ব্যবহারে মানুষের পরিচয়

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ০১ ২০২০, ১৭:০৬

•মুফতি গোলাম রাজ্জাক কাসেমী•

উত্তম আচার-ব্যবহারের গুরুত্ব কারো অজানা নয়। কথাবার্তা, লেনদেন ও উঠবস ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা এবং আচার-ব্যবহারে অযথা রাগ ও ক্রোধ প্রকাশ থেকে বিরত থাকা সত্যিকার মোমিনের গুণ। এর মাধ্যমে সমাজ থেকে হিংসা, বিদ্বেষ ও কলহ দূর হয় ৷ তখন সুন্দর ও সুদ্ধতার পরশে সমাজ সুরভিত হয় ৷

এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

“إِنَّ الرِّفْقَ لاَ يَكُونُ فِى شَىْءٍ إِلاَّ زَانَهُ وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَىْءٍ إِلاَّ شَانَهُ”

‘কোমলতা যেখানেই থাকবে সেটাই হবে সৌন্দর্যমন্ডিত। আর যেখান থেকেই তা উঠিয়ে নেওয়া হবে, সেটাই হবে দোষযুক্ত।’ -( মুসলিম : ২৫৯৪)

উত্তম আচরণের এই গুণ যার মাঝে যত উত্তমভাবে থাকবে সে তত উন্নত হবে। নবীজি ইরশাদ করেন,

” إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلَاقًا “.

‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে যার আখলাক সবচেয়ে উত্তম।’ (বোখারি : ৩৫৫৯)

আম্মাজান হযরত আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন, নবীজিকে বলতে শুনেছি,

” إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ الصَّائِمِ الْقَائِمِ “.

‘নিশ্চয় মুমিন তার উত্তম আচরণ দিয়ে স্পর্শ করতে পারে রাত জেগে ইবাদতকারী এবং দিবসজুড়ে রোযাদার বান্দার মর্যাদা।’ (আবু দাউদ : ৪৭৯৮)

এই উত্তম আখলাকের গুণ যার মধ্যে যত বেশি তার ঈমান ততবেশি পূর্ণ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

” أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا “.

মুমিনদের মধ্যে ঈমানের দিক থেকে

সে সবচেয়ে পূর্ণ, যার আখলাক সবচেয়ে উন্নত। (আবু দাউদ : ৪৬৮২)

উন্নত আখলাক মানুষকে নিয়ে যায় জান্নাতে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবীজিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল – কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে? ’ নবীজি উত্তরে বললেন,

” تَقْوَى اللَّهِ، وَحُسْنُ الْخُلُقِ ”

‘ আল্লাহর ভয় এবং উত্তম আচরণ।’ (তিরমিযি : ২০০৪)

সুন্দর আচার-ব্যবহার দূরকে টেনে আনে কাছে। কাছের মানুষ হয়ে ওঠে আরো আপন। পারস্পারিক ভালোবাসা ও হৃদয়ের বন্ধনে ছড়িয়ে পড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস। সুন্দর আচরণ এবং উত্তম ব্যবহার মানুষকে নিয়ে যায় বহু মানুষের উর্ধ্বে, অসীম উচ্চতায়–যে উচ্চতার সামনে সবাই মাথা নত করে দাঁড়ায় ৷

যায়েদ ইবনে সা‘নাহ নামক এক ইহুদি থেকে একবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু ধার নিয়েছিলেন। পরিশোধের সময় তখনো দু’তিন দিন বাকি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁটছিলেন। সঙ্গে ওমর (রা.)। এমন সময় হঠাৎ সেই ইহুদি তেড়ে এসে নবীজির কাপড় গুটিয়ে ধরে বলল- তোমরা বনু আবদুল মুত্তালিবের লোকেরা এমনই, কারো কাছ থেকে ধার নিলে সেটা পরিশোধে বড় টালবাহানা কর!

প্রিয়নবীজির সাথে এমন অসভ্য আচরণ দেখে হজরত ওমর (রা.) সহ্য করতে পারলেন না। তিনি গর্জে উঠলেন। ধমকি দিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু বলেননি, শুধু শান্তভাবে ওমরের দিকে চেয়ে রইলেন। একটু পর কোমলকন্ঠে বললেন-

‘ওমর! আমি এবং সে দুজনই তোমার কাছে অন্য কিছুর মুখাপেক্ষী ছিলাম। তোমার উচিত ছিল আমি যেন তাড়াতাড়ি ঋণ পরিশোধ করি সে কথা বলা, আর সে যেন সুন্দরভাবে পাওনা চায় তারজন্য তাকে অনুরোধ করা।’ তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যাও, তাকে তার পাওনা পরিশোধ করে দাও এবং কঠোর ব্যবহারের কারনে সঙ্গে আরো বিশ সা’ পরিমাণ খেজুর বাড়িয়ে দাও।’

মহানবীর এমন সুন্দর আচরণে ইহুদির মন গলে যায়। নিজের অন্যায় আচরণে ভীষণভাবে লজ্জিত হয় এবং ইসলাম গ্রহনে ধন্য হয়।

(মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১৩৮৯৮)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই ভালো ব্যবহার দিয়ে মানুষের হৃদয়রাজ্য জয় করতেন, সমাজকে পরিশুদ্ধ করতেন ৷