মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য হারাম: আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ১৩ ২০১৮, ০০:৩৪

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী আজ সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, “পহেলা বৈশাখের দিন বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নামে বিভিন্ন জীবজন্তুর মূর্তি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করা মুসলমনাদের ঈমান-আক্বীদা বিরোধী একটি অনৈসলামিক ও বিজাতীয় সংস্কৃতি। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না”।

তিনি বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে নারী পুরুষের মুখে উল্কি আঁকা, বড়বড় পুতুল, হুতোম পেঁচা, হাতি, কুমির, সাপ, বিচ্ছু, ও ঘোড়া’র প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা, বিভিন্ন জীব-জন্তুর ও বিকৃত মানব মুখাবয়বের মুখোশ পরা, প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ একসঙ্গে অশালীন পোশাক পরে অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢোল বাদ্যের তালে তালে নৃত্য করে র‌্যালি করার হিন্দুয়ানী যে রীতি রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলমানদের ওপর জোর করে চালু করা হচ্ছে, তা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও হাদীস বিশারদ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করার নির্দেশ দাতাদের নিকট প্রশ্ন রেখে বলেন, পহেলা বৈশাখে নতুন বছরের শোভাযাত্রায় কার কাছে মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা হচ্ছে? জীবজন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেবদেবীর মূর্তি কী মানুষের কোন কল্যাণ করতে পারে? মুসলমানদের জন্য এমন বিশ্বাস ও রীতি পালনের কোন সুযোগ আছে?

তিনি বলেন, মুসলমানদের ইসলামী বিধিধিান মানতে হবে। ইসলামী শরীয়ত মতে কোন জীবজন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেবদেবীর মূর্তির কাছে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করলে ঈমান থাকবে না। মুসলমানদের আকীদা হলো, ভাল-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল সবকিছুই মহান আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়ে থাকে। মুসলমানদেরকে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর নিকট।

তিনি বলেন, মুসলমানরা সবসময় সুরায়ে ফাতেহা পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা করেন। “ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন” অর্থাৎ- হে আল্লাহ, আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। সুতরাং যেসব মুসলমান আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করেন এবং মুসলমানদের জন্য এটা অতি আবশ্যকীয় বিশ্বাসের অংশ। তাই মুসলমানদের জন্য বিজাতীয় মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়ার কোনই সুযোগ নেই।

হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণসহ সকল অনৈসলামিক ও বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকার জন্যে মুসলিম জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্কুল কলেজের মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে ঈমান আকীদা বিরোধী সংস্কৃতি পালনে রাষ্ট্র কখনো বাধ্য করতে পারে না। এটা সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা বিরোধী। কারণ, বাংলাদেশের সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বিদ্যমান আছে। তাছাড়া সংবিধান দেশের প্রতিটি নাগরিককে স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। সুতরাং ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরোধী কোন রীতি-রেওয়াজ সরকার কোনভাবেই নাগরিকদের উপর সংবিধান মতে চাপিয়ে দেয়ার অধিকার রাখে না।

তিনি বলেন, সংবিধান ধর্মীয় বিশ্বাস প্রতিপালনের পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার দেওয়া সত্ত্বেও কেউ ক্ষমতার জোরে সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশের জনগণের ওপর ভিন্ন ধর্মের রীতিনীতি চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালালে তার পরিণতি শুভ হবে না।

তিনি বলেন, আমরা দেশীয় রীতি ও সংস্কৃতি বিরোধী নই। হেফাজতে ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধী নয়। তবে বাঙ্গালী সংস্কৃতির নামে মুসলমানদের ঈমান হরণ করার কোন হিন্দুত্ববাদি আয়োজন হলে নীরব বসে থাকতে পারি না। তিনি বলেন, ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন, দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও নৈতিকতা বিরোধী কোন কালচার চাপিয়ে দিতে চাইলে দেশবাসী কখনোই তা মেনে নিতে পারে না।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, হিন্দু সমাজে শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিনে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী পেঁচা, রামের বাহন হিসেবে হনুমান, দুর্গার বাহন হিসেবে সিংহের মুখোশ ও দেবতার প্রতীক হিসেবে সূর্য এবং অন্যান্য জীব-জন্তুর মুখোশ পরে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে থাকে। নারী-পুরুষ মুখে উল্কি আঁকা, জীবজন্তুর মুখোশ পরা, নারীরা লাল-সাদা শাড়ি পরা, কপালে শাখা-সিঁদুর লাগিয়ে সম্মিলিত উলুধ্বনি দেয়া সবই হিন্দু ধর্মীয় রীতি। এসব রীতি মুসলমানদের জন্য পালনের কোনই সুযোগ নেই। মুসলমানরা এসব রীতি-রেওয়াজ মেনে চললে তাদের ঈমান থাকবে না। তাছাড়া দেশাত্মবোধের জায়গা থেকেও এসব রীতি-রেওয়াজ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহি সংস্কৃতির বিরোধী। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সিংহভাগ মানুষ পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও সেই দেশেও নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয় না।

বিবৃতিতে হেফাজত মহাসচিব আরো বলেন, যারা পান্তা-ইলিশে খেয়ে একদিনে বাঙ্গলী হয় গ্রাম-বাংলার খেটে খাওয়া কৃষক, মজদুর, নিরন্ন, দরিদ্র, অসহায় মানুষের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। জাতীয় সংস্কৃতিতে কখনো ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা পার্থক্য হতে পারে না।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পান্তা-ইলিশ দেশের কত ভাগ মানুষ খাওয়ার সুযোগ পায়?

তিনি বলেন, আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি যে, বেশ কয়েক বছর থেকে বহুবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় নারীদের ওপর সংঘবদ্ধ যৌন-নির্যাতন ও সম্ভ্রমহানীর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। যা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও চলাফেরার কুফল। এসব অনুষ্ঠানে নারীদের নিরাপত্তা তো নেই, বরং ক্ষতির আশংকাই বেশি।

সে জন্যে নারীদের ইজ্জত, সম্মান ও আব্রু রক্ষার স্বার্থে বিজাতীয় এসব কালচারে শরীক হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য দেশের নারী সমাজের প্রতি তিনি আহবান জানান। পাশাপাশি ঈমান-আক্বীদা বিরোধী হিন্দুত্ববাদি এসব শিরকী অপসংস্কৃতি বন্ধ করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানান। -বিজ্ঞপ্তি।