‘মা’ সমাচার

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ০৭ ২০২১, ২৩:০৫

হুসাইন আহমদ মিসবাহ: পৃথিবীর সব’চে চোট্ট, হৃদয়গ্রাহী, প্রিয় শব্দ “মা”। মা’য়ের প্রতি দুর্বল নয়, এমন মানুষ সভ্য সমাজে খুজে পাওয়া অসম্ভব। মাত্র একটি অক্ষরের একটি শব্দ “মা” নিয়ে আজ কিছু গবেষনা করেছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম শব্দটির গভীরে ঢুকার। যা পেয়েছি, তাই এখানে তুলে ধরছি।

এক : মায়ের সমার্থক শব্দ।

বাংলায় ব্যবহৃত ‘মা’য়ের সমার্থক- মা, মাতা, আম্মা আম্মি, আম্মু, মাম্মি, মামনি, জননী, জনী, প্রজানিকা, প্রজায়িনী, অম্বা, অম্বালা, আই, আক্কা, স্বর্ণপ্রসূ, বীরা, জনয়িত্রী, জনিকা, প্রসূতি, জন্মধাত্রী, মাতৃ, মাতৃকা, অম্বালিকা, অম্বিকা, রত্নগর্ভা, স্বর্ণপ্রসবা, আম্মাজি, মাইজি, আম্মাজান, আম্মাসাব।

দুই : বিভিন্ন ভাষায় “মা”।

বাংলা-মা,

উর্দু-আম্মি,

হিন্দি-মা,

ফ্রান্স-মেরে,

জার্মান-মুট্টার,

ইংরেজি-মম, মাম্মি, মাদার,

ইতালিয়ান-মাদ্রে,

পর্তুগিজ-মায়ে,

আরবেনিয়ান-মেমে,

বেলরুশান-মাটকা,

সার্বিয়ান-মাজকা,

ডাস মোয়েন্ডেরে-মোয়ের,

ক্রিশ্চিয়ান-এমো,

গ্রিক-মানা,

হাওয়াইয়ান-মাকুয়াহাইন,

ক্রোয়েশিয়া-মাতি কিংবা মাজকা,

ড্যানিশ-মোর,

আইসল্যান্ড-মোয়ির,

আইরিশ-মাতাইর,

নরওয়েজিয়ান-মাদার,

পোলিশ-মামা বা মাটকা,

পাঞ্জাবি-মাই বা মাতাজি,

রোমানিয়ান-মামা বা মাইকা,

রাশিয়ান-মাত,

তেলেগু-আম্মা,

সিন্ধি-উম্মি

আক্কাদিয়ান-উম্মা,

বসনিয়ান-মাজকা,

ফরাসি-মেরি বা মামা,

পারসিয়ান-মাদার বা মামা,

ব্যাবিলন-উম্ম,

ইউক্রেনিয়ান-মাতি,

বুলগেরিয়ান-মাজকা,

প্রাচীন গ্রিক-মাতির,

তিন : মা’য়ের প্রকারভেদ।

উপরে মা’য়ের যে সমার্থক শব্দ ও বিদেশি শব্দ উল্লেখ করেছি, তা কেবল গর্ভধারিণী মা’য়ের। গর্ভধারিণী “মা” সহ আমি ৯ প্রকারের মায়ের সন্ধান পেয়েছি-

১. আদি “মা”।

যার থেকে সমগ্র মানব জাতির সৃষ্টি। তিনি হলেন আদি “মা” হযরত হাওয়া আ.।

২. মুমিনদের “মা”।

যিনি সমগ্র মুমিনগনের “মা”। তাঁরা হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. এর সম্মানিতা স্ত্রীগণ।

৩. গর্ভধারিণী “মা”।

যাদের গর্ভ থেকে আমরা জন্মেছি।

৪. সৎ “মা”।

ঐসব মহিলা, যাদেরকে ঔরসজাত পিতা বিয়ে করেছন এবং স্ত্রীর অধিকার দিয়েছেন (সহবাস করেছেন)।

