পাকিস্তানে ইসলামপন্থী রাজনীতির সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ২৩ ২০২২, ২২:৪৪

সৈয়দ শামছুল হুদা: পাকিস্তানে ইমরান খানের পতনের পর যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, পাকিস্তানের ভিতরে এবং বাহিরে পাকিস্তানিদের মধ্যে যে রাজনৈতিক সচেতনতার চিত্র সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, তাতে এটা আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আগামীতে পাকিস্তানে আলেম-ওলামাদের নেতৃত্বে যে ধারার ইসলামী রাজনীতি চলমান ছিল তা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

মাওলানা ফজলুর রহমান সাহেবের সর্বাত্মক সহযোগিতায় শাহবাজ শরীফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো যে রাজনৈতিক সুবিধা নেবে তার অনেকটা দায়ী উনাকে গ্রহণ করতে হবে। ইমরান খানের নির্বাচন যতটাই প্রশ্নবিদ্ধ হোক না কেন সেটাকে যদি তার মেয়াদ পূর্ণ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হতো তাহলে মাওলানা ফজলুর রহমান এর দলের জন্য ভালো হতো। এভাবে ইমরান খানকে পতনের সম্মুখীন করে পাকিস্তানিদেরকে ক্ষুব্ধ করে তোলা হয়েছে।

ইমরান খান সরকার থেকে সরে যাওয়ার পর তার প্রতিটি সমাবেশে যে পরিমাণ লোক সমাগম হচ্ছে, যেভাবে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছ, যেভাবে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে, এটা বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এবং তার জোটের সকল দলের জন্য বিশেষভাবে জমিয়তের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

শাহবাজ শরীফ ও বিলাওয়াল ভুট্টোদের হারাবার কিছু নেই। তারা আদর্শ, নীতি-নৈতিকতার কোনো ধার ধারে না। তারা যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়াটাকেই বড় অর্জন মনে করেন। কিন্তু একজন আলেম সেটা করতে পারেন না। তার কাছে ক্ষমতার চেয়ে আদর্শ অনেক বড় কিছু। আদর্শের পতন ঘটলে একজন আলেমের নৈতিক পতন ঘটে। ইমরান খান পাকিস্তানের নতুন প্রজন্মের সামনে নতুন করে যে আজাদী স্লোগান তুলতে সক্ষম হয়েছেন, বিশেষ করে পাশ্চাত্যের গ্লানিমুক্ত তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন এটাকে পাকিস্তানিরা অন্তর থেকে গ্রহণ করেছে ‌।

ইমরান খান আগে কি করেছেন সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু ক্ষমতায় এসে ইমরান খান পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থায় পবিত্র কোরআনকে শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছেন। পাকিস্তানের জাতীয় শিক্ষানীতিতে সিরাতুন্নবী অবশ্যপাঠ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মকে ইসলামী ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় নতুন করে গড়ে তোলার জন্য তুরস্কে যে সকল ড্রামা প্রচারিত হয়েছে তা পাকিস্তানের জাতীয় মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারের মাধ্যমে একটি নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠতে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন, এটা অনেক কিছু।

ঈমান-আকিদার সুরক্ষায় আলেম-ওলামাদের সর্বাধিক ভূমিকা থাকলেও রাজনৈতিক ময়দানে মুসলমানদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠায় মুসলিম লিডারদের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। একজন ইমরান খান পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, তাদের পরিবেশে বড় হয়ে, বর্তমানে পাকিস্তানের মানুষের সামনে নিজেকে একজন মুসলিম হিসাবে যেভাবে উপস্থাপন করছেন এটাকে কোনো অবস্থাতেই অবহেলা করা যায় না। এরকম জাতীয় মুসলিম লিডারদের দাঁড়াই মুসলমানদের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেক কিছু করা সম্ভব, যেটা একজন আলেমের পক্ষে কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়।

ইমরান খান পতনের আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ডাক দিয়েছিলেন। শাহবাজ শরীফকে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ করে না দিয়ে মাওলানা যদি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণাকে লুফে নিতেন সেটা অনেক ভালো হতো। এখন তিনি জনগণের বিশাল একটি অংশের আস্থা হারিয়েছেন শাহবাজ শরীফের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হয়ে। আগামী নির্বাচনে তিনি কার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবেন? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা জোর দিয়ে বলা যায়, যদি সামান্য সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে ইমরান খান বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসবেন।

জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হলে ইসলামী রাজনীতির দোহাই দিয়ে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যাবে না। জমিয়তের ৪টি মন্ত্রীত্ব পেলেও আমি মনে করি এই অর্জন বড় অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। যে কোনো কারণেই হোক ইমরান খান এখন তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মানুষ তার পক্ষে রাস্তায় নেমে এসেছে। এ জনগোষ্ঠী আলেম রাজনীতিবিদদের ভালো চোখে দেখছে না।

শাহবাজ শরীফের গোলামি রাজনীতির দায় ইসলামপন্থীদেরকেও নিতে হবে। এটাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি। আমেরিকাকে খুশি করার জন্য তারা আফগানিস্তান বিরোধী অবস্থান নিতে দ্বিধা করবে না। এর প্রমাণ তারা ইতিমধ্যেই দিয়েছে। শাহবাজদের ক্ষমতায়ণে শুধু পাকিস্তানেরই ক্ষতি নয় আফগানিদেরও ক্ষতি হবে। আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের সহায় হোন।

২৩.৪.২০২২