পণ্যবাহী ট্রাকে ঢাকা ফিরছে শত শত মানুষ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ২৬ ২০২০, ১৬:২২

ঢাকার ধামরাইকে বিসিক শিল্পনগরী ঘোষণার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত কয়েকশ’ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। কয়েক লাখ শ্রমিক জীবিকার সন্ধানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধামরাইয়েত বিভিন্ন কলকারখানায় কাজে নিয়োজিত ছিল এবং বেশিরভাগই কারখানার আশপাশের বাড়ি ভাড়া করে থাকেন। করোনাভাইরাসের শুরুতে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় বেশিরভাগ শ্রমিকই ধামরাই ছেড়ে নিজ বাড়ি চলে যান। কিছুদিন পূর্বে কারখানা খোলার নামে এসব শ্রমিকদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। এখন আবারও কারখানা খোলার খবরে তারা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা, ভ্যান, মাছের ট্রাক ও সবজির ট্রাকে করেও বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকটা ‘যুদ্ধ’ করে ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করছেন এসব শ্রমিকরা।

কামাল উদ্দিন রমজানের প্রথম সেহরি খেয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ধামরাই এসে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ৩০০ টাকার ভাড়া আজ ৭শ’ টাকা খরচ করে ধামরাইয়ে কর্মস্থলে আসতে হলো। কারণ রোববার থেকে কারখানা খোলা। রাস্তায় বেশ কযেকটি গাড়ি পাল্টাতে হয়েছে। তারপর আসতে পেরেছি।

এনামুর নামে এক শ্রমিক জানান, ময়মনসিংহ থেকে তার কর্মস্থল ঢাকার ধামরাইতে পৌঁছাতে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা ভাড়ায় তিনি যাতায়াত করতেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ৬০০ টাকা ভাড়ায় খোলা ট্রাকে করে তিনি ধামরাইতে পৌঁছান। গত শুক্রবার কারখানার সুপারভাইজারকে ফোন দিলে তিনি কারখানায় আসতে বলেন।

অপরদিকে একাধিক শ্রমিক এসেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে। বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে তারা জানান, কর্মস্থলে আসতে বেশিরভাগ শ্রমিকেরই তিনশ’ টাকার গাড়ি ভাড়া ৬ বা ৭শ’ টাকার দরকার হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রায় শ্রমিকেরই অনেক বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে। তারপরও যদি ভালো করে আসা যেত। কয়েকটি গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে। অটোরিকশা, সিএনজি করে আসতে হয়েছে। আর গুনতে হয়েছে দ্বিগুণ টাকা।

তারা বলেন, শেষ পর্যন্ত অনেকে সবজি ও মাছের ট্রাকে করে তাদের কর্মস্থলে আসতে হয়েছে। কাজে আসার চেয়ে কষ্টের ভাগই বেশি ছিল। কারখানা মালিকপক্ষ যখন যে আদেশ দেন, সেটাই শুনতে হয়। আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে না কেউ। যে অবস্থাতেই থাকি চলে আসতে হয়। আবার পায়ে হেঁটেও আসতে হয়েছে অনেক রাস্তা।

কারখানা খোলার বিষয়ে শনিবার দুপুরের পর থেকেই ধামরাইয়ে দলে দলে লোকজন আসতে থাকে। রোববার সকাল এবং দুপুরে শত শত লোকজন তাদের কাজের জন্য চলে আসে। এতে স্থানীয়রা করোনা আতঙ্ক নিয়ে খুবই চিন্তায় আছে। কারণ তারা নিজেরা সুস্থ থাকলেও রাস্তায় একাধিকবার গাড়ি পাল্টাতে হয়েছে। তাই বিষয়টা খুবই চিন্তার।

এদিকে লকডাউনের মধ্যেই শ্রমিকরা কাজে ফেরায় স্থানীয়রা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় করোনার প্রাদুভার্বের পর থেকেই সরকারের নির্দেশ মতো আমাদের এলাকায় লকডাউন কার্যকর রয়েছে। এমন অবস্থায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা প্রবেশ করায় নিরাপত্তার সমস্যা তৈরি হতে পারে। অনেক বাড়ির মালিক শ্রমিকদের বাড়িতে প্রবেশ করতে অনিহা প্রকাশ করেন। হঠাৎ করে শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে চলে আসায় ভোগান্তি বাড়বে।

তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যায় ধামরাইয়ের নতুন দক্ষিণপাড়া মহল্লায়। বিভিন্ন জেলার শ্রমিক আসলে, বিশেষ করে মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাজিপুর জেলার শ্রমিক কোন বাড়িতে আসলে তা স্থানীয় কাউন্সিলরদেরকে জানাতে হবে। কিন্তু বাড়ির মালিকগণ তা করছে না। কারণ জানালে যদি কোন ঝামেলা হয় তাই। আবার বাড়ি চিহ্নিত করে দিতে পারে। কারণ ওইসকল জেলা করোনাভাইরাস সংক্রমিত বেশি। বাড়ির মালিকরা যদি তথ্য গোপন রাখে, তাহলে করোনাভাইরাস নিয়ে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামিউল হক জানান, শর্ত সাপেক্ষে শ্রমিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা রাখতে হবে এবং সরকারি নির্দেশ মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তিনি।