‘রাতের ভোট’ বলতেই হট্টগোল, সিইসির সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি তেড়ে এলেন আ’লীগ নেতারা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ৩০ ২০২২, ০০:৫৪

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের মতবিনিময় সভায় ব্যাপক হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকির অভিযোগ এনেছেন।

রোববার (২৯শে মে) দুপুর ১২টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতবিনিময় সভায় হট্টগোলের ঘটনাটি ঘটে।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বক্তব্য দেওয়ার সময় রাতের ভোট প্রসঙ্গে আলোচনা করতেই আওয়ামী লীগের কমিশনার প্রার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উঠেন। বাঁধা দিতে থাকেন তাঁর বক্তব্যে। তিনি বলেছিলেন-‘দল ত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছি। ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ভোটের বাক্স ভর্তি করে রাখার প্রসঙ্গ উল্লেখ করলে এ হট্টগোলের সূচনা হয়। তিনি বলেছিলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো রাতের বেলায় ভোট চাই না।’

২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদুর রহমান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সরকার মাহমুদ জাভেদ, মুরাদসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর চিৎকার করে নিজাম উদ্দিনের বক্তব্যের বাঁধা দিতে থাকেতন। তারের হট্টগোল ও চেঁচামেচিতে পুরো অনুষ্ঠানে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তারা বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজম উদ্দিনকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেন।

পরে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খোকনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মাইক হাতে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। জেলা প্রশাসক বলেন, আগের নির্বাচনে কী হয়েছিল, সেটি নিয়ে বলবেন না। এই নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল তখন মঞ্চে বসে ছিলেন।

প্রধান অতিথি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের উপস্থিতিতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা শুরু হয়।

সভায় প্রার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ ও প্রত্যাশার কথা শোনেন তিনি। সভায় মেয়র প্রার্থীরা একে একে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দল ত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছি। ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা আছে। ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত। আমরা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো রাতের বেলায় ভোট চাই না।’

হট্টগোলের পর নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনের সময় যেন গায়েবি মামলা ও পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করা হয়। আগামী পহেলা জুন থেকে দুজন নির্বাচন কমিশনারকে কুমিল্লায় রাখেন। তাঁরা নির্বাচন মনিটরিং করুক। আমরা চাই, নতুন কমিশন যেন ভোটারদের আস্থা ফিরে পায়। নিজেদের ক্যাম্পে নিজেরা আগুন লাগিয়ে যেন মামলা দিয়ে হয়রানি করা না হয়।’

সভায় চার মেয়র প্রার্থী, কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে তাঁদের অভিযোগ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন। সভায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. মনিরুল হক ওরফে সাক্কু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও সুন্দর পরিবেশ চেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রচারণার দুই দিন পেরিয়ে গেছে। এখনই কিছু বলতে চাই না।’ আরেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল হাসান নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম ইভিএম ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হকের পক্ষে বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খোকন। তিনি নির্বাচনের দিন ভোটারদের যাতায়াতের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করার কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা (আওয়ামী লীগ) ওয়াদা করছি, কারও মাইক ও পোস্টারে হাত দেওয়া হবে না। কিন্তু ওরা (বিএনপিপন্থী দুই প্রার্থী) গন্ডগোল করে আমাদের ওপর দায় চাপাতে পারে। নির্বাচনে টাকার বাণিজ্য আছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা আছেন। এগুলোর ওপর নজরদারি থাকতে হবে।’

সভায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ করেন, তাঁর ওয়ার্ডে কোতোয়ালি মডেল থানার উজ্জ্বল নামের এক উপপরিদর্শক (এসআই) তাঁর সমর্থকদের তালিকা করছেন, হয়রানি করছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সহযোগিতা করছেন। একই অভিযোগ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোশারফ হোসেনেরও। সেখানেও পুলিশ সমর্থকদের তালিকা করে মামলা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে টাকা দিয়ে ভোট কেনা হচ্ছে।’

২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী নাহিদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ১০০ থেকে ১৫০ জন সমর্থক নিয়ে গণসংযোগ করছেন। আমাদের হুমকি দিচ্ছেন।’