বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ০৯ ২০২০, ১৪:০৫

শায়খ আহমাদুল্লাহ;

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতে যাকাত কাদেরকে দেওয়া যাবে সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে ধারণা দিয়েছেন। আমরা জানি যাকাতের আটটি খাত রয়েছে, এ খাতগুলোতেই দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তার মধ্যে মৌলিক খাত হলো- একেবারেই নিঃস্ব মানুষ, যার কিছুই নেই; সেই সাথে অভাবী মানুষ, যেটুকু সম্পদ আছে তা দিয়ে তার চলে না। এ দুই শ্রেণীর মানুষকে যাকাত দেওয়া যায় অর্থাৎ অভাবী লোকদেরকে যাকাত দেওয়া যায়।

অভাবী লোকদের সংজ্ঞাও ইসলামী শরিয়াহ পরিষ্কারভাবে দিয়েছে। অভাবী বলতে আজকাল অনেক ধরনের অভাবী লোক পাওয়া যায়। অনেক লোক আছেন যিনি অভাবী কিন্তু তার অনেক সঞ্চয় হয়েছে। অতএব এ ধরনের অভাবী যার সঞ্চয় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ, তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না।

যাইহোক ইসলামি শরীয়া অনুযায়ী ফকির এবং মিসকিনের যে সংজ্ঞা রয়েছে সেই সংজ্ঞার আলোকে অভাবী বা নিঃস্ব লোকদের যাকাত দেওয়া যাবে।

যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচাইতে অগ্রাধিকার দিতে হবে নিজের নিকটাত্মীয় কাছের লোকজন যারা আছেন তাদেরকে। নিজের আপন ভাই-বোন যদি অভাবে থাকে এবং যাকাত পাওয়ার মতো উপযুক্ত থাকে তাহলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। বরং তাদেরকে যাকাত দিলে দ্বিগুণ সাওয়াব হবে । আত্মীয়তা রক্ষার সাওয়াব এবং যাকাত দেওয়ার সাওয়াব, যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

আপনি এর বাইরে অন্য কাউকে বিশ্বাস করে আপনার যাকাতের টাকা হস্তান্তর করতে পারেন যে, ভাই আপনি আমার যাকাতের টাকাটা দিয়ে দিবেন। সেটা যেকোন ব্যক্তি অথবা কোন প্রতিষ্ঠানকে আপনি দিতেই পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনাকে যে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে তা হলো, যার কাছে আপনি হস্তান্তর করছেন আপনার যাকাতের টাকা, আপনার আমানত, তিনি সেই টাকা ইসলামি শরীয়া অনুযায়ী ইসলামী বিধান অনুযায়ী যথাপোযুক্ত খাতে ব্যয় করবেন, যথাপোযুক্ত নিয়মে ব্যয় করবেন, এটি আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ আপনার প্রবল ধারণার ভিত্তিতে হলেও আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, আপনি যাকে দিচ্ছেন তিনি তাতে কোন প্রকার তাসরুফ করবেন না অথবা তিনি ইসলামী শরিয়াহ’র যে কোন বিধান জেনে বা না-জেনে লঙ্ঘন করবেন না, এমনটি নিশ্চিত হতে হবে।

আমরা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনসহ অন্য যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এ জাতীয় রয়েছে, সেক্যুলার প্রতিষ্ঠান, তাদের যে সমস্ত কল্যাণমূলক কাজ আছে সেগুলোর প্রশংসা করছি, তারা পথশিশুদের জন্য এবং অন্য অনেকের জন্য কাজ করছেন, সেগুলো আপন জায়গায় প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য, সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু মুসলমানদের যাকাত কালেকশন করলে সেটা ব্যয় করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো মূলনীতি পরিষ্কারভাবে কুরআন হাদিসের আলোকে রয়েছে, সেই মূলনীতিগুলোকে পরিপূর্ণরূপে ফলো করার নিশ্চয়তা না থাকলে এরকম জায়গায় যাকাতের টাকা দেওয়া জায়েজ হবে না। তার ভিত্তিতে আমরা বলবো বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে যাকাতের টাকা দেওয়া জায়েজ হবে না, উচিত হবে না। কারণ তারা কোনোভাবেই আমাদেরকে নিশ্চিত করতে পারেননি যে, তারা আমাদের যাকাতের টাকাটা নিয়ে যথাপোযুক্ত উপায়ে ইসলামিক শরিয়াহ’র শর্তগুলোকে মেনে তারা আদায় করবেন এবং অভাবী লোকদের কাছে পৌঁছাবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত এই বিষয়টি নিশ্চিত করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত শুধু বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনই নয়, অন্য যারাই কালেকশন করছেন তাদের কাছে যাকাতের টাকা দেওয়া জায়েজ হবে না।

আমরা জানি, মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি রবি নূর অ্যাপসের মাধ্যমে যাকাতের টাকা কালেকশন করছে। এ বিষয়ে কথা হলো, যার কাছে যাকাতের টাকা দিয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারবেন না এবং তিনি ইসলামী শরিয়াহ ভালোভাবে জানেন না তার কাছে আপনি যাকাত দিতে পারেন না। প্রথম কথা হলো জানতে হবে, এরপরে হলো প্রতিপালন করতে হবে। এ দুটি বিষয় যদি না থাকে তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া জায়েজ হবে না।

এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান সেকুলার প্রতিষ্ঠান। তারা ইসলামী শরিয়াহ ভালোভাবে জানবে তা আশা করা সুদূর পরাহত বিষয়। আবার মানবে অক্ষরে অক্ষরে সেটাও আশা করা সুদূর পরাহত। অতএব, তাদের কাছে যাকাতের টাকা হস্তান্তর করবেন না।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে বিশুদ্ধ উপায়ে প্রত্যেকটি আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

শ্রুতিলিখন: রায়হান, বার্তা সম্পাদক, একুশে জার্নাল ডটকম।