দুয়ারে ঈদ, হৃদয়ে বেদনা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ২০ ২০২১, ০০:২৯

মুহাম্মদ হাসান মুরাদ

স্বাগতম ঈদুল-আযহা। রঙের আবির মেখে পশ্চিম আকাশে ভেসে উঠেছে জ্বিলহজ্জের বাঁকা চাঁদ।চারদিকে খুশির জোয়ার । আল্লাহ প্রেমিকগণ সৌভাগ্যে হাজির হয়েছেন কাবা চত্বরে। করোনা ইস্যুতে বঞ্চিতরা কাঁদছে নিরবে, নিভৃতে। মিডিয়া পাড়ায় গুঞ্জরিত হচ্ছে কোরবানি আর করোনা নিয়ে। এইতো শুরু হবে তাকবিরে তাশরিকের কন্ঠস্বর। মসজিদের মিনারগুলোতে ধ্বনিত হবে রবের বড়ত্বের ঘোষণা, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার–। নামাজের পর জবাই হবে কোরবানির পশু। মানুষ জটলা বেঁধে দাঁড়াবে, যেমন শাপুড়ের শাপ খেলা দেখার জন্য গোল হয়ে দাড়ায়। করোনা মাঝেও মানুষ ফিরছে বাড়ির পথে। দুরের স্বজনরা আসছে কাছে। কাছের স্বজনরা হচেছ আরো কাছে।চারিদিকে প্রস্ততি চলছে উৎসবের। ইবাদতের। ঈদের । আমার,আমাদের হৃদয়ে ব্যাথা-বেদনা।বিশ্ব সন্ত্রাসী ইজরাইল আবার হামলা করছে মাজলুম ফিলিস্তিনিদের উপর।পুলিশ প্রহরায় ঢুকে পড়েছে মসজিদে আকসায়। এবারো হয়ত ঈদের নামাজে বাধা সৃষ্টি করবে। কি নির্মম? রমজান,ঈদ এলেই ওদের হামলা তীব্র হয় ।যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে বিভৎস-ভয়ানক ছবিচিত্র। টেবিলে রাখা গ্টিি গ্লোবটি  দৃষ্টি কাড়ল। উত্তর গোলার্ধে ৩০ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। প্যালেস্টাইন-ফিলিস্তিনের মানচিত্রে। মানচিত্রে ফিলিস্তিন নামটিও নেই। দেখতেই মনটা দুমড়ে মুচড়ে উঠল, ব্যথা-বেদনায়। সে ব্যথা দেখা যায় না, দেখানোও যায়না। দিল থাকলে অনুভব করা যায়, এই যা।

১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইন দখলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের উপর জুলুমের সূচনা করেছ, বিশ্বসন্ত্রাস ইহুদী গোষ্ঠী ইজরাইল। সেই থেকে এখনো চলমান সে নির্যাতন। শহিদের রক্তে ভারি হচ্ছে দিনের পর দিন। দিবালোকে,আধাঁররাতে কখনো মা,বোন,স্ত্রীদের টেনে-হেচড়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বন্দি করছে অন্ধকার শিবিরে। যুলুম,নির্যাতন,ধর্ষণ করছে দিনে-রাতে, বারেবারে। অবুঝ শিশুরা ভীতসন্ত্রস্ত,কম্পিত। অসহায় নাগরিক শুধু ডুকরে কাদছে। লবনাশ্রু শেষ সেই কবেই। এখন রক্ত ঝরছে। আর কত —? জাতিসংজ্ঞ, ও আই সি, তারা তো রিমট চালিত রোবট, তাই নির্বিকার।

