ময়মনসিংহের তাকমীল পরীক্ষার ফলাফল ও পর্যালোচনা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ১১ ২০১৮, ০৭:৩৮

ইলিয়াস সারোয়ার: সম্মিলিত কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলইয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে অনুষ্ঠিত দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে কয়েক দিন হলো । প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রায় সকলেই দেখেছেন নিজ নিজ মাদরাসার ফলাফল। হয়ত অনেকেই ফলাফল দেখে তৃপ্তও হয়েছেন। কিন্তু আসলেই কি ফলাফল সন্তোষজনক হয়েছে?

ওয়েবসাইট থেকে নামানো ১৮৪৬পৃষ্ঠার পিডিএফ ফাইলে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, পুরো ময়মনসিংহ জেলায় দাওরায়ে হাদীস মাদরাসা ৭৮টি ৷ তন্মধ্যে পুরুষ ৩১ ও মহিলা ৪৭টি ৷ সদর উপজেলায় ২৯টি মাদরাসার ১৬টি পুরুষ আর ১৩টি মহিলা ৷ অন্যদিকে বাকি ১১ উপজেলায় ৪৯টি মাদরাসার ১৫টি পুরুষ আর ৩৪টি মহিলা দাওরায়ে হাদীস মাদরাসা ৷

পুরো জেলায় পরীক্ষার্থী ছিলেন ৯৩০ জন, তন্মধ্যে ৪৯ জন অনুপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষা স্থগিত করা হয় ২০ জনের ৷ অবাক করা ব্যাপার হলো, কোন কোন মাদরাসা থেকে ১ জন কিংবা ২ থেকে ৩ জন করেও অংশ নিয়েছেন এ পরীক্ষায়।

পুরো জেলায় মুমতায মাত্র ৫টি। মেধাতালিকায় নেই একজনও ৷ (আবার ৫টি মুমতাযও শুধু সদর উপজেলার ৷ অন্য কোন উপজেলায় একটিও মুমতায নেই!) এছাড়া জায়্যিদ জিদ্দান ৯৩, জায়্যিদ ২৩৭, মাকবুল ২৪৫, রাসিব ২৫৯ । জেলার গড় পাশের হার ৬৩.৯৭%।

মাদরাসাওয়ারি ফলাফল দেখলে তো আরও হতাশ হতে হয়। এমনও মাদরাসা আছে যার পাশের হার মাত্র ১১%। পরীক্ষার্থী ৯জনের মধ্যে ৮জনই রাসিব।

এমন হতাশাজনক ফলাফলের কারণ কী?
এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সুনামগঞ্জের একটি স্বনামখ্যাত জামিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুর রহমান কফিল ৷ কারণ হিসেবে তিনি ৫টি কারণ নির্ণয় করেছেন ৷ যা নিম্নরূপ-
১. ছাত্রের মানের চেয়ে পরিমাণকে প্রাধান্য দেয়া।
২. দাওরার ছাত্রের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মিশকাতে অকৃতকার্য ছাত্রদেরও তারাক্কি দেয়া।
৩. দাওরার ছাত্রকে সকল নিয়মকানুনের ঊর্ধ্বে রেখে স্বাধীনমতো চলতে দেয়া।
৪. মূল কিতাব থেকে দূরে সরে নোট-গাইড নির্ভর হয়ে যাওয়া।
৫. সর্বোপরি বুনিয়াদি ও ইস্তে’দাদী মেহনত তাদের পেছনে না করা।

তাহলে করণীয় কী?
করণীয় হলো-
১. নিচের জামাত থেকেই ছাত্রদের পেছনে ইস্তে’দাদ তৈরির মেহনত করা।
২. আরবী ভাষা ও নাহু-সরফের প্রতি খুবই গুরুত্ব দেয়া। এই তিনটির কোনো একটিতে যেনো দুর্বলতা না থাকে, সেজন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা।
৩. যারা কাফিয়া-মুখতাসার পড়েছে অথচ এখনও নাহু-সরফ ও আরবী ভাষার দুর্বলতা দূর হয়নি, তাদের পেছনে আলাদাভাবে মেহনত করা। প্রয়োজনে মানসম্মত কোনো মাদরাসায় ১বছর মেয়াদি কোর্সে উস্তাদের তত্ত্বাবধানে প্রেরণ করা।
৪. নোট-গাইড সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে মূল কিতাবের প্রতি ছাত্রদের মনোযোগী করা।
৫. সকল ছাত্রকে ছাত্র মনে করে সমানভাবে লেখাপড়ায় মেহনত করার প্রতি বাধ্য করা। পড়ালেখায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এমন সব উপকরণ থেকে তাদের দূরে রাখা।
৬. মাদরাসায় লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা।
৭. ছাত্রের পরিমাণ নয়, মানের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা। সংখ্যা বৃদ্ধির মানসিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করা।
৮. আগের জামাতে উত্তীর্ণ না হলে পরের জামাতে তারাক্কী না দেয়া।
৯. যোগ্য উস্তাদদেরকে কাজ করার, ছাত্রের পেছনে মেহনত করার পরিবেশ করে দেয়া।
১০. যোগ্য উস্তাদদের নিয়ে মজলিসে তালীমী গঠন করে দুর্বলতার আরও যে জায়গাগুলো রয়েছে তা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা।

