয়ম শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সাহায্য করে। ঈমান দৃঢ় করে।

মানসিক উপকারিতার পাশাপাশি রোযা রাখার মধ্যে দৈহিক উপকারিতাও রয়েছে। যেমন, রোযা মানবদেহে নতুন সূক্ষ্ম কোষ (Cell) গঠন করে থাকে। রোযা পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দিয়ে থাকে। ফলে এগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং তা আবার সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। রোযা মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমিয়ে এনে অনেক রোগ থেকে হেফাযত করে। অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে ডায়াবেটিস ও গ্যাষ্ট্রিক রোগ নিরাময়ে রোযা হলো এক প্রকার চিকিৎসা।

মানসিক ও দৈহিক উপকারিতার মধ্যেই রোযার ভুমিকা শেষ নয়। এ রোযা পরকালীন মুক্তি অর্জনে বিশাল ভুমিকা রাখে। আমাদের মহানবী সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনলো, সালাত কায়েম করলো, যাকাত আদায় করলো, রামাদ্বান মাসে সিয়াম পালন করলো, তার জন্য আল্লাহর ওপর সে বান্দাহ’র অধিকার হলো তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া।’ (সহীহ বুখারী : হাদীস -২৭৯০)

মহানবী সা. আরো বলেছেন, ‘জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে- যার নাম রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন শুধু রোযা পালনকারীরা ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোযা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। তারা প্রবেশ করার পর ঐ দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ আর সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে ঢুকতে পারবে না।’ (সহীহ বুখারী: হাদীস -১৮৯৬, সহীহ মুসলিম: হাদীস -১১৫২)

রামাদ্বানুল কারীমের সাথে বাকি এগারটি মাসের তুলনা হয় না। এ মাসের প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত, প্রতিটি মুহুর্ত আমাদের অন্যরকম কাটে। আর রামাদ্বান আসার আগ থেকেই আমরা প্রস্তুত থাকি এমন একটি পরিবেশের, যে পরিবেশ আমাদেরকে মুক্তির পথে, শান্তির পথে, আল্লাহর পথে চলতে উৎসাহিত করে। প্রেরণা যোগায়। এজন্যেই তো আমরা মহিমান্বিত এ মাসকে বরণ করে নিতে একটুও পিছপা হই না।

আমরা দেখতে পাই, প্রথম রামাদ্বান থেকেই ক্বারী সাহেবদের তত্বাবধানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় মাসব্যাপী কুরআন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়। ছোটবড় অনেকেই বিশুদ্ধভাবে কুরআন শিখতে এসব কেন্দ্রে ভর্তি হন। যারা কুরআন পড়তে জানেন তারা নিজের ঘরে, মসজিদে, খানকায় বসে কুরআনের তেলাওয়াত করেন। কেউ কেউ একাধিকবার কুরআনের খতম করেন। অনেকেই শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়েন। ফরয নামাযের পাশাপাশি নফল নামাযও পড়েন। অবসর সময় তাসবীহ পড়েন। আল্লাহর পথে লিল্লাহ, সদকাহ করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। প্রত্যেকেই চেষ্টা করেন রাতের তারাবীহসহ পাঁচ ওয়াক্তই জামাতের সাথে নামায আদায় করতে। এজন্য প্রতিটি মসজিদে মানুষের প্রচুর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। মহিমান্বিত এ মাসে ইচ্ছে করে অর্থাৎ জেনে বুঝে কেউ কোন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে না। সবাই চেষ্টা করে কোন ধরণের পাপ কাজ ছাড়াই রামাদ্বান মাসটি অতিবাহিত করতে।

রামাদ্বানুল কারীমে বড়দের পাশাপাশি ছোটদের তৎপরতাও কম থাকে না। বড়দের সাথে তাল মিলিয়ে তারা সাহরী ও ইফতারে অংশ নেয়। হাফিজ সাহেবের পেছনে দাঁড়িয়ে রাতের তারাবীহ এর লম্বা নামায পড়তে তাদের একটুও বিরক্তি আসে না। তাদের কেউ শুরু থেকে শেষপর্যন্ত রোযা রাখে। আবার কেউ কেউ এক-দুই দিন বিরতি দিয়েও রোযা রাখে। বয়সে ছোট হওয়ার কারণে অনেক মা বাবা সন্তানদের দিনের মধ্যখানে রোযা ভাঙ্গার তাগিদ দেন। কিন্তু তারা রোযা ভাঙ্গতে রাজী হয় না। মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে ছোট্ট বয়সেও তাদের মাঝে একধরনের ঈমানী শক্তি কাজ করে।

এককথায়, রামাদ্বানুল কারীমে ছোটবড় সবাই ধর্ম-কর্ম ও নেক আমলের দিকে অধিক তৎপর হয়ে ওঠে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নেশায় মেতে ওঠে। আর আল্লাহ তা’আলা রামাদ্বানুল কারীমে সৎ কর্মের প্রতিদানও বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আমাদের মহানবী সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রামাদ্বান মাসে কোন একটি নফল ইবাদত করলো, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরয আদায় করলো। আর রামাদ্বানে যে ব্যক্তি একটি ফ