বাহুবল উপজেলা প্রকৌশলীর অমানবিক কর্মকান্ডের ভয়ে অফিস করছেন না স্টাফরা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ০৭ ২০১৯, ১২:২৩

বাহুবল,হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বেআইনী আচরণ ও অমানবিক কর্মকান্ডের ভয়ে অফিস করছেন না প্রকৌশল অফিসের স্টাফরা।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বেলা ১১ টার দিকে সরজমিনে উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা যায় পুরো প্রকৌশল অফিস তালাবদ্ধ। প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ কোন স্টাফরাই অফিসে আসেননি।

তবে স্টাফদের অফিসের আশপাশে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে। বেলা ৩টার দিকে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করবে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে প্রকৌশল অফিসের কয়েকজন স্টাফ জানান, স্যারের খারাপ আচরনে আমরা ভয়ে অফিসে যাইনি। স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তিনি ক্ষেপেছেন। তাই আমরা অফিস করছি না।

অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, তিনি যে গরম কখন এসে আমাদের মারধোর শুরু করেন।

বেলা সাড়ে ১১ টা, অফিসে আসেননি বাহুবল উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, বুধবার (৬ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী হরিপদ দাসকে মারপিট ও অশ্লিল গালিগালাজের দায়ে তার অফিস থেকে আটক করে ইউএনও অফিসে নিয়ে আসে পুলিশ। আটকের দুই ঘন্টাপর মুচলেকার মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।

জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের স্টাফ হরিপদ দাস অফিসিয়াল কাজে প্রকৌশলীর অফিসে যান। এক পর্যায়ে হরিপদ দাসকে প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন। বিষয়টি তিনি স্টাফদের জানালে স্টাফগণ মিলে ইউএনও মোঃ জসীম উদ্দিনকে জানান। তিনি পুলিশ ডেকে অফিস কক্ষ থেকে প্রকৌশলীকে আটক করে ইউএনও অফিসে নিয়ে যান।

তখন প্রকৌশল অফিসের প্রায় সকল স্টাফই তার বিরুদ্ধে বেআইনী আচরণ ও অমানবিক কর্মকান্ডের লিখিত জবানবন্দী দেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার ওয়াহিদুল ইসলাম, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ হোসেন শাহ, স্টাফ জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশল অফিসের হিসাব রক্ষক মীর মাহবুবুল হক, শরীফুল হক, আব্দুল মান্নান খান, এসও ফিস, এমএলএসএস জাহাঙ্গীর আলম, এসএম সানোয়ার হোসেনসহ পনের জন।

তাদের জবানবন্দী শেষে প্রকৌশলীর জবানবন্দী নেয়ার প্রাক্কালে বাহুবল সদর ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই’র মধ্যস্থতায় অবশেষে মুচলেকায় মুক্তি দেয়া হয়।

নিজ অফিসের স্টাফদের সাথে বেআইনী অমার্জিত আচরণ তথা শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা, লঘু ত্রুটিতে বেতন কর্তন, প্রতিদিনই ১/২টায় অফিসে আসা, জরুরী কাজে ফোনে না পাওয়া, নেশাগ্রহণ, নামাজি স্টাফদের নামাজ আদায়ে বাধা ইত্যাদি গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়। প্রকৌশলীর চলমান আচরণে সেবাগ্রহীতারা অতিষ্ট হয়ে পড়েন।

এদিকে ইউএনও অফিসে ভ্রাম্যমান আদালত চলাকালে প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রায় দু ঘন্টা পর তার আচরণে দায়ে অনুতপ্ত হয়ে মুচলেকায় মুক্তি দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে স্টাফরা জানান, টাকা না দিলে কোন ফাইলেই তিনি স্বাক্ষর করেন না। টাকা দিলেই তিনি মাতালের মত স্বাক্ষর করতে থাকেন। তারা বলেন, তিনি রাত ২/৩টায় উপজেলা পরিষদে গাড়ী নিয়ে ডুকেন। তখন তার চোঁখ দুটি লাল হয়ে থাকে, দেখলে ভয় করে।

শুধু তাই নয় প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলার ঠিকাদারদের অভিযোগ।

জেলা ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক অভিযোগ করে বলেন, বাহুবলে যোগদানের পর থেকেই ঠিকাদারদের কাছে মোটা অংকের ঘুষ দাবী করে আসছেন প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার দাবী পূরণ না হলে ঠিকাদারদের বিভিন্নভাবে হয়রানী করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, তিনি একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। একজন সরকারী দায়িত্বশীল ব্যাক্তি হয়ে তিনি ইয়াবা ও মদ সেবন করে দিনের বেলা অচেতন হয়ে পড়ে থাকেন এবং রাতের বেলা মাতাল অবস্থায় প্রকল্প পরিদর্শন করেন।

জরুরী প্রয়োজনে দিনের বেলা তাকে কখনোই সাক্ষাতে কিংবা মোবাইল ফোনেও পাওয়া যায় না। তার আচার-ব্যবহারও অরুচিশীল।

সম্প্রতি এ নিয়ে ঠিকাদাররা একটি প্রতিবাদ সভাও করেন তারা। এ সময় বক্তারা প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে অনতিবিলম্বে বাহুবল থেকে প্রত্যাহারের দাবী জানান। অন্যথায় সাধারণ ঠিকাদাররা বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচির হুমকি দেয়। এছাড়াও গত ২৭ ফেব্রুয়ারী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রকৌশলীর অপসারণের দাবীতে কর্মবিরতী পালন করে।