আমরা যখন ঈদের সালাত আদায় করব, তখন ফিলিস্তিনি ভায়েরা মৃত্যৃর প্রহর গুণবে। সাদা কাফনে জানাযা পড়বে। আমার বোন মেহেদির আল্পনায় হাত রঙিন করবে, আর ফিলিস্তিনি বোন আবরু বাচাতে নিরবে অশ্রু ফেলবে। আমার মা গোশত ভুনতে ব্যস্ত, আর ফিলিস্তিনি মা, স্বামী-সন্তান হারানের শোকে শোকপাথর। আমি কীভাবে ঈদ আনন্দ করব? আমার পেয়ারা রাসুল বলেছেন সব মুসলিম এক দেহের মত। এক অংশ ব্যথা পেলে অন্য অংশ ব্যথিত হবে। ফিলিস্তিনে যাদের রক্ত ঝরে তারা তো আমারি ভাই! যাদের ইজ্জত লুন্ঠিত হয় তারা আমারি বোন? অবুজ নিষ্পাপ রক্তাত্ত শিশু, সে তো আমারি শিশু! আমি কীভাবে ঈদ আনন্দ করব! আজ তিহাত্তোর বছর ধরে চলছে এ তান্ডবলিলা। জানিনা আর কতদিন চলবে এ উন্মুক্ত পাশবিকতা? কী অপরাধ ফিলিস্তিনের ছিন্নমূল মানুষের? তারা জাতে মুসলিম এই কি তাদের অপরাধ? আমি ব্যাথিত, মর্মাহত, শোকাহত। আমার এ ধমনিতে শিহরিত হয় প্রতিশোধের স্পৃহা। কিন্তু হায়! সাধ আছে সাধ্য যে নেই!তবু আমি,আমরা দমিত নই। আমি অশ্র্রুু ফেলি তাদের সাথে যারা অশ্রু ঝরায় শেষ রাতে মালিকের কুদরতি পায়ে। তাই আমি স্বপ্ন দেখি বিজয়ের। অতিনিকটেই ফিলিস্তিন হাসবে, বিজয়ের হাসি। ইসলামী ইতিহাসে এমন রক্ত কত ঝরেছে। তার পরও মুসলিম উম্মাহ টিকে আছে এবং ইনশাআল্লাহ টিকে থাকবে কিয়ামত অবধি । হেফাজতের প্রতিশ্রুতি যে দিয়েছেন স্বয়ং মালিক নিযে। তবে আমি খুজে ফিরি সে প্রগতিবাদীদের যারা মানবতার মায়াকান্নায় বিবেকশূন্য। কোথায় বুদ্ধিজীবিরা? তারা কি দেখেনা ফিলিস্তিন,কাশ্মির আর আরাকানে কি ঘটছে? তাদের কলম লেখেনা ফিলিস্তিনের কথা। স্বাধীন দেশে মুসলিম ঘরে তারা খুজে পায় জংগি। আর যারা অসহায় নির্যাতিত, ,নিষ্পেশিত তাদের বলে ওটা ওদের অভ্যন্তরিণ বিষয়? এটাই মানবাত? এতো মানবিকতার প্রশ্নে অমানবিক সমর্থন। অবাক হই ক্ষমতার লোভে অন্ধ, বিলাসিতার নেশায় চোর, বিশ্ব আরব নেতাদের দেখে ! আরবের তেলে ইহুদি নাসারারা হয় শাসক আর আরবিরা হয় রাজপ্রাসাদে শাসিত। ভাবি অধপতনের ডেফিনেশন আর কত গড়াবে? হায়! বিশ্ব নেতাদের চোখ কবে খুলবে? গাফলতের ঘুম কবে ভাঙ্গবে? হে মুমিন আসো আমি, তুমি, আমরা কন্ঠ বলিষ্ঠ করি। চেতনা গড়ে তুলি। ঈমানকে শানিত করি। ক্রসেড তান্ডবলীলা দুশ বছর চলেছে।তাতারি, মঙ্গোলিয়া নির্ম্ম নির্যাতন চালিয়েছে। জনপদ বিরান করে দিয়েছে, তারপরও মুসলিম উম্মাহ টিকে আছে এবং থাকবে। তবে আমার কন্ঠ যদি হয় মজলুমের পক্ষে,জালিমের বিপক্ষে তবে আমি হেরেও বিজয়ী। আবুল হাসান আলি নাদবী রহ. মুসলিম অথপতনের যে বিবরণ দিয়েছেন তার একটি হল ‘স্থবিরতা, থেমে যাওয়া।মুসলিম সম্প্রদায় স্থবির হয়ে গেছে। এখন প্রয়োজন গাফলতের ঘোর দুর করা। সজাগতার। তবেই ফিরে পাব হারানো অতীত। মুক্তিপাবে মানোবতা। দূর হবে পরাধীনাতা।

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক