বাংলাদেশে ঢুকেই সন্তান প্রবস করছেন বৌদ্ধ নারীরা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ০৯ ২০১৯, ১৬:০৫

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় প্রাংসা সীমান্তে জিরোল্যান্ডে থাকা মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ২০৩ শরণার্থীকে বাংলাদেশে ঢুকিয়েছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরকান আর্মি।

গত শনিবার প্রথম দফায় ১৬৩ জন এবং দ্বিতীয় দফায় বুধবার ৪০ জনকে নিয়ে আসে আরাকান আর্মির সদস্যরা। এমন তথ্য জানিয়েছেন রুমা উপজেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, মিয়ানমারের শান, কাচিন ও আরাকানের বিভিন্ন স্থানে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। প্রধান সংঘর্ষস্থল হলো শান রাজ্যের পালিতওয়া এলাকা। সংঘাতময় পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রাণ বাঁচানোর জন্য মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ২০৩ শরণার্থীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে আরকান আর্মি। সংঘর্ষস্থল থেকে প্রায় তিন দিন হেঁটে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় আশ্রয় নেয় বৌদ্ধ শরণার্থীরা।

রুমা উপজেলার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার ভান লং বম বলেন, জিরোল্যান্ডে থাকা বৌদ্ধ শরণার্থীদের আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে রুমার চেইক্ষ্যংপড়ায় নিয়ে আসে। কি জন্য তাদের এখানে এনেছে আমরা তা এখনো জানতে পারিনি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে আসার পর বৌদ্ধ শরণার্থীরা খোলা জায়গায় অবস্থান করছেন। প্রচন্ড শীতে ভুগছেন তারা। তাদের খাদ্য সরবরাহ করছেন ওই এলাকার গরিব স্থানীয়রা। খাদ্য হিসেবে শরণার্থীরা দিনে ভাত, পাহাড়ি আলু ও কলাগাছের বাকলসহ বিভিন্ন লতাপাতা রান্না করে ক্ষুধা নিবারণ করছেন। অনেকটা একজনের খাবার চার-পাঁচজন মিলে ভাগ করে খাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনজন বৌদ্ধ নারী চেইক্ষ্যংপাড়ায় সন্তান প্রসব করেছেন।

এ ব্যাপারে রুমার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের মেম্বার সাংকিং বম বলেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা অনেকটা গার্ড দিয়ে বৌদ্ধ শরণার্থীদের বাংলাদেশে নিয়ে আসে। তাদের খাবার সরবরাহ করছে স্থানীয়রা। এরই মধ্যে কয়েকজন নারী বাংলাদেশে ঢুকেই সন্তান প্রসব করেছেন।

এ বিষয়ে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, রুমার চেইক্ষ্যংপাড়া সীমান্তে বিজিবি ও সেনা সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। তারা ফিরলেই আমরা শরণার্থীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম বলেন, আরাকান আর্মি গার্ড দিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের বাংলাদেশে নিয়ে আসার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার কাছে আরাকান আর্মির কোনো তথ্য নেই।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের রাখাইনের চারটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সশস্ত্র আরাকান আর্মি। ওই দিন ছিল দেশটির স্বাধীনতা দিবস। হামলায় বিজিপির ১৩ সদস্য নিহত হন। এ নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকাতে দেখা দেয় উত্তেজনা।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক সংঘর্ষের পর সেখান থেকে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। এবার মিয়ানমারের অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আসার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।