দুই যুগ ধরে রমজানে বিনা পয়সায় মেসওয়াক বিলি করে আসছেন মাহতাব

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ১২ ২০১৯, ১৫:৫৫

 

মাহাতাব উদ্দিন, বয়স ৫৪। পেশায় ওয়াচম্যান (প্রহরী)। দৈনিক মজুরিতে চাকরি করেন। নিজের সংসার চালাতে যিনি হিমশিম খান, তিনিই আবার রমজান মাসে নিজেকে রোজাদারদের সেবায় নিয়োজিত করেন।

জানা গেছে, রমজান মাস এলেই দরিদ্র মাহাতাব উদ্দিন চাকরি থেকে ছুটি নেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বিনামূল্যে মেসওয়াক বিলি করেন। গত দুই যুগ ধরে এভাবেই রোজাদারদের সেবা দিয়ে আসছেন তিনি।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার চকমহাপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহাতাব নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের কৃষ্ণা খামারে চাকরি করেন।
বৃহস্পতিবার বাগাতিপাড়ার তমালতলা বাজারে মেসওয়াক বিতরণের সময় মাহাতাবের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিনিধির।

মাহাতাব জানান, সেই ছোটবেলা থেকে রমজান মাসে বাড়ির পাশের বাজারে গিয়ে বসে থাকতেন। বিকাল হলেই সবাই তাকে মেসওয়াক (দাঁতন) নিয়ে আসতে হুকুম করতেন। সেই থেকে মানবসেবার অদ্ভুত এক নেশায় পেয়ে বসে তাকে।

তিনি মনে করেন, কেউ হুকুম করার আগেই যদি তার মেসওয়াকটা হাতের কাছে এনে দেয়া যেত, তা হলে লোকটি বোধ হয় আরও খুশি হবে। সেই ভাবনা থেকেই শুরু।

এর পর দুই যুগ ধরে রমজান মাসে মেসওয়াকের ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ান নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। হাট-বাজার ও মসজিদের সামনে বিনামূল্যে মেসওয়াক বিতরণ করেন তিনি।

মাহাতাব বলেন, সেহরি খাওয়ার পর থেকে সকালবেলা পর্যন্ত মেসওয়াক তৈরি করি। দুপুরের পরই মেসওয়াকের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। এ কাজে আমার স্ত্রী ও সন্তানরা সহযোগিতা করে।

তিনি আরও জানান, তিনি নিমগাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক বানান। এ কাজের জন্য গাছের মালিকরা তাকে দাওয়াত করে ডেকে নিয়ে যান। তাছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য ঔষধি গাছ আপাংয়ের ডালের বিশেষ মেসওয়াক তৈরি করেন তিনি।

মাহাতাব জানালেন, সারা বছর ছুটি না কাটিয়ে সেগুলো জমা করে রাখেন। রমজান মাস এলেই পুরো মাসের ছুটি নিয়ে নেমে পড়েন এ কাজে। শুরুর দিকে কর্তৃপক্ষ ছুটি দিতে না চাইলেও তার এ কাজের নেশা দেখে এখন আর বাধ সাধে না।

সংসার জীবনে মাহাতাব তিন সন্তানের জনক। ১৪ বছর আগে একমাত্র মেয়ে মুক্তার বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে মধু একাদশ শ্রেণি পাস করে আনসার বাহিনীতে চাকরি করছেন। আর ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে।

স্থানীয় কলেজশিক্ষক গোলাম তোফাজ্জল কবির মিলন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে মাহাতাব উদ্দিনকে এভাবে মেসওয়াক বিলি করতে দেখছি। কিন্তু কোনোদিন কারো কাছ থেকে একটি টাকাও নিতে দেখিনি। নেহাতই মনের আনন্দ পেতে চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরে তার এ মানবসেবা সত্যিই আমাদের অবাক করে