মিসর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর অনন্য অর্জন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ২৯ ২০২২, ০০:৩৩

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কায়রো, মিসর থেকে:

বিশ্ববিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনন্য গৌরব অর্জন করলেন লুৎফুর রহমান বিন ইসহাক নামের এক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী। গত ২০ জানুয়ারি তার এমফিল থিসিস ডিসকাশন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়, যাতে তিনি এক্সিলেন্ট (মুমতাজ) গ্রেড পেয়ে কৃতিত্বের সাথে তার এমফিল সমাপ্ত করেন।

জানা যায়, লুৎফুর রহমান আযহারীর থিসিসের বিষয় ছিল- ‘বাংলাদেশের ফকীহগণ ও হানাফি মাযহাব চর্চায় তাদের অবদান’৷ তিনি তার এমফিল থিসিসে বাংলা ভূখন্ডে ইসলামের সূচনা ও বিস্তারের ইতিহাস এবং হানাফি মাযহাবের ক্রমবিকাশ, প্রচার ও চর্চায় যুগে যুগে যে সকল ফকিহ আলেম ওলামা পীর মাশায়েখ বিশেষ অবদান রেখেছেন, তাদের জীবন ও খেদমতের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করেছেন৷ একইসাথে বাংলা ভূখন্ডে শত শত বছরের ইসলামী শাসনামলের নানা দিকও উঠে এসেছে তার এই বিশাল গবেষণাপত্রে।

বিস্তৃত তার এ গবেষণাপত্রে তিনি ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০২১ খ্রিস্টাব্দ- এ তিনটি পর্বে হানাফি ফিকহের খেদমতে ৬৬ জন বিশিষ্ট বাঙালি ফকীহের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তাদের মাঝে অন্যতম হলেন, আল্লামা নেছারুদ্দিন আহমাদ, মুফতি আজিজুল হক, মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী, আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী, আল্লামা আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী, মুফতি আব্দুল করিম, আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, আল্লামা নিয়াজ মাখদুম, মাওলানা আব্দুর রহিম, মুফতি আব্দুর রহমান, আল্লামা নূর মুহাম্মাদ আজমি, আল্লামা আমিমুল ইহসান মুজাদ্দেদী, আল্লামা যফর আহমাদ উসমানী, আল্লামা খতিব উবায়দুল হক জালালাবাদি, আল্লামা আব্দুল লতিফ ফুলতলী, আল্লামা সৈয়দ ফজলুল করিম, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মুফতি ফজলুল হক আমিনী, ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির, মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী, আল্লামা হিফজুর রহমান, আল্লামা আব্দুল মালেক কুমিল্লায়ী, আল্লামা কফিলুদ্দিন সরকার সালেহী প্রমুখ৷

লূৎফুর রহমান আজহারীর এমফিল থিসিসের সুপারভাইজার ছিলেন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র স্কলার কাউন্সিলের মহাসচিব, ফিকাহ বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন বিভাগের সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর ডক্টর হাসান সলাহ আস-সগির।

এছাড়াও থিসিস ডিফেনস ডিসকাশনে বহিরাগত বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিসরের সাদাত ইউনিভার্সিটির সাবেক ডিন প্রফেসর ডক্টর আব্দুল মুত্তালিব হামাদান। অভ্যন্তরীণ বিচারক হিসেবে ছিলেন ‘শরীয়াহ অ্যান্ড ল’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আবু সাইয়েদ আহমদ। থিসিসটি ডিসকাশারগণের প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মিসরস্থ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীগণ।

জানা গেছে, লুৎফুর রহমান আজহারী বাংলাদেশের বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া থানার ইসহাক খানের সন্তান। তিনি ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ছারছিনা দারুস সুন্নাহ আলিয়া মাদরাসা থেকে জিপিএ ফাইভসহ আলিম পাশ করেন। পরের বছর ফাযিল অধ্যয়নের সময় স্কলারশিপের মাধ্যমে মিসরে গমন করে আল আজহারের শিক্ষা জীবন সূচনা করেন। পরে ২০১৪ সালে ‘শরীয়াহ অ্যান্ড ল’ অনুষদ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ২০১৭ সালে মাস্টার্স দ্বিতীয় বর্ষ সমাপন শেষে তিনি এমফিল গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন, এবং গত ২০ জানুয়ারি কৃতিত্বের সাথে তিনি তার এমফিল গবেষণা সমাপ্ত করেন৷