রমজানে তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুবর্ণ সুযোগ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ২৭ ২০২০, ১৪:০৩

•এহসান বিন মুজাহির•

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজানুল মোবারকের রহমতের প্রথম দশকের তৃতীয় দিন আজ। রমজান মাসটি ইবাদতের উর্বর মৌসুম। ইবাদতের এ উর্বর সময়কে বান্দা যথায ঐকান্তিকতার সাথে কাজে লাগাতে পারলে সামান্য সাধনা, ক্ষুদ্র পরিশীলনী ও অনুশীলনী দ্বারা প্রশান্তির বারিধারায় স্নাত হয়ে হাসিল করতে পারবে মহান আল্লাহর মহাসন্তুষ্টি।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং শয়তানদেরকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়’। (বুখারি, হাদিস নং. ১৮৯৮)।

হযরত কা’ব ইবনে উজরা (রা.) হতে র্বর্ণত, তিনি বলেন- একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে বললেন, তোমরা মিম্বরের নিকট সমবেত হও। আমরা সকলেই তথায় উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম সিড়িঁতে পা রাখলেন,তখন বললেন, আমীন, যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন, যখন তিনি তৃতীয় সিঁিড়তে পা রাখলেন বললেন, আমীন। হযরত কা’ব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, যখন তিনি (মিম্বর থেকে) অবতরণ করলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আজ (মিম্বরে উঠার সময়) আমরা আপনাকে এমন কিছু কথা বলতে শুনেছি, যা ইতিপূর্বে কখনো শুনিনি। উত্তরে তিনি বললেন, জিবরাইল (আ.) আমার নিকট আগমন করেছিলেন, যখন আমি প্রথম সিড়িঁতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে রমজান মাস পেল, তবুও তার গুনাহ মাফ হলো না। আমি বললাম, আমীন। যখন দ্বিতীয় সিড়িঁতে পা রাখলাম তখন বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যার নিকট আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করলো না। আমি বললাম আমীন। যখন তৃতীয় সিড়িঁতে পা রাখলাম, তখন বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেল অথচ তারা উভয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না। অর্থাৎ তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতবাসী করতে পারলো না। আমি বললাম, আমীন। (মুসলিম হাদিস নং : ২৫৫১)।

হযরত আবু হুরয়রা (রা.) বলেন, রমজান মাস লাভকারী ব্যক্তি যে উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম (রোজা, তারাবী ও অন্যান্য আমল) পালন করে, তার প্রথম পুরস্কার এই যে, সে রমজান শেষে গুনাহ থেকে ঐ দিনের মতো পবিত্র হয় যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (মুসলিম, হাদীস-৮৯৬৬)।

পবিত্র রমজান মাসকে বলা হয় ইবাদতের বসন্তকাল। রমজান মাসে সিয়াম সাধনা, তারাবিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব আমলের পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে আমলের মাত্রা আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। নেকির খাতায় পুুণ্য জমা হতে থাকে। রমজানে যে কেউ ইচ্ছে করলেই তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে পারেন। সেহরির সময় পানাহারের জন্য ঘুম থেকে সময়মতো উঠে খানাপিনা শেষ করে বাকি সময়টুকু তাহাজ্জুদে কাটানো যেতে পারে। ইচ্ছা করলেই তাহাজ্জুদের নামাজের আমলটা সহজে করা যায়। একটু আগেভাগে উঠে দু-চার রাকাত নামাজ পড়া তেমন কষ্টের কিছু নয়, কেবলই ইচ্ছার ব্যাপার। মহিলারাও রান্নার ফাঁকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নিতে পারেন। তাহলে তাহাজ্জুদ পড়ার একটি অভ্যাসও গড়ে উঠবে। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে এ সময় কোরআনে কারিমের তিলাওয়াত করা যেতে পারে। ইস্তেগফার হচ্ছে সাধারণভাবে যে কোনো সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহর কাছে আমরা দিন শেষে অথবা গোনাহ হয়ে যাওয়া মাত্রই ইস্তেগফার করতে পারি। দোয়া ও মোনাজাত হচ্ছে মুমিনের প্রধান হাতিয়ার।

রমজানে যে আমলগুলো বেশি বেশি করা দরকার তন্মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, তাওবাহ-ইস্তেগফার, দোয়া-দরুদ অন্যতম। রমজানে কিয়ামুল লাইল করার কথা আছে। কিয়ামুল লাইল শব্দের অর্থ রাতের নামাজ। তারাবির নামাজ যেমন কিয়ামুল লাইলের মধ্যে পড়ে, তেমনি শেষ রাতে তাহাজ্জুদও সালাতুল লাইলের অন্তর্ভুক্ত। রমজানে যেহেতু প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব সত্তর গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাই এ মাসে যথাসাধ্য বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক।

হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে। (আহমাদ : ৬৬২৬)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, জিব্রাইল (আ.) রমজানে প্রতিরাতে রসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রসুল (সা.) তাঁকে কোরআন শোনাতেন, (বুখারি : ১৯০২)।

তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। মাহে রমজানে এশার নামাজের পর দুই দুই রাকাত করে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা রসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর আমল, যা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হাদিসে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে কিয়ামুল লাইল (সালাতুত তারাবি) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি : হাদিস ২০০৯)।

রমজান আমাদেরকে আল্লাহর রহমত লাভের সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। এই দশকে আমরা বেশি বেশি করে ইবাদত-বন্দেগী, কুরআন তেলাওয়াত, দান সদকা, তওবা, ইস্তেগফার ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পবিত্র এই মাসের যথাযথ হক আদায় করে রোজা, তারাবিহসহ অন্যান্য নফল ইবাদতে আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার।