মাওলানা সাদ রক্তের টানে নেতৃত্ব চায়; আল্লামা আনোয়ার শাহ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০৯ ২০১৮, ০৭:৪১

মাহমুদুল হাসান ও আব্দুল্লাহ মবিন
কিশোরগঞ্জ থেকে

কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহসভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জামিয়া ইমদাদিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ বলেছেন

হযরত ইলিয়াস রহঃ এর রক্তের সন্তান সাদ, আর সে সেই রক্তের টানে নেতৃত্ব লাভ করতে চায়। ইসলামে কেউ নেতৃত্ব চাইলে তাকে দেওয়া হয় না, এটা ইসলামের স্বীকৃত একটা সিদ্ধান্ত।
ইসলামের আসল থিউরি হচ্ছে এমন একজন যোগ্য লোক হবে যার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে সে নিতে চাইবে না।
কিন্তু এখানে উল্টা হয়ে গেছে।
সাদের একটাই কথা এই তাবলীগ আমার বাপ দাদার সম্পদ কাজেই মানুক আর নাই মানুক আমি বিশ্ব আমির।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদে ৭ ডিসেম্বর (শুক্রবার) আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ জুমার বয়ানে এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন তাকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু সবাই ব্যর্থ হয়েছে। এবং এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছে যার কারণে বিশ্বের সমস্ত মুসলমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। যেটা তাদের ভাষায় বলা হয় এতাআতি গায়রে এতাআতি।
অথচ আল্লাহ বলেছেন এতাআতের জায়গা হলো তিনটি আল্লাহ, নবী, উলামায়ে কেরাম। কোরআনে কোন জায়গায় বলেনি মক্কার মদিনার এতাআত কর কোন জায়গার করতে কোথাও বলা হয়নি।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ সাথী যারা দীন সম্পর্কে অজ্ঞ তারা এই বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করছে না।
গত কয়েকদিন আগে এক এতাআতির বয়ানে শুনলাম, এরা তাদের অনুসারীদের বলছে, কওমি মাদ্রসায় কোন যাকাত বা কোন আর্থিক সহায়তা করবে না, যখন তোমরা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিবে তখন মাদ্রাসা গুলো বন্ধ হয়ে যাবে, এরা এমনিতেই চলে যাবে।
তাদের এই কথা ১৪শত বৎসর আগের মুনাফেকদের কথার সাথে মিলে যায়।
সাহাবায়ে কেরাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে লাগলেন তখন মুনাফেক সরদার আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা বলেছিলো যে আমরা মদিনায় গিয়ে মুহাজির সাহাবীদের অর্থনৈতিক অবরোধ করবো, দান সদকা করবো না। তখন তারা এমনিতেই মুহাম্মাদ কে ছেড়ে চলে যাবে।

তিনি আরো বলেন কওমি মাদ্রাসা কারো টাকায় চলে না, কওমি মাদ্রাসা আল্লাহ তাআলা চালান। আজ কওমি মাদ্রাসা আছে উপমহা দেশে দ্বীন টিকে আছে। যদি কওমি মাদ্রাসা না থাকতো তাহলে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ এতো আগে বারতো না।
এদেশে ১৫ লক্ষ কওমি শিক্ষার্থী রয়েছে। এরা যদি ধৈর্যের পরিচয় না দিতো তাহলে সারা বাংলাদেশ অচল হয়ে যেতো।
এই ১৫ লক্ষ কওমি শিক্ষার্থীরা যদি বেড়িয়ে যেতো যারা জানের পরোয়া করে না, যারা কোন কিছুর পরোয়া করে না, যারা এদের ভাইদের মেরে মেরে রক্তাক্ত করেছে শহীদ করেছে তা আমরা সচক্ষে দেখেছি। আজকে মিডিয়ার জগত কোন একটা কিছু ঘটলেই নিমিষেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়।

আমি স্নেহের ছাত্রদেরকে এজন্য মোবারক বাদ জানাই যে তারা নিজেদের থেকে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। সম্পূর্ণ শান্তশিষ্টভাবে প্রতিবাদ করেছে। এবং তারা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।

আনোয়ার শাহ বলেন সাদের কেডার বাহিনী ইজতেমা মাঠে কর্মরত আলেম ছাত্র ও সাধারণ মুসল্লিদের উপর এমন ভাবে হামলা করে এমন ইতিহাস কায়েম করেছে যা পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই।

আজকে অনেকে সংশয়ে আছেন, কারা আক্রমণ করলো কারা নির্যাতিত হলো। কে জালেম আর কে মাজলুম। এবং এই অত্যাচারের পেছনে আসল কারণ কি অনেকে জানে না।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো এরা কিছু করবে না, কিছুক্ষন অবস্থান করে চলেযাবে। কারণ তারা সাথে বেডিং আনেনি।
কিন্তু তারা যাবে তো দুরের কথা ঠিক ১১টার দিকে গেইট ভেঙে এমন হামলা করে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
হিসাব অনুযায়ী আহতদের সংখ্যা
৫ হাজার, এর মধ্যে অনেকেই আইসিউতে আছে।

তিনি বলেন এই সাদের অনুসারীরা কোরআন হাদিসের পথ ছেড়ে তারা এমন একটি শক্তির প্রভাবে প্রভাবান্নীত, যে শক্তি সারা বিশ্বের মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইহুদী খৃষ্টান আর অমুসলিমদের কথা হচ্ছে যত পারো মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করো।

আল্লমা আনোয়ার শাহ তাবলীগের বিভক্ত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন সরকারের এক উর্ধতন কর্মকর্তা আমাকে প্রশ্ন করেছিলো আপনাদের মধ্যে এতো বিভক্তি কেন?
আমি বল্লাম বিভক্ত নেতৃত্বের স্বার্থে নয় বা কোন আর্থিক স্বার্থেও নয়। আজকে প্রায় ৯৮ বতসর যাবত তাবলীগের কাজ চলে এসেছে লাইন মতো। এতে উলামায়ে কেরামের পুরোপুরি সহযোগীতা ছিলো।
অফিসার আমাকে প্রশ্ন করলো উলামায়ে কেরাম কি কখনো তাবলীগকে সাপোর্ট করেছে? আমি বল্লাম এই তাবলীগ চালু করেছে কে? এই তাবলীগ চালু করেছে উলামায়ে কেরাম। উলামায়ে কেরাম যেহেতু এই কাজকে সাধারণ মানুষকে দীনের দিকে ধাবিত করার জন্য চালু করেছেন। যদি উলামায়ে কেরাম এই কাজের মধ্যে সহযোগীতা না করতেন তাহলে এই পর্যন্ত পৌঁছাতো না।
কিন্তু এর মধ্যে এমন একটা বিস্ফোরণ প্রকাশ করলো, যার কারণে এই মেহেনত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।

যারা কোরআন সুন্নাহ মানে যারা নবী রাসুলকে মানে আল্লাহর এই দীনোর দায়িত্ব যাদের উপর দিয়ে গেছেন কেবল তারাই এটা বুঝে।

যেহেতু সাননে নির্বাচন আমাদেরকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এখন আমরা তাদেরকে বুঝাবো এর মধ্যে যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ।
আমরা কোন কাজে জোর প্রদর্শন করবো না।