মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,আমি কি আমার ভোট দিতে পারবো?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ০১ ২০১৮, ১৫:২৩

 

সুফিয়ান ফারাবী

আমি ছাত্র মানুষ। কোন প্রকার রাজনীতির সঙ্গে নেই। সবসময় পড়াশোনাকে সর্বাগ্রে রাখার চেষ্টা করেছি। কোন উক্তিকারীর নীতিবাক্যে কান দিই নি কখনো। তবে দেশের নাগরিক হিসেবে চোখ-কান খোলা রেখেছি। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে খবরের কাগজও পড়ি না। তাছাড়া আমাদের মাদরাসাগুলোতে পেপার পড়া একপ্রকার নিষিদ্ধ।

সে হিসেবে রাজনীতির গভীর উপলব্ধি দূরের কথা সাধারণ বিষয়গুলোও কম বুঝি। তবে আমাদের চারপাশে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যেগুলোর সত্যতা দশ বারো বছরের বাচ্চাও ঠাহর করতে পারে, আসলে ঘটনাটা কী?

সেরকম একটা বিষয় ২০১৪ এর নির্বাচন। স্বয়ং সরকারই স্বীকার করেন, চৌদ্দ সালের নির্বাচন আর পাঁচটা নির্বাচনের মতো হয় নি। ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয় লাভ করেছিল ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ। সেটাকে পার্লামেন্ট নির্বাচন বলতে ভালো লাগে না। কারণ সরকার গঠন করতে দরকার ১৫১ আসন। আর আওয়ামী লীগ তো ১৫৪ আসনে নির্বাচন ছাড়াই বিজয়ী।

সে বছর (২০১৪, ৫ জানুয়ারি) আমি সাভারের একটি মাদরাসায় হেদায়াতুন্নাহু পড়ি। ৫ ই জানুয়ারী সকাল বেলা তরজমাতুল কুরআন ক্লাসে আমাদের হুজুর বলেছিলেন, আজকের দিনটি সম্পর্কে বলো। বিশেষ কিছু আছে কিনা?

আমি আর ক্লাসের আমির সাহেব মুখ চাওয়া চাওয়ী করলাম। আমির সাহেবের তাকানোর দৃশ্যটা এমন যে, তিনি কিছুই জানেন না। তিনি আসলেই জানতেন না। এ’কথাও যদি বলি, আমরা কেউই কিছু জানি না, তাহলেও বোধহয় ভুল হবে না। কারণ আমরা জানতাম জানুয়ারির পাঁচ তারিখে নির্বাচন। কিন্তু আজকেই যে পাঁচ তারিখ এটা কারোর মাথায় ছিল না। কারণ গনতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন অনেকটা ঈদের মতো। এটা মাইকিং করার প্রয়োজন হয় না, “আজকে ঈদ”।

আমি হুজুরের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বললাম, আমাদের জানা নেই।
হুজুর মুচকি হেসে বললেন, আমিও জানতাম না। ক্লাসে আসার সময় টিচার্স রুমে পেপারে পড়েছি, আজকে নির্বাচন।

হুজুরের কথা শুনে দুই হাজার নয় সনের একটা স্মৃতি মনে পড়লো। তখন হেফজ বিভাগে পড়ি। হঠাৎ হুজুর এসে সবাইকে ছুটি দিয়ে বললেন, যাদের বাসা কাছে, তারা বাসায় যেতে পারো।

দু-মিনিটের মাঝে পুরো ক্লাস রুম ফাঁকা হয়ে গেল। সবাই নিজ নিজ সিটে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা করলো। আমি আমার সহপাঠী মুরসালিনকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে, উস্তাদজী হঠাৎ ছুটি দিয়ে দিলেন কেন?

মুরসালিন বয়সে আমার থেকে দু-বছরের বড়। ও জগতের টুকটাক খবর জানতো। ও বললো, আজ নির্বাচন, যা বাড়ি গিয়ে ভোট দে।

ছুটি যে কারণেই হোক, আমার মনে বেশ আনন্দ ছিল। সপ্তাহের মাঝখানে ছুটি হেফজ বিভাগের ছাত্রদের কাছে কোন অংশেই ঈদের চেয়ে কম নয়। বাসায় ফিরে দেখলাম, আব্বার আঙুলে নীল রঙের দাগ। আব্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কিসের দাগ?
আব্বা বললেন, ভোট দিয়ে এসেছি। এটা ভোটের দাগ,এই বলে পকেট থেকে বিশ টাকা বের করে দিয়ে বললেন, যাও স্কুল মাঠে নির্বাচন হচ্ছে। দেখে এসো।

আমি আর আমার পাড়ার বন্ধু মেহেদী ঝালমুড়ি খেতে খেতে ল্যাবরেটরি স্কুলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। শুধু ভোটাররাই ভেতরে ঢুকতে পারছেন। অন্যদের প্রবেশাধিকার নেই।

ভোট যে বিশেষ এক উৎসব সেটা বুঝতে পেরেছিলাম সেদিন। ভোটারগণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন্দ্রে ঢুকার জন্য। তাঁদের চেহারায় বিশেষ একটা আগ্রহ দেখতে পেলাম। আজকে তাদের চেয়ে শক্তিশালী এ জগতে আর কেউ নেই। তাদের এতো কদর যে, তারা যাকে চাইবেন সেই হবে আগামীর সাভারের দায়িত্বশীল। একবুক আশা নিয়ে সবাই নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর ব্যালটে সিল বসাচ্ছেন। সাথে সাথে কার হাতে পুরো দেশের দায়িত্ব অর্পন করবেন সে হিসেবেও কষছেন। এর জন্য এক এক করে ঢুকছেন আর হাসি মুখে বের হচ্ছেন।

আজ আমার এইভেবে আনন্দ হচ্ছে, এবার আমিও ভোটার, আমার ইচ্ছাও ভূমিকা রাখবে সরকার গঠনে। ভোটের মাধ্যমে আমি বেঁছে নিতে পারবো আমার নেতাকে। আমার এটা ভেবেও ভালো লাগছে যে, আমি ২০১৪ সালের ভোটার হই নি। সে সময় ভোটার হলে আমি আমার মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পেতাম না। কারণ সে বার আমাদের এখানে নির্বাচন হয় নি। যদিও এমপি হয়েছেন আমার পছন্দের মানুষটিই। তারপরও তো নিজের ইচ্ছার বহিপ্রকাশ বলতে কিছু রইলো না।

ইচ্ছা প্রণোদিত নাকি কূট- কৌশলের কারণে ২০১৪ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় নি, তা আমি জানি না। কারণ আগেই বলেছি, রাজনীতি একদম কম বুঝি। গত নির্বাচন যে মানুষের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কারো পক্ষে বা বিপক্ষে নয়, নির্বাচন কমিশন যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার ভিত্তিতেই বলছি।

যা চলে গেছে সেটা নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। তবে আগামী নির্বাচন উৎসবমূখর হোক এই প্রত্যাশা রাখি। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের বাদানুবাদ চলছে। কেউ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি তুলেছেন, আবার কেউ সংবিধানকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার চাচ্ছেন না। নির্বাচনকালীন সরকার হোক বা না হোক, বিএনপি- জামাত অংশ নিক বা না নিক, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি শুধু আমার প্রাপ্য অধিকারের (ভোট দেওয়া) যথাযথ প্রয়োগ চাই। আমি ভোট দিতে চাই, আমি কি মূল্যহীন নাকি আমার মতেরও দাম আছে এটা জানতে চাই।

পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত একটা অনুরোধ ও একটি প্রশ্ন রাখবো। প্রশ্নটি একই সাথে অনুরোধ ও প্রশ্ন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ! আসন্ন নির্বাচনে আমি কি আমার ভোট দিতে পারবো?