বিএনপি জেগে উঠছে, জনসমর্থনের জোয়ারে সরকারে ‘হৃদকম্প’ শুরু হয়েছে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ২৯ ২০২১, ২০:৪১

বিএনপি জেগে উঠছে, বিএনপির জনসমর্থনের জোয়ারে সরকারে ‘হৃদকম্প’ শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মহানগর দক্ষিন বিএনপির উদ্যোগে করোনা ও ডেঙ্গু হেল্প সেন্টারের কার্য্ক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীর এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ এখনো ঘরে ঘরে গিয়ে পুলিশি আক্রমণ চলছে, হয়রানি হচ্ছে, তল্লাশি চলছে। কেনো ? কারণ কী? কারণ বিএনপি জেগে উঠছে। আজকে এই যে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের তত্ত্বাবধায়নে নতুন করে বিএনপিকে সাজানো হচ্ছে, কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এতে করে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে,নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে।”

‘‘ আর সেই জন্যেই আজকে তাদের(সরকার) হৃদকম্প উপস্থিত হয়েছে। তারা ভয় পেয়েছে, কাঁপছে। এজন্য তারা বিএনপির ওপরে চড়াও হয়ে আক্রমন করছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার, কোনো একনায়ক, কোনো ফ্যাসীবাদী শাসক বা কোনো অত্যাচারি শাসক কোনোদিনই টিকে থাকতে পারে নাই। জনতার উত্তাল রোষের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তখন আর তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না।”

সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘‘ এখনো সময় আছে, আপনারা দেয়ালের লিখনগুলো পড়ুন, মানুষের চোখের ভাষা দেখুন, মানুষের মনের কথা বুঝার চেষ্টা করেন। এখনো সময় আছে, পদত্যাগ করেন আপনাদের ব্যর্থতার জন্য, পদত্যাগ করেন আপনারা যে অপরাধ করেছেন সংবিধানকে লঙ্ঘন করে জনগনের ভোটের অধিকারকে বন্ধ করে দিয়ে, আগের রাত্রে ভোট নিয়ে চুরি করে আপনারা যে অপরাধ করেছেন সেখানে থেকে যদি রক্ষা পেতে চান অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।”

‘‘ একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগন যাতে তাদের পছন্দ মতো সরকার নির্বাচন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।”

নেতা-কর্মীদের তিনি বলেন, ‘‘ কথা একটাই- এখন সময় এসেছে উঠে দাঁড়াবার। এখন সময় এসেছে এই সরকারকে পরিস্কার করে বলে দেয়ার যে, তোমাকে আমরা চাই না।”

‘‘ এখন বিদায় নিতে হবে এবং নির্বাচন দিয়ে দিতে হবে। জনগনের নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় জনগনই তোমাকে সরাতে বাধ্য করবে।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ নেতার কথা বলে ওবায়দুল কাদের(আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) সাহেব। আরে নেতা তো একজন আমাদের বাংলাদেশে- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনিই একমাত্র নেত্রী যিনি এই দেশে দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারকে পরাজিত দেশে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখনো এখনো গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে, লড়াই করতে গিয়ে গৃহে অন্তরীন হয়ে আছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে বেআইনিভাবে সাজা দেয়া হয়েছে।”

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘‘ করোনার টেস্ট, করোনার টিকা সংগ্র,বিতরণ সব প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কীরকম তেলেসমতি কান্ড তারা ঘটিয়েছে এটা আপনারা নিজেরাই সব দেখেছেন। একজন স্বাস্থ্য মন্ত্রী আছেন যার প্রতিটি কথায় মিথ্যা ও জনগনের সঙ্গে প্রতারনামূলক কথাবর্তা। আজকে তারা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু করোনা নয়, তারা আজকে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলেছেন। এখন যদি কেউ হঠাত অসুস্থ হন, জরুরীভাবে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার পড়ে অন্য কোনো রোগেও হাসপাতালে আপনি কোনো চিকিতসা পাবেন না।”

‘‘ বাংলাদেশে এখন স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ নয়, বাংলাদেশে সমস্ত ক্ষেত্রে একটা চরম অরাজগতা, দুর্নীতি ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কারণ যারা দেশ চালাচ্ছে এখন, তারা দেশ চালানোর জন্য জনগনের দ্বারা নির্বাচিত হয়নি। ফলে কোনো জবাবদিহিতা নেই।”

রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গুতে মানুষজনের আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুবরণ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এরজন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন তিনি।

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘‘ এখানে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করবার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে, সুচতুরভাবে প্রথমে সংবিধানকে তারা কেটে কুঁটে এরকমের তাদের মতো করে করে নিয়েছে।পরে সমস্ত বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সকলকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে দলীয়করণ করেছে।আজকে আমাদের যে গণমাধ্য্যম আছে, সংবাদ মাধ্যম আছে তাদেরকেও তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।”

‘‘ আপনারা দেখেছেন এ্খন ওই ১৯৭৫ সালে বাকশাল হয়েছিলো তার আগে যেমন এক ব্যক্তির পূজোঁ চলছিলো আজকে আবার সেই একইভাবে এক ব্যক্তির পূজোঁ শুরু হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) পত্র-পত্রিকাগুলো যদি দেখেন তাহলে দেখবেন যে, কীভাবে আপনার সমস্ত গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আমরা আজকে সমগ্র দেশের যেটা দেখতে পারছি, আবার সেই পুরনো শ্লোগান তারা আবার নিয়ে এসেছে-এ্ক নেতা এক দেশ, এখন হচ্ছে যে, হাসিনার বাংলাদেশ। এরকম একটা তারা নিয়ে কাজ শুরু করেছে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ বিএনপির শাসনামলে একটা শ্লোগান উঠেছিলো এই মুর্হুর্তে দরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দাবি তুলেছিলো জামায়াতে ইসলাম, সমর্থন দিয়েছিলো এই আওয়ামী। জামায়াত-আওয়ামী লীগ মিলে দাবি তুললো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মেনে নিলেন। আজকে আমরা দাবি করছি, এই মুহুর্তে দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।”

‘‘ ওই নির্বাচন কমিশন বদলাবেন, সার্চ কমিটি, মার্চ কমিটি করবেন। সার্চ কমিটি-মার্চ কমিটি আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি, এই দেশের গণমানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে এই সরকারকে রেখে কোনো নির্বাচন করা যাবে না। সুতরাং জনগনের দাবি মেনে নিয়ে দয়া করে পদত্যাগ করুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, নিজেদেরকে ভালো রাখুন। নইলে দেশে যে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেই পরিস্থিতির জন্য আপনাদের ওপর দায়-দায়িত্ব্ বর্তাবে।”

মহানগর দক্ষিনের সভাপতি ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘‘মহানগর পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশ্যে আমি বলব, আমাদের উন্মুক্ত জায়গায় সভা-সমাবেশ-মানববন্ধন করার অনুমতি দিন। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।”

‘‘ আওয়ামী লীগ তার অফিসের সামনে সভা-সমাবশ করবে, তাদেরকে করতে দেবেন। আমাদেরকেও দিতে হবে। নইলে জনগন রাজপথেই নামতে বাধ্য হবে।”

মহানগর দক্ষিন করোনা হেলপ সেন্টার পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে ও মহানগর দক্ষিনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন ও মহানগর দক্ষিনের সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী বক্তব্য রাখেন।