প্রভাবশালী কবির মিয়ার বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে আব্দুল মালেকের সংবাদ সম্মেলন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ১৬ ২০১৯, ১৫:৫৮

এহসান বিন মুজাহির 

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের রামনগরের মৃত ছিদ্দেক আলীর ছেলে আব্দুল মালেক ওরফে কালা মিয়া। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন-আমার এলাকার ধনে-জনে প্রভাবশালী ব্যক্তি মৃত ছলিম উল্লাহর ছেলে মো. কবির মিয়া। তিনি এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। প্রশাসনের সাথে তার রয়েছে অবাধ মেলামেশা। তার সাথে আমার জমিজমা নিয়ে পূর্ব বিরোধ বিদ্যমান। এ বিরোধের কারনে আমার পরিবার আজ শেষ হতে চলেছে। মো. কবির মিয়া ক্ষমতার দাপটে আমার ও আমার দিনমজুর ছেলের বিরুদ্ধে একের পর এক কল্পিত মামলা দায়ের হচ্ছে। এতে নিঃশেষ হতে চলেছে আমার পরিবার। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি সকাল ৭.৩০ ঘটিকায় শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ ৫নং কালাপুর ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ মাইজডিহি (পাটান পাড়া) গ্রামের জনৈক রাসেল আহমদের বাড়ির সামনে থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে রফিক মিয়া, মো. বাদল মিয়া, জামাল খাঁ ও সাজ্জাদুর রহমানকে আটক করে মাননীয় আদালতে প্রেরণ করেন। যার মামলা নং-২০, তারিখ-১৭/০২/২০১৮। পরবর্তীতে ২২ ফেব্রæয়ারি সকাল ৭.৩০ ঘটিকার সময় আকষ্মিভাবে পুলিশ আমার দিনমজুর পুত্র আব্দুল মুহিত কিবরিয়াকে আমার বাড়ি হতে আটক করে নিয়ে যায়। আমি আটকের কারন জানতে চাইলে পুলিশ আমাকে জানায় তাকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হবে। পরে ২৩ ফেব্রæয়ারি ওই মামলায় (মামলা নং-২০) আমার পুত্রকে গ্রেফতার দেখিয়ে মাননীয় আদালতে প্রেরণ করা হয় এবং মামলার তদন্তকারী অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম ওই বছরের ২৩ আগস্ট মাননীয় আদালতে যে চার্জশীট প্রেরণ করেছেন তাতে ৬নং আসামী করা হয় আমার নিরীহ পুত্রকে। এরই মধ্যে আমার পুত্র আব্দুল মুহিত কিবরিয়া মাননীয় আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হবার পর ১৭ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী ও কন্যাদের নিয়ে সিলেটস্থ হযরত শাহজালাল (র.) মাজার শরীফ জিয়ারতে যায়। সেখান থেকে রাত অনুমান ৯.৩০ ঘটিকার সময় শ্রীমঙ্গল বাসট্যান্ডে এসে পৌছার পর বাসস্ট্যান্ড থেকে পুলিশ পুনরায় আমার ছেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। পরদিন জানতে পারি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে শ্রীমঙ্গল থানায় দায়েরকৃত অপর এক ডাকাতি প্রস্তুতি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ মামলা থেকেও জামিনের পর আরো একাধিক মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে। এমনকি সে সিলেটে তার কর্মস্থলে থাকাবস্থায়ও শ্রীমঙ্গল থানায় দায়েরকৃত মামলায় তাকে আসামী করা হয়। প্রভাবশালী মহলের রোষানলে শুধু আমার ছেলেই পড়েনি। আমাকে ও আমার পরিবারকে নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। আমাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার পায়তারায়ও লিপ্ত রয়েছেন কবির মিয়া। চলতি বছরের ৫ ফেব্রæয়ারি আকষ্মিক কবির মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন আমার মৌরসী (আমার মায়ের নামে রেকর্ডকৃত) ৪৫ শতক জমি জোরপূর্বক দখল করার মানসে আমাদের জমিতে প্রবেশ করে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে আমি মাননীয় আদালতে গিয়ে পিটিশন মামলা দায়ের করলে মাননীয় আদালতের নির্দেশে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বিবাদী কবির মিয়াকে মাটি কাটতে নিষেধ করেন। এতে প্রচন্ডভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কবির মিয়া। এ ঘটনার পরদিনই কবির মিয়া আমার বিরুদ্ধে ৬নং আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয়ে আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ২০১৪ সালে আমার স্ত্রী তার সমিতি থেকে উত্তোলিত টাকা দিয়ে আমার প্রতিবেশী কবির মিয়ার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাছুর ক্রয় করেছিলেন। প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর ইউনিয়ন পরিষদে তিনি তার অভিযোগে জানান, তিনি ওই বাছুরটি আমাকে বর্গা দিয়েছিলেন। এ সংক্রান্ত গত ১২ মার্চ বিচার অনুষ্ঠিত হয়। বিচারে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা উভয় পক্ষের কথাবার্তা শুনেন। মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয় তাঁর রায়ে আমাদের সমঝোতা করে দেন। রায়ে তিনি উল্লেখ করেন, কবির মিয়া বাছুরটি বাগি দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করলেও ভাগি দেয়ার সময় কোন সাক্ষি রাখেননি। এমনকি কোন ব্যক্তির জবানবন্দিতে ভাগির বিষয়টি প্রমাণ হয়নি। তথাপিও সমঝোতার স্বার্থে তিনি আদেশ দেন স্থানীয় মেম্বার মো. আরজু মিয়ার মধ্যস্ততায় গাভী আগামী সাড়ে তিন মাস পর বিক্রি করে অর্ধেক টাকা আমি যেন কবির মিয়াকে দিয়ে দেই। আমি চেয়ারম্যান মহোদয়ের এ রায় মাথা পেতে নেই। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান মহোদয়ের রায় উপেক্ষা করে ২১ এপ্রিল এ বিষয়ে কবির মিয়া বাদি হয়ে মৌলভীবাজার আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটি মাননীয় আদালত তদন্তের জন্য শ্রীমঙ্গল থানায় প্রেরণ করলে এসআই মো. হাফিজুর রহমান আমাকে ও আমার স্ত্রী বদরুন্নেছাকে দোষী সাব্যস্থক্রমে একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করেন। তিনি এ বিষয়ে আমার সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ করেননি বা আমার বাড়িতে গিয়েও তদন্ত করেননি। পরে মাননীয় আদালত থেকে আমার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হলে পুলিশ আমাকে ও আমার স্ত্রীকে চলতি বছরের ২ জুলাই গ্রেফতার করে। তখন আমি মামলার বিষয়ে জানতে পারি। আমাদের গ্রেফতার করার একদিন পর আমাদের জামিন দেন মাননীয় আদালত। এদিকে পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করার পরপরই ওইদিনই রাত ৮টার দিকে কবির মিয়া, তার ভাই মঈনুদ্দিন ও কবির মিয়ার স্ত্রী সাকেরা আক্তার খুশবা আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর এবং স্টিলের আলমারি ভেঙ্গে ফেলে। তারা আলমারিতে রক্ষিত নগদ ৫০ হাজার এবং ১ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়। এ সময় আমার পুত্রবধু নাজেয়া আক্তার (নাজু) তার শিশু সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। আমি মাননীয় আদালত থেকে ৪ জুলাই জামিনে মুক্ত হবার পর বাড়িতে এসে আমার বাড়িতে হামলার ঘটনা শুনে মাননীয় আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করি। এ মামলা বর্তমানে তদন্তনাধীন। বর্তমানে কবির মিয়া, তার ভাই মঈনুদ্দিনসহ তাদের পরিবারের লোকজন আমাকে আমার বাড়ি থেকে বিতাড়িত, আমার সিলেটে কর্মরত পুত্রকে আরো মামলা দিয়ে হয়রানী, আমাদের জমিজামা জোরপূর্বক দখল করে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়তই হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করে চলেছে। বাড়িতে আমি, আমার স্ত্রী বদরুন্নেছা, পুত্রবধু নাজেয়া আক্তার (নাজু) এবং দুই শিশু নাতিকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনানিপাত করছি। যে কোন সময় আমাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তিনি আরও বলেন-আমি একজন সাধারণ দিনমজুর। আমার বয়স ৫৫ বছর। আমার পুত্র আব্দুল মুহিত কিবরিয়াও একজন দিনমজুর। তার বয়স ২৫ বছর। কখনো সে রাজমিস্ত্রী, কখনো গাড়ির হেলপার হিসেবে কাজ করে আমার পরিবার পরিচালনা করে আসছে। সে কাজের জন্য সিলেট মহানগরীতে অবস্থান করে। সে যা আয় করে তা দিয়ে আমার পরিবারের যেন ‘নুন আনতে পান্তা পুরায়’ অবস্থা। কাজেই আমি অসহায় পরিবারকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই। হয়রানি মুক্ত থাকতে চাই। আমি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে কবির মিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক।