রমজান জাকাত প্রদানের উপযুক্ত সময়

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ০৪ ২০২০, ০৪:৪৩

এহসান বিন মুজাহির:

পবিত্র রমজানের প্রথম দশক রহমতের দশম দিন আজ। রমজান জাকাত প্রদানের উপযুক্ত সময়। জাকাত ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ। নামাজ, রোজার মতই ফরজ। নিসাব পরিমাণ মালের মালিকের ওপরই জাকাত ফরজ। জাকাত কারো প্রতি করুণা প্রদর্শন নয়; বরং গরিব দুঃখীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার। শরীয়ত নির্ধারতি নিয়মে যথাযথভাবে জাকাত আদায় করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর ফরজ দায়িত্ব। আভিধানিক অর্থে যাকাতের অর্থ হল, বৃদ্ধি করা, পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা ইত্যাদি। যাকাত প্রদানের মাধমে সম্পদ পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হয় এবং মালের মধ্যে বরকত বৃদ্ধি পায়। শরয়ী পরিভাষায়, জীবন যাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজন মেটানোর পর নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর কাল সঞ্চিত থাকলে, শরীয়তের নির্ধারিত সম্পদের একাংশ শরীয়ত নির্ধারিত খাতে কোন প্রকার বিনিময় ছাড়া মালিকানা হস্তান্তর করাকে যাকাত বলে।

ইসলামে জাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআন ও হাদিসে জাকাত প্রদানের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে যারা অবনত হয়’। সূরা বাকারা: ৪৩)।

আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘তাদের ধনমালে রয়েছে সুনির্দিষ্ট অধিকার। প্রার্থী ও বঞ্চিত মানুষের জন্য’। (সূরা মাআরিজ:২৪)।

আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রাসুলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও’। (সূরা নূর: ৫৬)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো এরশাদ করেছেন, ‘আর যারা সোনা ও রুপা সঞ্চিত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ প্রদান করুন। সেদিন ঐসব (সোনা-রুপা) দোযখের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তদ্বারা তাদের ললাটে, পার্শ্বদেশ এবং তাদের পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। এটা তোমরা নিজেদের জন্য যা সঞ্চয় করেছিলে তার প্রতিফল। সুতরাং যা তোমরা সঞ্চিত করেছিলে তার স্বাদ গ্রহণ কর’। (সূরা তাওবাহ: ৩৪-৩৫)।

অনুরুপভাবে আল্লাহ পাক আরো এরশাদ করেন, ‘তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নিয়ে এসেছে? তারা বলবে আমরা নামায পড়তাম না এবং অভাবগ্রস্থকে আহার্য (যাকাত) দিতাম ন’। (সূরা মুদাসসির : ৪২-৪৪)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লা (সা.) বলেছেন, ‘যেসব স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক তা হতে তার হক (যাকাত) আদায় করে না,যখন কিয়ামতের দিন আসবে নিশ্চয়ই তার জন্য অনেকগুলো আগুনের পাত তৈরী করা হবে এবং সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে। আর তা দ্বারা তার পাঁজরে, ললাটে এবং পিঠে দাগ দেয়া হবে। যখনই পৃথক করা হবে তখনই পুনরায় তা শুরু করা হবে। তার এ শাস্তি অব্যাহত থাকবে সেদিন পর্যন্ত যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। যতক্ষণ না বান্দাদের সকলের বিচার ফয়সালা শেষ করা হবে এবং প্রত্যেক নিজ নিজ পথ ধরবে, হয় বেহেশতের দিকে না হয় দোজখের দিকে’। (মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৮১)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) হযরত মুআজ (রা.) কে গর্ভনর হিসেবে ইয়েমেনে প্রেরণ করলেন। এ সময় রাসুল (সা.) তাকে বললেন, তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছ যারা আহলে কিতাব। প্রথমত তুমি তাদেরকে এ কথার সাক্ষ্য দিতে আহব্বান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ তথা উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। অত:পর তারা যদি এ কথার আনুগত্য করে তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তায়ালা দিবারাতে তাদের উপর পাঁচওয়াক্ত নামায ফরজ করে দিয়েছেন। তারা যদি এ কথার আনুগত্য করে তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর যাকাত প্রদান করে দিয়েছেন, যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করা হবে’। (মুসলিম :১৬৮০)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যাকে আল্লাহ তায়ালা মালসম্পদ দান করেছেন, আর সে তার যাকাত আদায় করেনি কিয়ামতের দিন তার মালকে তার জন্যে একটি টাকপড়া সাপ স্বরুপ করা হবে, যার চক্ষুর ওপর দুটি কালো দাগ থাকবে। ওই সাপকে কিয়ামতের দিন তার গলার বেড়ি স্বরুপ করা হবে। সাপটি আপন মুখের দুই দিক দ্বারা তাকে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে আমি তোমার মাল,আমি তোমার সংরক্ষিত অর্থ’। (মিশকাত : ৭৩১) । হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদের জাকাত আদায় করবে না, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার গলায় একটি বিশাল সাপ ঝুলিয়ে দিবেন’। (তিরমিজি : ১৯৩২)।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে যথাযথভাবে জাকাত আদায়ের তাওফিক দান করিন।

লেখক : আলেম সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক।