জ্ঞান অর্জনে সফরের মাহাত্ম্য: ইতিহাস ও ঐতিহ্য

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ০৪ ২০২০, ১৯:২৬

।। মুহাম্মদ ইমরান ।।

পৃথিবীর সর্বপ্রথম মাদরাসা প্রমাণ্যসূত্র হিসেবে বেশির- ভাগ মানুষ “আসহাবে সুফফা “কে জানে।তবে এসূত্র পৌঁছতে পারিনি বিশুদ্ধতার দ্বারপ্রান্তে। ঐতিহাসিকগণ “দারুল আরকাম” কে প্রথম মাদরাসা হিসেবে তুলে ধরে ইতিহাসের পাতায়। ফলে ঐতিহাসিক সূত্রে “সুফফা “এ গৌরবের অধিকারি হয়নি।”দারুল আরকাম” এটি মক্কা মোকাররমার একটি নির্জন প্রান্তরে ছোট্ট কুটির ছিল।যা সাফা ও মারওয়া পর্বতের মাঝখানে অবস্থিত ছিল।”দারুল আরকাম”তৎকালীন অবকাঠামোগত অবস্থা মসজিদে হারামের সীমানা বাড়ানোর পূর্ব পর্যন্ত সংরক্ষিত ছিল।

কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকরূপে নিশাপুর শহরেই ইসলামী ইতিহাসের সর্বপ্রথম বিদ্যাপীঠ স্থাপিত হয়। ‘মাদরাসায়ে বাইহাকিয়া ‘নামক এই শিক্ষাকেন্দ্রেই ইমামুল হারামাইন (প্রকৃত নাম আব্দুল মালেক। উপাধি জিয়াউদ্দীন) শিক্ষালাভ করেন।ইবনে খাল্লিকান অনেক তত্ত্ববিশারদ মনে করেন যে,বাগদাদের ‘মাদরাসায়ে নেযামিয়া(যার প্রতিষ্ঠাতা নেযামুল মুলক,প্রকৃত নাম হাসান ইবনে আলী।) ‘ইসলামের সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু যথেষ্ট তত্ত্বানুসন্ধানের পর এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত, বাগদাদ নয়, নিশাপুরই এই গৌরবের অধিকারী। মাদারাসায়ে নিযামিয়া যখন অস্তিত্বই হয় নি, তখনো নিশাপুরে বড় বড় প্রসিদ্ধ কয়েকটি মাদরাসার প্রমাণ ইতিহাসে পাওয়া যায়। উল্লেখিত বাইহাকিয়া মাদরাসা ব্যতীত মাদরাসায়ে সাদিয়া নাসরিয়া -যা সুলতান মাহমুদের ভাই নসর বিন সবুক্তগীন প্রতিষ্ঠিত -ও অন্যান্য অসংখ্য মাদরাসার উল্লেখ বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে রয়েছে। এজাতীয় দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র দ্বারা ইসলামী ইতিহাসের পাতায় চিরভাস্বর হয়ে আছে নিশাপুর শহর।
প্রাচীন কালে এসব মাদরাসায় পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসত জ্ঞানপিপাসু শিক্ষার্থিরা। সেসময় জ্ঞান অর্জনের জন্য সফর ছিল অতি সাধারণ ব্যাপার।আল্লামা ইবনে খালদুন বলেন :জ্ঞানী ও মহাপুরুষের সাহচর্য থেকে উপকার ও গুণাবলি লাভ করতে হলে এবং সর্বপরি জ্ঞান অর্জন করতে হলে দেশভ্রমণ একান্তই অত্যাবশ্যকীয়।

সে সময় শিক্ষার রীতি ছিল শিক্ষক ছাত্রদের সামনে জ্ঞান -বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশদ ও বিস্তারিত আলোচনা করতেন, এবং সমবেত ছাত্ররা তা লিপিবদ্ধ করে নিতেন। শিক্ষকদের এ জাতীয় আলোচনার লিখিত সংরক্ষণকে বলা হত ‘তালিকাত ‘

এছাড়াও বড় বড় জ্ঞানী ও আলেমদের দরসগাহে এই নিয়ম ছিল, দরসে সম্ভাবনাময় ও মেধাবী একজন ছাত্র নির্বাচন করা হত, যার দায়িত্ব হত শিক্ষকদের দরস সমাপ্তির পর পূণরায় দরস দান করা।এ নিয়মের প্রচলন ছিল, যাতে শিক্ষকের বর্ণনা, আলোচনা ও পর্যালোচনা সকলের বোধগম্যরূপে বিশদভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়।যিনি ছাত্রদের মাঝে এই স্থান অধিকার করতে সক্ষম হতেন, তাকে বল হত ‘মঈদ ‘।

এছাড়াও ইমাম আযম আবু হানিফার শিক্ষা ও পাঠদান পদ্ধতি ছিল ব্যতিক্রম।তিনি ছাত্রদেরকে বর্তমান যুগের ন্যায় গতানুগতিক পড়াতেন না,বরং ইলমী আলোচনা অনুশীলন ন্যায় পাঠদান করতেন। যে মাসায়ালাটি আলোচনাধীন হতো, তা তিনি ছাত্রদের সামনে তুলে ধরতেন এবং এ বিষয়ে শারঈ নির্দেশ সম্পর্কে আলোচনা -পর্যালোচনা করতেন, ব্যাপক পর্যালোচনা হতো।প্রত্যেক ছাত্রই নিজ নিজ মত উপস্থাপন করতেন।কিয়াসের বিষয়ে ছাত্রগণ তাঁদের পূর্ণ অধিকার পেতেন।

ইমাম মুহাম্মদ র.থেকে বর্ণিত যে,এসব ছাত্র ইজতিহাদে তাঁর বিপরীত মতও দিতেন, এমনকি দীর্ঘ সময় আলোচনা-পর্যালোচনা ও তর্ক-বিতর্কে মজলিসে শোরগোল লেগে যেত।সুতরাং সার্বিক দিকের উপর গভীর চিন্তা ও পর্যবেক্ষণের পর ইমাম আযম আবূ হানিফা র.নিজের মতামত পেশ করতেন।যা সে ইলমী পর্যালোচনা ও অনুশীলনের ফলাফল এবং খুবই বিশ্লেষণমূলক ও সন্তোষজনক হতো।

এধরণের আলোচনা ও পর্যালোচনা ছাত্র ও শিক্ষক উভয়ের জন্যই অত্যন্ত ফলদায়ক প্রশিক্ষণ।এতে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ই সমপরিমাণ উপকৃত হতেন। এপদ্ধতিতে শিক্ষাদানের কারণে তিনি পুরো জীবন শিক্ষার্থিই থেকে যান এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং চিন্তাধারা উপর্যুপরি উন্নতির সিঁড়ি পার হয়ে যেতে থাকে।

সময়ের পালাবদলে শিক্ষারীতি বা সাধারণ পাঠ্যাবস্থার প্রতিষ্ঠানিক রূপ বর্ধিত হয়েছে ক্রমান্বয়। কিন্তু জ্ঞানার্জনের জন্য সফরের আবশ্যকীয় গুরুত্বে কখনো ব্যাঘাত আসেনি।সফর ইলম বা জ্ঞানর্জনের মৌলিক একটি দিক।

যদি কোরআনে উদ্দেশ্যের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে সফর হল জ্ঞান অর্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম।
আল্লামা ইকবাল বলেন :
কোরআনের আশু উদ্দেশ্য হলো প্রকৃতিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ দ্বারা মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা জাগিয়ে দেওয়া,যাতে প্রকৃতি তার কাছে প্রতীক বলে প্রতীয়মান হয়।তবে প্রত্যক্ষবাদী মনোভাবই হচ্ছে কোরআনের প্রধান লক্ষণীয় বিষয়।এই মনোভাবই কোরআন আনুসারীদের মনে বাস্তবের প্রতি করেছিল গভীর শ্রদ্ধার সৃষ্টি।তার ফলেই পরিণামে তারা হয়েছিল আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা।
কোরআনের বর্ণিত আয়াতের সঙ্গে ইকবালের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে ফলাফল এদাঁড়ায় সফর ব্যতিত কোরআনে তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করা অসম্ভব।
আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন :
قل سيرو في الارض فانظروا كيف كان عاقبة الذين من قبل .
قل سيرو في الارض فانظروا كيف بدأ الخلق
কোথাও عاقبة المكذبين কোথাও عاقبة المجرمين
ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে সম্বোধন করেন।

