দেশের বাহিরে থাকায় প্রাণে বেঁচে আছি: প্রধানমন্ত্রী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ০৪ ২০১৯, ২০:১৭

লন্ডন প্রতিনিধি:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, তার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই।
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা একদিন দেশ স্বাধীন করেছিলেন তার বাস্তবায়নই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পচাত্তরের বিয়োগান্তক ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ‘একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি দেশের জন্ম দিয়ে বীরের জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল বাঙালি। তবে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই স্বীকৃতি বদলে গিয়ে বিশ্বব্যাপী তাদের পরিচয় দাঁড়ায় খুনি জাতি হিসেবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন বলেই এখনও বেঁচে আছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখে যাবো বলেই হয়তো আল্লাহ আমাদের এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন।’

০৩ আগস্ট শনিবার বিকেলে সেন্ট্রাল লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার সেন্ট্রাল হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ কর্তৃক আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

চোখের চিকিৎসা, বাংলাদেশি দূতদের সম্মেলন এবং অন্যান্য কর্মসূচিতে যোগ দিতে গত ১৯ জুলাই লন্ডনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৮ আগস্ট তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।

ভাষণে ডেঙ্গু নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চোখের চিকিৎসার কারণে এবার দীর্ঘদিন লন্ডনে থাকতে হলো। তবে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সরকার ও আমাদের দলসহ দেশবাসী যুদ্ধ করছেন। নিয়মিতই আপডেট পাচ্ছি, প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ এ পরিস্থিতিও অতিক্রম করবো আমরা।’

জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় ৭৫ পরবর্তী সময়ের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘জীবনের সেই কঠিন দুঃসময়ে তারা দুবোন প্রবাসী বাঙালিদের পাশে পেয়েছেন। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তার গলা ধরে আসে বার বার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতির লক্ষ্য যদি হয় জনগণের ভাগ্যন্নোয়ন, তাহলে সে রাজনীতি সফল হবেই। ১৯৯৬-২০০১ এবং বিগত ১০ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে এই দলটির রাজনীতির লক্ষ্য দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন। আর এ কারণেই বার বার মানুষ এই দলকে ক্ষমতায় পাঠাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপি প্রশ্ন তোলে। আবার এই নির্বাচনে বিজয়ী এমপিদের আবার তারা পার্লামেন্টেও পাঠায়। এমন পরস্পর বিরোধিতা কি রাজনীতিতে মানায়? তা সত্ত্বেও বিএনপি এমপিদের পার্লামেন্টে আমরা স্বাগত জানিয়েছি, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলেই বার বার আন্দোলনের হুমকি দিয়েও বিএনপি তা করতে পারছে না। বিএনপির বিগত দিনের মানুষ পুড়ানো আন্দোলনের কথা কেউ ভোলেনি বলেই তাদের কোন আন্দোলনের ডাকেই সাড়া দিচ্ছে না জনগণ।’

বিএনপিকে আত্মসমালোচনার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের এক তরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল, কয়দিন ক্ষমতায় টিকতে পেরেছিলেন তারা? ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। আসলে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে কোন আন্দোলনই সফল হয় না।’

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ৭৫ এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ের রাজনীতি, স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসনসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতেও দীর্ঘ এক ঘণ্টা কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে দুই বোনের নির্বাসন জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘রেহানার বিয়ের সময় ভাড়ার টাকার অভাবে পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য আমি বোনের বিয়েতে এই লন্ডনে আসতে পারিনি। পরবর্তীতে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ব্যবস্থা করে দেয়ায় লন্ডনে রেহানার সঙ্গে এসে মিলিত হই’।

প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সুইডেনের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ড. রাজ্জাক বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্টকহোমে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের উদ্যোগ নিলে রেহানা সেখানে বক্তব্য রাখে। এটিই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে প্রথম কোন সমাবেশ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়ার অধিকার থাকে সবার। কিন্তু বাবা বঙ্গবন্ধুসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি খুনিরা, তাদের সরকার এই খুনের বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশও জারি করে। পরিবার হত্যার বিচার পাওয়া থেকেও বঞ্চিত করা হয় আমাদের দুই বোনকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, মোশতাক-জিয়ার নির্দেশে খুনিদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে ওই সময় বিদেশে পাঠানো হয়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে ক্ষমতার বিভিন্ন শীর্ষ পদে বসান। ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে উল্টো পথে চালিত করার সব অপচেষ্টাই করেছেন জিয়াউর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও আমাকে নিশ্চিহ্ন করতে বার বার আঘাত এসেছে। গ্রেনেড হামলা করে পুরো আওয়ামী নেতৃত্ব ধ্বংস করে দেয়ার অপচেষ্টাও হয়েছে। ওই হামলায় বেগম আইভি রহমানসহ দলের অনেক নেতাকে দিতে হয়েছে আত্মাহুতি। আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এরপরও আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সুতরাং আমার মৃত্যু ভয় বলে কিছু নেই। যতদিন বেঁচে আছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণে কাজ করেই যাবো।’

প্রধানমন্ত্রী বিগত ১০ বছরের তাদের শাসনামলে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘এক সময়ের ক্ষুধার্ত বাংলাদেশ আজ খাদ্য উদ্ধৃত দেশ। দেশের ৯৪ ভাগ এলাকা আজ বিদ্যুতায়িত। বাংলাদেশের রয়েছে আজ নিজস্ব স্যাটেলাইট। ডিজিটাল বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিটি মানুষের হাতে আজ মোবাইল ফোন।’