ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাচুক্তি সাক্ষর

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ১২ ২০১৮, ০৯:৫১

প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় ঋণ বাস্তবায়ন এবং সার্বিক সহযোগিতার বিস্তার ঘটাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে ভারত প্রতিরক্ষা খাতে যে ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে, কীভাবে সেই অর্থ ব্যয় হবে তার রূপরেখা ঠিক করা ছাড়াও সই হয়েছে আরও তিনটি সমঝোতা স্মারক। বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে গতকাল শুক্রবার এ খবর জানা গেছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল মাহফুজ রহমানের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল এই বিষয়ে বৈঠক করে ভারতের প্রতিরক্ষাসচিব সঞ্জয় মিত্রর সঙ্গে। ঋণের অর্থ কীভাবে খরচ হবে, কোন কোন প্রতিরক্ষাসামগ্রী কেনাবেচা হবে, সহযোগিতার ক্ষেত্র কোথায় কীভাবে বাড়ানো হবে, তা আলোচনার পর একটা কাঠামো বা ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের যেসব প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রয়োজন ভারত যদি সেসব তৈরি করে, তাহলে দুই দেশের সম্মতিতে তা কেনাবেচা হবে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের প্রয়োজনভিত্তিক চাহিদাপত্র ভারতকে দেবে। তা পাওয়ার পর ঠিক হবে ভারত কী কী সরবরাহ করতে পারে।

হাইকমিশন সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষা খাতে যে ৫০ কোটি ডলার ভারত ঋণ দিচ্ছে, তার পুরোটাই যে ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে খরচ করতে হবে তা নয়। চুক্তির একটা অংশ (প্রায় ৩৫ শতাংশ) তৃতীয় দেশ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনে বাংলাদেশ খরচ করতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভারতের অনুমতি নিতে হবে।

দুই দেশের মধ্যে অন্য যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তার দুটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নৌবাহিনীর। খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শিপইয়ার্ডের সঙ্গে যৌথভাবে নৌ-জাহাজ তৈরি করা এই দুই বোঝাপড়ার লক্ষ্য। চতুর্থ সমঝোতা দুই দেশের সামরিক স্কুলের শিক্ষার্থী বিনিময় নিয়ে। এর ফলে শুরু থেকেই পরস্পরকে চেনাজানার সুযোগ হয় এবং সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে আগে থেকেই প্রশিক্ষণ বিনিময় চালু আছে। চালু আছে দুই বাহিনীর মধ্যে সামরিক মহড়াও। তার ব্যাপ্তিও ঘটছে। এই সমঝোতা স্মারক তার পরিধি আরও বাড়াবে।

ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতার বিষয়টি বাংলাদেশের কাছে যথেষ্টই স্পর্শকাতর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে থেকেই এই সমঝোতা নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে কি না, সেই সংশয় বিভিন্ন মহল প্রকাশও করেছিল। কিন্তু সেই সব আশঙ্কা উপেক্ষা করে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হয়। ভারত যে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে, তার মধ্যে ৫০ কোটি ডলার আলাদা করে প্রতিরক্ষা খাতের জন্য চিহ্নিত হয়। কীভাবে সেই অর্থ ব্যয় হবে, সেটাই ছিল এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চান, শুধু ঋণের অর্থ খরচ নয়, বিদেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে যেসব প্রকল্পের কাজ ভারত হাতে নিয়েছে, সেগুলোর রূপায়ণ দ্রুত করতে। প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে ভারত চায় চীনের সঙ্গে পাল্লা দিতে।

বাংলাদেশের কাছে ভারতের সামরিক উপস্থিতি কতটা স্পর্শকাতর, তা আরও একবার বোঝা গেছে রোহিঙ্গা প্রশ্নে। রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে দ্রুত হাসপাতাল তৈরির এক প্রস্তাব বাংলাদেশকে ভারত দিয়েছিল। সে জন্য সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগানোর কথা প্রাথমিকভাবে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সেনা উপস্থিতির স্পর্শকাতরতার দরুন সেই প্রস্তাব আপাতত বিবেচিত হচ্ছে না। হাসপাতাল তৈরিতে বাংলাদেশ আগ্রহী। কিন্তু সামরিক হাসপাতালে আড়ষ্টতা রয়েছে।

তিন দিনের এই সফরে লে. জেনারেল মাহফুজ রহমান ভারতের সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে দেখা করেন। এ ছাড়া দেখা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলের সঙ্গে। তিনি দিল্লিতে ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজও ঘুরে দেখেন।