মূলত দু’টো শব্দকেই এখানে উদ্দেশ্য سيرو এবং فانظرو।
এবং কোথাও افلم কোথাও اولم শব্দ দ্বারা আল্লাহ পাক স্বীয় বক্তব্য আরো দৃঢ় করেন।

মাওলানা আব্দুল মালেক হাফিঃবলেন :”বস্তুত সফর হচ্ছে অন্যান্য জাতির মাঝে মুসলিম উম্মাহর জাতীয় বৈশিষ্ট, বিশেষত আমাদের পূর্ববতিগণ এক্ষেত্রে অনেক অগ্রগামী ছিলেন। তাই মুসলিম উম্মাহর উল্লেখযোগ্য ইতিহাস হচ্ছে শুধু সফরের ইতিহাস, কখনো হিজরতের জন্য, কখনো জিহাদের জন্য, কখনো দাওয়াতের জন্য,কখনো হজ্জের জন্য,আবার কখনো ইলমের জন্য। স্থান ও সময়ের আয়তনে সেসব সফর হতো এত দীর্ঘ এবং কষ্টপূর্ণ যার নযির অন্য জাতির ইতিহাসে খুব একটা নেই। এর মাঝে আবার রয়েছে স্বতন্ত্রভাবে ইলম অর্জনের দীর্ঘ সফর।”
ইমামা আবূ হানিফা উস্তাদ ইমাম শাবী কে জিজ্ঞেস করা হয়ে ছিল আপনি এত ইলমের অধিকারি কিভাবে হলে উত্তরে তিনি বলেন :
১/বি নফইল ইতেমাদ [কারো উপর নির্ভর করিনি]
২/বুকূরিন কা বুকূরিল গুরাব। [কাকের মতো ভোরে কা কা করেছি]
৩/অাস-সাবরি কা সবরিল হিমার
[গাধার মতো সবর করেছি]।
এবং অাস-সাইরি ফিল বিলাদ [ বিভিন্ন শহরে সফর করা ] অর্থাৎ আমি ইলমের অন্বেষায় এশহর থেকে অই শহরে গমন করেছি।

মাওলানা আব্দুল মালেক হাফিঃ আরো বলেন :
“এছাড়াও সফর ও সফরনামার ভিন্নকিছু তাৎপর্য রয়েছে।কারণ সফর ও সফরনামার মাধ্যমেই সংরক্ষিত হয় যুগ ও জাতি এবং সময় ও সমাজের বিস্তারিত বিবরণ। তাতে যেমন রয়েছে দ্বীনি ও ইলমী বহু প্রসঙ্গ তেমনি রয়েছে সমাজিক,ভৌগলিক,রাজৈনতিক,
অর্থনৈতিক,সাংস্কৃতিক বিভিন্ন প্রসঙ্গ।”
উল্লেখিত মন্তব্যের প্রতিচ্ছবি ইমাম আবূ হানিফা :

আল্লামা মাক্কী র.বলেন, ইমাম আযম আবু হানিফা র.শুধু বসরাতে দশবার ইলমী সফর করেছেন।তিনি ১৩০হিজরি থেকে ১৩৬হিজরি পর্যন্ত মক্কা শরীফে অবস্থান করেছেন। এসময় মক্কা শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস রা.এর শাগরিদ এবং মদীনা শরীফে হযরত উমর রা.এর শাগরিদ থেকে ইলমে হাদীস শিক্ষা করেন।

এছাড়া সফরকালে তিনি তাঁর ফাতওয়ার প্রতিবাদ ও সমালোচনা শুনতেন।উত্থাপিত অভিযোগ দূরীভূত করতে সচেষ্ট হতেন এবং কোথাও ভুল-ক্রটি রয়েছে তা অবহিত হতেন।তাছাড়াও সফরে তিনি আরও উপকৃত হতেন।যেমন তাঁর মেধাশক্তি প্রবৃদ্ধি ও প্রসার,বিভিন্ন শহর ও নগর সম্পর্কে অজানা বিষয় জানা হতো। এঅবশ্যম্ভাবী ফলশ্রুতি এই যে,ফিকহ এবং শারঈ আহকামের জ্ঞান আহরতি হতো।