এমন নয় যে, মাদরাসাগুলোতে যোগ্য উস্তাদ নেই। আছেন। সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও আছেন। তাদেরকেও কাজে লাগালে ফায়দা কম হবে না। তারা হয়ত কাজে লাগছেন না বা লাগানো হচ্ছে না, কিংবা লাগলেও তা অব্যাহত রাখতে পারছেন না। উপরোক্ত বিষয়গুলো আমলে নিলে শিক্ষার মান আরও ভাল করা সম্ভব বলে মনে করি ৷

নিচে উপজেলাভিত্তিক মাদরাসাগুলোর ফলাফলের তালিকা প্রদত্ত হলো-

সদর উপজেলা

মোট জামিয়া- ২৯টি
মোট ছাত্র-ছাত্রী- ৪৭৯জন
পাস- ৩৩৮জন
ফেল- ১০১জন
অনুপস্থিত- ২০জন
স্থগিত- ৯জন
মুমতায- ৫জন
জায়্যিদ জিদ্দান- ৬৫ জন
জায়্যিদ- ১৪০জন
মাকবুল- ১১৮জন
পাশের হার- ৭০.৫৬% ৷

হালুয়াঘাট উপজেলা

মোট জামিয়া- ৪টি
মোট ছাত্র-ছাত্রী- ৪৯জন
পাস- ২৩জন
ফেল- ২২জন
অনুপস্থিত- ৩জন
স্থগিত- ১জন
মুমতায- ০ জন
জায়্যিদ জিদ্দান- ০ জন
জায়্যিদ- ৫জন
মাকবুল- ১৮জন
পাশের হার- ৪৬.৯৩% ৷

ধোবাউড়া উপজেলা

মোট জামিয়া- ৫টি
মোট ছাত্র-ছাত্রী- ৩৮জন
পাস- ৩১জন
ফেল- ৪জন
অনুপস্থিত- ৩জন
স্থগিত- ০ জন
মুমতায- ০ জন
জায়্যিদ জিদ্দান- ০ জন
জায়্যিদ- ১৩জন
মাকবুল- ১৮জন
পাশের হার- ৮১.৫৭% ৷

ফুলপুর উপজেলা

মোট জামিয়া- ৯টি
মোট ছাত্র-ছাত্রী- ৯২জন
পাস- ৬৫জন
ফেল- ২৪জন
অনুপস্থিত- ৮জন
স্থগিত- ২জন
মুমতায- ০ জন
জায়্যিদ জিদ্দান- ৯ জন
জায়্যিদ- ২৯জন
মাকবুল- ২৭জন
পাশের হার- ৭০.৬৫% ৷

তারাকান্দা উপজেলা

মোট জামিয়া- ১টি
মোট ছাত্র-ছাত্রী- ৭জন
পাস- ৫জন
ফেল- ২জন
অনুপস্থিত- ০ জন
স্থগিত- ০ জন
মুমতায- ০ জন
জায়্যিদ জিদ্দান- ১জন
জায়্যিদ- ২জন
মাকবুল- ২জন
পাশের হার- ৭১.৪২% ৷

মুক্তাগাছা উপজেলা

মোট জামিয়া- ৭টি
মোট ছাত্র-ছাত্রী- ৭১জন
পাস- ৩৭জন
ফেল- ২৯জন
অনুপস্থিত- ৩জন
স্থগিত- ২জন
মুমতায- ০ জন
জায়্যিদ জিদ্দান- ৬জন
জায়্যিদ- ১৪জন
মাকবুল- ১৭জন
পাশের হার- ৫২.১১% ৷

ফুলবাড়িয়া উপজেলা

মোট জামিয়া- ৩টি
মোট ছাত্র-ছাত্রী- ১৭জন
পাস- ১০জন
ফেল- ৫জন
অনুপস্থিত- ১জন
স্থগিত- ১জন
মুমতায- ০ জন
জায়্যিদ জিদ্দান- ১জন
জায়্যিদ- ২জন
মাকবুল- ২জন
পাশের হার- ৫৮.৮২% ৷

নান্দাইল উপজেলা

মোট জামিয়া- ৪টি
মোট ছাত্র-ছাত্রী- ৩২জন
পাস- ১৮জন
ফেল- ১০জন
অনুপস্থিত- ৪জন
স্থগিত- ০ জন
মুমতায- ০ জন
জায়্যিদ জিদ্দান- ০ জন
জায়্যিদ- ৯জন
মাকবুল- ৯জন
পাশের হার- ৫৬.২৫% ৷

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা

মোট জামিয়া- ৯টি
মোট ছাত্র-ছাত্রী- ৮৪জন
পাস- ৩৯জন
ফেল- ৩৮জন
অনুপস্থিত- ২জন
স্থগিত- ২জন
মুমতায- ০ জন
জায়্যিদ জিদ্দান- ৪জন
জায়্যিদ- ১৪জন
মাকবুল- ২১জন
পাশের হার- ৪৬.৪২% ৷

ত্রিশাল উপজেলা

মোট জামিয়া- ১টি
মোট ছাত্র-ছাত্রী- ৯জন
পাস- ৫জন
ফেল- ৩জন
অনুপস্থিত- ১জন
স্থগিত- ০ জন
মুমতায- ০ জন
জায়্যিদ জিদ্দান- ০ জন
জায়্যিদ- ২জন
মাকবুল- ৩জন
পাশের হার- ৫৫.৫৫% ৷