বজ্রপাত রোধে কংক্রিটের ঘর নির্মানের উদ্যেগ সরকারের

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ১০ ২০১৮, ০৭:৩৬

নতুন এক দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বজ্রপাত। দিন দিন বাড়ছে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫০ জন। এদের বেশির ভাগই ধান কাটা কৃষি শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষ; যারা উন্মুক্ত মাঠে কৃষি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে এরই মধ্যে ৮ জেলায় ‘লাইটেনিং সেন্সর’ বসানো হয়েছে।

একইভাবে হাওর-বাঁওড় ও উন্মুক্ত এলাকায় বিদ্যুতায়িত (আর্থিং) কংক্রিটের ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত দুর্যোগ প্রস্তুতি সংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বৈঠকের পর এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল যুগান্তরকে বলেন, ‘বজ্রপাত এখন দেশে এক ধরনের দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই বজ্রপাতে মানুষ মরছে। বিশেষ করে মারা যাচ্ছে হাওর-বাঁওড় এবং উন্মুক্ত স্থানে কৃষি কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। বজ্রপাতজনিত কারণে জানমালের ক্ষতি কমিয়ে আনতে এবং কৃষকদের দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করতে হাওরসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত এলাকায় আর্থিংসহ কংক্রিটের ঘর নির্মাণের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। পাশাপাশি মোবাইল টাওয়ারগুলোতে আর্থিং পদ্ধতি করা যায় কিনা সে ব্যাপারেও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বজ্রপাত প্রতিরোধের উপায়, তাপদহ মোকাবেলার প্রস্তুতি, পাহাড় ও ভূমিধস মোকাবেলা এবং বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়- বজ্রপাত রোধে মাঠের কৃষকদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় দেয়ার লক্ষ্যে হাওরসহ উন্মুক্তএলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আর্থিংসহ কংক্রিটের ঘর নির্মাণের জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে সুপারিশ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হবে যাতে তাদের টাওয়ারগুলোতে আর্থিং করার ব্যবস্থা করা গেলে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে। এর পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে বজ্রপাতে করণীয় সম্পর্কে লিফলেট বা পোস্টার ছাপানো ও বিতরণ করা হচ্ছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বজ্রপাতের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া বজ্রপাত রোধের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সারা দেশে প্রায় ৩৯ লাখ তালগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় আরও বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয় বৈঠক থেকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা, হাওর-বাঁওড় এলাকায় পশুখাদ্য মজুদ রাখা, সরকারি-বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবকদের সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা, জাতীয় দুর্যোগ তহবিলের অর্থনৈতিক কোড নম্বর বরাদ্দ দেয়া, পাহাড়ের সব অবৈধ মানুষকে সরিয়ে আনা এবং জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের দুর্যোগ কমিটিকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া ইত্যাদি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৬ সালে একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের ১ বৈশাখ থেকে এখন পর্যন্ত বজ্রপাতে ১৫০ জন মারা গেছেন। শুধু বুধবারই ১৩ জেলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১৪ জন। ঝড়-বৃষ্টির সময় এ বজ্রপাত হয়। এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে বজ্রপাতে চার দিনে ৮১ জন মারা যায়। এরপর ২০১৬ সালে ৩৮০ জন ও ২০১৭ সালে ৩০৭ জন মারা গেছে। বজ্রপাত প্রতিরোধে তৎপর হয়েছে আবহাওয়া অফিস। প্রথম ধাপে ‘লাইটেনিং সেন্সর’ লাগানো হয়েছে আট জেলায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, নওগাঁর বদলগাছি, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনার কয়রা ও পটুয়াখালীতে লাগানো এসব লাইটেনিং সেন্সরে পুরো দেশের চিত্র উঠে আসবে। ঝড়-বৃষ্টির সময় কোন জেলায় কখন বজ্রপাত হয়েছে বা কতবার বিদ্যুৎ চমকিয়েছে তার হিসাব পেতে এ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির লাইটেনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসানো হয়েছে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার পর বজ্রপাত নিরোধক ‘লাইটেনিং অ্যারেস্টার’ বসানোর চিন্তা করছে সরকার। অ্যারেস্টারের মাধ্যমে বজ্রপাত টেনে মাটির নিচে পাঠিয়ে দেয়া যাবে।