সফরকালে তিনি ইলম ফিকহ সম্পর্কিত বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছেন। মক্কা ময়াযযামার, মদীনা তাইয়্যেবা ও আরব বদ্বীপের অপরাপর শহরেও বিতর্ক অনুষ্ঠিত হতো এবং তাতে ফিকহের চর্চা হতো অত্যন্ত জাকঁজমক ও কোলাহলপূর্ণভাবে।প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয় মতের স্বপক্ষে দলীল অবহিত ছিলেন না।এতে কিয়াসের নতুন ধ্যান-ধারণার প্রসার ঘটতো।সাহাবায়ে কিরামের যে সব ফাতওয়া সম্পর্কে তিনি মোটেও জানতেন না, তা তিনি জানতে পারতেন।
অন্যত্র ইমামে আযম আবু হানিফা রহ:বলেন
الحكايات عن العلماء ومحا سنهم أحب إلي من كثير من الفقه، لأنها آداب القوم وأخلاقهم
এর স্বপক্ষে তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন
لقد كان في قصصهم عبرة لأولى اللألباب

ঐতিহাসিক পরিব্রাজকদের তীক্ষ্ণ দূরদর্শি মন্তব্যগুলো আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্য হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
ইবনে বতুতা যার পদচারণা সূদূর আরব থেকে বাংলার সিলেট নগরী পর্যন্ত পড়েছে। যিনি হযরত শাহ্ জালালের সাক্ষাতে আসেন।বাংলাদেশ ভ্রমণঃতিনি উনার বইয়ে লিখেন,
“টানা তেতাল্লিশ রাত সাগরে কাটিয়ে অবশেষে আমরা বাংলাদেশ পৌছালাম। সবুজে ঘেরা বিশাল এক দেশ, প্রচুর চাল পাওয়া যায়। অন্য সব জিনিষও এত সস্তায় পাওয়া যায় সে দেশে যে এরকম আর কোথাও দেখি নি। তবে দেশটির আর সবকিছু হতাশাব্যাঞ্জক। আফগানিস্তান লোকেরা দেশটিকে বলে “প্রানপ্রাচুর্যে ভরা জাহান্নাম।”
আল বেরুনী “ভারততত্ত্ব “লিখতে গিয়ে বলেন :
“হিন্দুদেরকে সম্যকভাবে বোঝা আমারই পক্ষে খুব কষ্টকর হয়েছে, অন্য কারুর ত কথাই নাই,যদি না আল্লাহর অনুগ্রহ তাকে ইচ্ছামত ভ্রমনের স্বাধীনতা না দেয়, যে স্বাধীনতা আমার অদৃষ্টে ছিল না,কারণ কোনো কাজই আমার ইচ্ছা ও সুবিধামত সম্পন্ন করার সুযোগ ও ক্ষমতা আমার ছিল না।”
এছাড়া ঐতিহাসিক এবং সমাজতাত্ত্বিক ইবনে খালদুন তো সর্বমহলে সমাদৃত।

সময়ের আবর্তনে সফর কেন্দ্রিক জ্ঞান অর্জন পুরাতন ঐহিত্য হিসেবে আমাদের কাছে বেশ মানানসই।কিন্তু প্রতিষ্ঠানিক চার দেয়াল-ই বর্তমান সময়ে আমরা জ্ঞানার্জনের জন্য যথার্থ মনে করি।বর্হিবিশ্বে ইলম অর্জনের জন্য সফরের বিষয়কে এখন বিস্ময়ান্বিত চোখে দেখে অনেক নাদান।অনেকে অনুযোগ স্বদেশের ভূমি ছেড়ে বিদেশ যাওয়া এখন নিষ্প্রয়োজনীয় কাজ। অনেকে মাযহাব মসলকের দোহায় দেয় রুখতে চাই নানা গোমরাহির টালবাহানা দেখিয়ে।
আল্লামা শিবলী নোমানী গাজ্জালী রা.সম্পর্কে বলেন :ঐতিহাসিক ভাবে যদি দেখি দার্শনিক ইমাম গজ্জালী প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের পর তার জ্ঞানার্জনের অধম্য স্পৃহা শান্ত করতে পারছিলেন না।তখন তিনি উচ্চশিক্ষার দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। অথচ তৎকালে ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান,নতুন নতুন উদ্ভাবিত শাস্ত্র ও কলাকৌশল ব্যাপকভাবে চর্চিত ও সমাদৃত হচ্ছিল ;শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে পন্ডিতবর্গ অবস্থান করে জ্ঞান প্রসারে নিয়োজিত ছিলেন ;স্থানে স্থানে যদিও শিক্ষাকেন্দ্র ও বিদ্যাপীঠ গড়ে উঠেছিল ;কিন্তু এসব কিছু ছাপিয়ে ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্ররূপে যে দুটি শহর ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল, তা হল নিশাপুর ও বাগদাদ।সেখানে যাওয়ার অধম্য স্পৃহা-ই গাজ্জালী রা.কে প্রলুদ্ধ করেছিল।

সম্প্রতি মিশরে AL Azhar University যাওয়ার পরিকল্পনা বিগত বছর দু’য়েক আগের। তবে কোন লিগ্যাল ওয়েতে যাওয়ার সুনিশ্চিত পন্থা আজ তৈরি হয়নি আমার। তাই সাময়িক দোদুল্যমানার মধ্য দিয়ে সময় যাচ্ছে।
কিন্ত হাতাশা বা নৈরাশ্য মনোভাব সম্পূর্ণ মুক্ত আমি।বিকল্প ব্যবস্থার গলি-ঘুপছিতে ঘুরছি এখনো।নৈরাশ্যতা ছেড়ে বিকল্প পথে ইলমের এসুদীর্ঘ সফরে জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টা উত্তম। যেটা ইবনে খালদুন মতো মহান মনীষী করেছেন। তিনি ১৩৮২খিস্টাব্দের শেষের দিকে তিউনিস ত্যাগ করেন মিশরের উদ্দেশ্যে। ইবনে খালদুন তিনি তাঁর আল মুকাদ্দিমায় মিশরের সভ্যতা -সংস্কৃতি সম্পর্কে যে সপ্রংস মনোভাব প্রকাশ করেছেন তা শুধু মুখের কথা নয়, তাঁর অন্তরেও এদেশটির প্রতি এ গভীর আকর্ষণ বিরাজ করছিল।তিনি সেখানেই আশ্রয় নেবার চেষ্টা করলেন। অথচ সেখানে যাবার জন্য তাঁর ন্যায় মহৎ ব্যক্তির পক্ষেও হজ্জব্রত অজুহাত সৃষ্টি ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। কারণ মিশরের কথা বললে তিনি অনুমতি পেতেন কিনা সন্দেহ। পরে সেখান থেকে ১৩৮৩খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তিনি কায়রো যান।সেখানে পৌঁছেই তাঁর মনে হয় তিনি যেন এক নতুন জগতে প্রবেশ করেছেন। কায়রো সম্পর্কে তাঁর যে ধারণা ছিল,তা তিনি দূর থেকে জানা ও লোক মুখে শোনা বিষয়দির দ্বারা গড়ে তুলেছিলেন ;কিন্তু বাস্তব উপস্থিতি সে ধারণাকে ছাড়িয়ে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছিল।উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা ও স্পেনের বহু নগরী তিনি দেখেছেন ;কিন্ত কায়রোর সাথে এদের কারোর কোনো তলনাই চলে না।এর বিস্তৃত বিপনিকেন্দ্র,এর শিক্ষার্থিমুখর বিচিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি নীলনদের বদান্যতা সৃষ্ট এর মনোরম প্রকৃতিক শোভা ইবনে খালদুনের মনে এক অদ্ভূদ আবেগের সৃষ্টি করেছিল।সবশেষ যে ইবনে খালদুন হজ্জব্রত অজুহাত মিশরে এসেছিলেন তিনি পুরো জীবন কেটে দিলেন। কখনো বিচারক বা কখনো শিক্ষকতার মতো মহত্ব পেশার মধ্য দিয়ে।
সুতারাং সফরের ব্যাপ্তিতে ও প্রাপ্তিতে কোন জাতি মুসলিম উম্মাহর সমকক্ষ বা কাছাকাছি হতে পারবেনা।