মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বদর বা শবে কদর

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ১৬ ২০২০, ২২:৫৩

মুফতি সৈয়দ নাছির উদ্দীন আহমদ;

লাইলাতুল কদর অর্থাৎ মহিমান্বিত রজনী। শবে কদর নামেও এ রাত অভিহিত। আরবি শব্দ ‘লাইল’ ফারসি শব্দ ‘শব’ অর্থ রাত এবং ‘কদর’ অর্থ পরিমাণ, পরিমাপ, নিয়তি, ভাগ্য ও অদৃষ্ট, মর্যাদাপূর্ণ, মহিমান্বিত, সম্মানিত ইত্যাদি । সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত বা মহিমান্বিত রাত।

বৎসরের এই রাতটি আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কাছে সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রিয় রজনী।

উম্মতে মোহাম্মদী (সা.)-এর নিকট এটি আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে বিশেষ উপঢৌকন এ মহিমান্বিত রজনী হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে আল্ কোরআনে ঘোষিত হয়েছে।

রমজান আরবি হিজরি সনের মাসগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই মাসেই নাজিল

হয়েছে মানবজাতির হেদায়েতের বিধান আল্ কুরআন।

এরশাদ হয়েছে, “রমজান সে-ই মাস যাতে নাজিল হয়েছে আল্ কুরআন, যা মানুষের জন্য দিশারী এবং সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয়কারী।” (সূরা বাকারা-১৮৫)

এ রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ । আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,নিশ্চয় আমি এ কুরআন অবতীর্ণ করেছি মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি ( শবে কদরে ) আর মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি সম্বন্ধে তুমি কি জান ? মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম ।

ঐ রাত্রে ফেরেশতাগণ ও রূহ ( জিবরীল) অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে । শান্তিময় সেই রাত্রি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত । ( সুরা ক্বাদর )

নিশ্চয় আমি এ কুরআন অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় ( শবেকদর ) রাতে ; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয় । আমার আদেশক্রমে , আমি তো রসূল প্রেরণ করে থাকি । এ তোমার রবের নিকট হতে করুণা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ । ( সুরা দুখান আয়াত ৩)

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন,তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করবে । ( বুখারী হাদীস নং-২০২০)

শবে কদর শেষ দশকের কোন রাতে এ নিয়ে ফুকাহা ও মুহাদ্দীসীন হযরাতগণের মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে । অনেক বুজুর্গানে দীন সাতাশের রাতকে শবে কদররূপে নির্ধারিত করেছেন ।

এ মতের স্বপক্ষে গ্রহনযোগ্য যুক্তিও তারা দিয়েছেন । তবে এটা নিশ্চিত কোন মত নয় ।

তাই সাতাশের রাতকে সুনির্দিষ্ট ভাবে লাইলাতুল কদর বলা উচিত নয়। খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, এ রাতে লাইলাতুলকদর হওয়ার অধিক সম্ভবনা রয়েছে।

কেননা সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলে কারীম (সা:) কে লাইলাতুল কদর কোন রাত তা জানানো হয়েছিল। তিনি তা সাহাবীদেরকে জানানোর জন্য আসছিলেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল। তাদের ওই ঝগড়ার কারণে রাসূলুল্লাহ(সা:) এর নিকট থেকে সে রাতের ইলম উঠিয়ে নেওয়া হয়।

এ কথাগুলো সাহাবীদেরকে জানানোর পর নবী (সা:) বললেন-হতে পারে,এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এখন তোমরা এ রাত (অর্থাৎ তার বরকত ও ফযীলতপূর্ণ রাতটি ) রমযানের শেষ দশকে অন্বেষণ কর। (মিশকাত হাদীস:১৯৯৪,সহীহ বুখারী হাদীস নং ২০২০, সহীহ মুসলিম ১১৬৫/২০৯)

তাছাড়া রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর উপরে বর্ণিত হযরত আয়েশা (রা:) এর হাদিস থেকে বুঝা যায়। তাই অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম এই অভিমত দিয়েছেন যে রমজানের শেষ দশকে বেজোড় রাতে শবে কদর।

যেমনটি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রা:)হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,নবী করিম(সা:) বলেছেন, লাইলাতুল কদরকে তোমরা রমজানের শেষ দশকে মাসের নয় দিন বাকি থাকতে,সাত দিন বাকি থাকতে,এবং পাঁচ দিন বাকি থাকতে তালাশ করবে (বুখারী-মিশকাত হাদীস১৯৮৫)

অর্থাৎ রমজানের শেষ দশকের ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ তারিখের যেকোন রাতে শবে কদর বিদ্যমান ।

রমজানে শেষ দশকে ইতিকাফ করার অন্যতম একটি বড় কারণ ছিল এই মহিমান্বিত বরকতময় রাতের ফজিলত অর্জন করা ।

তাই বিশ রমজান সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ইতিকাফের নিয়তে রোযা রেখে মসজিদে প্রবেশ করতে হয় । শবে কদরের সম্ভাবনার রাত ঐদিন তথা ২০ রমজানের সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে শুরু। হতে পারে ঐ রাত্র মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর ।

তাই রমজানের শেষ দশকের প্রতি রাতেই ইবাদত করা উচিত। বিশেষ করে শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে শবে কদর ইবাদতের মাধ্যমে তালাশ করা প্রয়োজন।

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত,নবী করিম (সা:) বলেছেন,যে ব্যক্তি শবে কদরে ( ভাগ্য- রজনী অথবা মহীয়সী রজনীতে ) ঈমান ও সাওয়াবের আশায় কিয়াম করে ( নামায পড়ে ) তার অতীতের ( সগীরাহ ) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় । (বুখারী হাদীস: ২০১৪)

হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম,হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি বলুন,যদি আমি ( ভাগ্যক্রমে ) শবে কদর জেনে নিই,

তাহলে তাতে কোন দো’আ পড়ব ?

তিনি বলেন,এই দো’আ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী । অর্থাৎ হে আল্লাহ ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা ভালভাসো । সুতারাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও । ( তিরমিযী হাদীস: ৩৫১৩)

আসুন যারা ইতিকাফ করছি অথবা করতে পারছিনা সবাই মহিমান্বিত বরকতময় হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে কুরআন সুন্নাহর আলোকে এবাদতের মধ্যে রমজানের শেষ দশক অতিবাহিত করি ।

বেশি বেশি নফল নামায,কুরআন তিলাওয়াত, যিকির আযকার ও তাওবা ইস্তেগফার পড়ি ।

আল্লাহ পাক সবাইকে তাওফিক দান করুন । আমীন–