৫. বৌ “মা”।

ঐসব মহিলা, যাদেরকে ঔরসজাত পুত্র বিয়ে করবে এবং স্ত্রীর অধিকার দেবে (সহবাস করবে)।

৬. দুধ “মা”।

ঔসব মহিলা, ছোট বেলায় মানে ২বছর বয়সের মধ্যে যাদের বুকের দুধ পান করা হয়েছে। দুধ পান করা ছেলে জন্য তিনি “মা” হয়ে যাবেন।

৭. আইনী “মা”।

ইসলামি আইন ও দেশীয় আইন যাদেরকে মাতা হিশেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যেমন শাশুড়ি (স্ত্রী বা স্বামীর গর্ভধারিণী মা)।

৮. সামাজিক “মা”।

মা’য়ের শ্রেণি ও মেয়ের শ্রেণি। যাদেরকে সামাজিক ভাবে আমরা মা’য়ের মত মনে করি বা “মা” সম্বোধন করি।

৯. বেহুদা “মা”।

সমাজে এমন মায়ের সন্ধান পেয়েছি, যার অস্তিত্ব কোথাও খুজে পাইনি। যার জন্য এই মা’য়ের নাম দিয়েছি “বেহুদা মা”। তিনি হলেন “ধর্মীয় মা”। মূলত ধর্মীয় মা বলতে কোন মায়ের হদিস ধর্মতে পাইনি।

চার : মা’য়ের বিধান।

ক. উল্লেখিত প্রকার সমুহের মধ্যে প্রথম ৭ প্রকারের “মা” বিধানগত ভাবে প্রকৃত মা’য়ের মত। তাদের সাথে মা’সূলভ আচরণ করতে হবে। মা’য়ের মত শ্রদ্ধা ও মর্যাদা প্রদান করতে হবে। তবে প্রথম দুই প্রকারের মা’কে আর পাওয়া যাবে না।

খ. ৮ম প্রকারের মা মানে “সামাজিক “মা”। এদের সবাই বিধানগত ভাবে প্রকৃত মায়েত মত নন। তাদের মধ্যে আপন ফুফু (পিতার সহোদর বোন), আপন খালা (মায়ের সহোদর বোন, ঔরসজাত মেয়ে, সহবাসকৃত স্ত্রীর ঔরসজাত মেয়ে, সহোদর ভাইয়ের ঔরসজাত মেয়ে, সহোদরা বোনের ঔরসজাত মেয়ে কেবল মায়ের মত। এই ৬প্রকারের মহিলা ব্যতিত সামাজিক ভাবে “মা” হিসেবে স্বীকৃত কোন মহিলার সাথে “মা” সূলভ আচরণ করা যাবে না। এমন কি ছেলে হিশেবে তাদের সামনে যাওয়াও জায়েজ নেই।

গ. ৯ম প্রকার মানে “ধর্মীয় মা”। এই ধরনের মা’য়ের সাথেও মা সূলভ আচরণ করা যাবে না। ছেলে হিশেবে তাদের সামনে যাওয়াও জায়েজ নেই।

পাঁচ : মা’য়ের মর্যাদা।

“মা” শব্দটির সাথে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। পৃথিবীর সকল ধর্ম, সব আইন মা’কে মর্যাদার শীর্ষে রেখেছে। মানবতার ধর্ম ‘ইসলাম’ মা’য়ের পদতলে সন্তানের ‘জান্নাত’ নির্ধারণ করেছে। মা-বাবার সন্তুষ্টিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ মায়ের দোয়া সরাসরি কবুল করার ঘোষনা দিয়েছেন। মর্যাদার জন্য আর কি চাই?

আল্লাহ সবাইকে যথাযথ ভাবে জীবিত মা’য়ের সেবা ও মৃত মা’য়ের জন্য দোয়া করার তাওফিক দিন। আমীন।