বইয়ের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ০৮ ২০১৮, ১৫:১৬

সিলেট থেকে রুহিন অাহমদ: নতুন বছর শুরু হলে শিশুরা বইয়ের আনন্দে মেতে উঠে।এখন শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বইয়ের আনন্দ এখন আর তেমন টা নেই।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থী ব্যাগ বহন করতে কষ্ট হয়, মা- বাবা পেটমোটা ভারি ব্যাগ নিয়ে পশে হেঁটে যাচ্ছেন- এমন দৃশ্য প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে। এত বই শিশুদের প্রয়োজন, নাকি এর পেছনে পুস্তক ব্যবসায়ীরা সক্রিয়, এ প্রশ্ন আমার জানা নেই। 

বোর্ডের বই ছাড়াও বেসরকারি স্কুলগুলোতে সহায়ক বইয়ের বাড়তি চাপে রয়েছে শিশু শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত তিনটির বাইরে আরও ছয় থেকে দশটি বই প্রায় সব বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়গুলোতে দেওয়া হয়।

বিভিন্ন (কিন্ডারগার্ডেন) খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বোর্ডের বাংলা,ইংরেজি, অঙ্ক-এ তিনটি বিষয়ের সঙ্গে সহায়ক হিসেবে ধর্ম, পরিবেশ-পরিচিতি, বিজ্ঞান, ওয়ার্ড বুক,
চিত্রাঙ্কন, বাংলা ও ইংরেজি হাতের লেখা শেখার, সাধারণ জ্ঞান, নামতা-গুণ-ভাগ-জ্যামিতি আছে এমন একটি
গণিত বই, ব্যাকরণ, গ্রামার, গল্প ও কবিতার এবং কম্পিউটার শিক্ষা সংক্রান্ত বই দেওয়া হয়ে থাকে।

তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে
বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, বিজ্ঞান ও ধর্ম—এ ছয়টি বোর্ডের বইয়ের সঙ্গে সহায়ক হিসেবে দেওয়া হয় মূলত ব্যাকরণ, গ্রামার,
কম্পিউটার, চিত্রাঙ্কন, দ্রুত পঠন ধরনের দুই থেকে ছয়টি বই। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে
এসব বইয়ের সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যায়।

স্কুলপড়ুয়া শিশু ও তাদের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, প্রতিদিন অনেক ক্লাস থাকে। প্রতিটি ক্লাসের জন্য বই, প্রতিটি বিষয়ের আলাদা ফিডব্যাক ও
ক্লাসওয়ার্ক খাতা সঙ্গে নিতে হয়। পরীক্ষার জন্য আলাদা খাতা তো আছেই। স্পেশাল স্টাডি প্রোগ্রামের বাড়তি বই ও খাতাও নিতে হয় মাঝেমধ্যে। স্কুল থেকেই সরাসরি কোচিংয়ে যায় অনেক শিশু, বইতে হয় সেসব বই-খাতাও।
নোট বই, গাইড বইও সঙ্গে নিয়ে আসে অনেকে। বই, খাতা, কলম, ডায়েরি, পেনসিল বক্স, জ্যামিতি বক্স, স্কেলেই ব্যাগ অনেক ভারী হয়ে যায়, টিফিন বক্স ও পানির বোতল তো আছেই।

স্কুলপড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থী মিজান জানায়, ব্যাগ বহন করতে করতে হাতে ফোসকা পড়ে যায়, পিঠে অনেক ব্যথা করে।রাতে ঘুমাতে অনেক কষ্ট হয়।

আরেক শিক্ষার্থী আসরাফুল হক জানায়,
বই বা খাতা না নিয়ে এলে শিক্ষকরা বকাবকি করেন, এমনকি এ কারণে মারধরও করেন বলে জানায় ছাত্রছাত্রীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, শিক্ষকদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলে জানা যায় । তাঁদের জানান , বই ছাড়া ক্লাস করা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীরা বই ছাড়া ক্লাসের পড়া বুঝে উঠতে পারে না। এসব বিষয়ে তারা কিছু বলতে পারবেন না।

১৮ বছর পর্যন্ত শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধির সময়। এ সময়টাতে শিশুদের হাড় ও মাংসপেশি অপরিণত ও
নরম থাকে। ভারী স্কুলব্যাগ নিয়ে বাচ্চাদের সিঁড়ি বেয়েও উঠতে হয়। এতে ঘাড় সামনে বা পেছনের দিকে কুঁজো হয়ে যায়। ভারী স্কুলব্যাগ বহন করার কারণে শিশুদের ঘাড়, পিঠ ও মাথা ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া এ কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যেতে পারে, এমনকি শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
দিনে দিনে শিক্ষার্থীদের ওপর বইয়ের চাপ
বাড়ছেই। এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থারই ত্রুটি। ঠিকঠাক সব কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বাড়তি বই। পুঁথিগত বিদ্যার ওপরই বেশি জোর দেওয়া হয়। তাই বয়সের তুলনায়
বেশি বই ছাত্রছাত্রীদের শুধু বহন করতেই হয় না, মুখস্থও করতে হয়। একরকম গেলানো হয় অনেক কঠিন বিষয়। আনন্দময় না হয়ে পড়াটা শিশুদের কাছে হয়ে ওঠে কষ্টকর কোনো কিছু। বেশি চাপ দিলে শিশুরা পড়াশোনার প্রতি
আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। নষ্ট হতে পারে সৃষ্টিশীল মেধা। ক্লাস, কোচিং, প্রাইভেট টিউটর, বাড়ির কাজ- এত চাপ সামাল দেওয়া শিশুর পক্ষে অনেক কঠিন।

কোনো কিছু চাপিয়ে দিলে তা শিশুর মনে
নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক অভিভাবকও বোঝেন, বাচ্চাদের ওপর বেশি বিষয়ের বই
চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু তার পরও বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে টিকে থাকতে তাঁরা উঠেপড়ে নামেন। আমরা ভুলেই যেতে বসেছি, পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিনোদন ও পর্যাপ্ত ঘুমেরও দরকার আছে।