বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষের সাথে উলামাদের আত্মার সম্পর্ক -মাওলানা শুয়াইব আহমাদ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ০৬ ২০২১, ২৩:১৭

 

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সহকারী মহাসচিব ও ইউকে জমিয়তের সভাপতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী স্কলার প্রিন্সিপাল মাওলানা শুয়াইব আহমদ বলেছেন, উলামা-মাশায়েখদেরকে বাদ দিয়ে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। দেশের ১৮ কোটি জনতার সাথে উলামায়ে কেরামের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। দেশ ও জাতির পক্ষে উলামায়ে কেরামের গৌরবময় ভূমিকা ও অবদানের ইতিহাস শত শত বছরের পুরনো। সেই বৃটিশ খেদাও আন্দোলন থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত উলামায়ে কেরাম দেশ ও জাতির কল্যাণে অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, উলামায়ে কেরামের শুধু ঈমান-আমল ও নামায-রোযার কথা বলেই শেষ করেন না, বরং আলেমরা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় ঐক্য, শান্তি, কল্যাণে সবসময় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে আসছেন। দেশবিরোধী যে কোন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে উলামায়ে কেরাম সবার আগে সরব হন। গণমানুষের অধিকার এবং সমাজে ন্যায়, ইনসাফ ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্যও উলামায়ে কেরাম সব সময় সোচ্চার। সুতরাং উলামায়ে কেরামকে বাদ দিয়ে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। জনগণের সাথে উলামায়ে কেরামের আত্মার সম্পর্ক আছে বলেই সাধারণ মানুষের স্বত:স্ফূর্ত সাহায্য-সহযোগিতায় হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসা পরিচালিত হয়।

প্রিন্সিপাল মাওলানা শুয়াইব আহমদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা মহামারিতে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছেন। ইউরোপের ভয়াবহ পরিস্থিতিতি তো আমি কাছে থেকেই দেখে এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ভাল। আমি মনে করি, এই সুফল উলামায়ে কেরামের দোয়া এবং দেশের হাজার হাজার মাদ্রাসায় কুরআন-হাদীসের জ্ঞানের চর্চা জারি থাকার বদৌলতেই হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে এখনো মসজিদে স্বাভাবিকবাবে মুসল্লীরা নামায পড়তে পারছেন না, প্রায় সকল দেশে এখনো কোন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। এখানে মসজিদগুলোতে মুসল্লীদের উপচেপড়া ভীড়, মাদ্রাসাগুলোতে কুরআন-হাদীসের তালিম জারি আছে। ওয়াজ-মাহফিলের ময়দানে তৌহিদী জনতার জোয়ার চলেছে। আমি মনে করি, আলেম-উলামাদের এসব দ্বীনি কর্মকাণ্ড ও দাওয়াতী মেহনতের বদৌলতে আমাদের দেশ করোনা মহামারিতে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি ভাল অবস্থানে আছে।

মাওলানা শুয়াইব আহমদ শায়খুল হাদীস আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী (রাহ.)কে স্মরণ করে বলেন, তিনি ছিলেন সমসাময়িক সময়ে শুধু সিলেট অঞ্চল নয়, বরং সারা দেশের জন্য এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। তিনি একাধারে দ্বীনের বহুমুখী খিদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। ইলমে নববীর মসনদে যেমন তিনি আজীবন খেদমত করে গেছেন, তাঁর হাতে হাজার হাজার আলেম গড়েছেন, তেমনি ইসলামী রাজনীতি, ঈমান-আক্বিদার আন্দোলন এবং দেশ ও জাতীয় স্বার্থে তিনি সোচ্চার ছিলেন আজীবন। তিনি আমাদেরকে থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর হাতে গড়া হাজার হাজার আলেম ও শাগরিদ তাঁর মিশন ও ভিশনকে এগিয়ে নিতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সুদূর ইউরোপ-আমেরিকার বুকেও আল্লামা হবিগঞ্জী (রাহ.)এর মিশন চলমান আছে।

গতকাল (৫ ফেব্রুয়ারী) শুক্রবার কুতুবুল আলম, শায়খুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী (রাহ.)এর ইশারা ও নামকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী (রাহ.)এর স্মৃতিবিজড়িত হবিগঞ্জ জেলাস্থ জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া উমেদনগর মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল মাওলানা শোয়াইব আহমদ এসব কথা বলেন।

মাওলানা শামসুল হক সাদী’র সভাপতিত্বে এবং ছাহেবজাদা মাওলানা তাফহিমুল হক হবিগঞ্জীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মাহফিলে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- দারুল উলূম দরগাহপুর সুনামগঞ্জের শায়খুল হাদীস আল্লামা নূরুল ইসলাম খান, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব, বি-বাড়ীয়া দারুল আরকাম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সাজেদুর রহমান, প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজীজ ও মাওলানা লুকমান সাদী প্রমুখ।