দান-সদকায় মনোযোগী হতে হবে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ০৫ ২০২০, ০৪:৫৫

মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী:

রাসুল (সা.) ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দানশীল, কল্যাণকামী ও মহান হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিত্ব। মহিমান্বিত এ মাসে তাঁর দান-সদকা অপরাপর মাসের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে যেত। (বুখারি)

তাই আমরাও শারীরিক ইবাদতের পাশাপাশি সাধ্যানুযায়ী দান-সদকায় অধিক মনোযোগী হতে হবে।

রমজান সহমর্মিতা, উদারতা ও বদান্যতার মাস। করোনাকালের এ রমজানে বিত্তবানদের দায়িত্ব অনেকটা বেড়ে গেছে। তাদের প্রতি সময়ের দাবি হচ্ছে, কোনোপ্রকার অহমিকা-আত্মম্ভরিতা

ব্যতিরেকে খোঁজে খোঁজে অসহায়, অনাথ, অভাবগ্রস্থদের প্রতি দয়া ও মমতার হাত প্রসারিত করা। এটি তাদের ওপর দুর্বল আত্মীয়, প্রতিবেশি ও অন্যান্য অভাবগ্রস্থদের অধিকার। আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘আর আত্মীয়স্বজনকে দাও তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপচয় কর না।’ (সুরা ইসরা, আয়াত : ২৬)

আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ১৯)

দানশীল ব্যক্তিকে বলা হয় আল্লাহ’র বন্ধু।

দান-সদকার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- ‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা হলো যেমন একটি শস্য বীজ, তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) শত শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে করেন বর্ধিত করে দেন, বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন বিপুল দাতা, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬১)

উম্মতকে দান-সদকার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা খেজুরের সামান্য অংশ সদকা করে হলেও নিজেদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো।’ (বুখারি ও মুসলিম)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘রমজান মাসের একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের একটি ফরজ ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব। এ মাসের একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব।’ (ইবনে খুযাইমা)

এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, রমজান মাসে কেউ নফল সদকা হিসেবে এক টাকা দান করলে সত্তর টাকা দান করার পুণ্য লাভ করবে। আর যদি ফরজ হিসেবে (যেমন- জাকাত) আদায় করে, তবে তা সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমপরিমাণ ফজিলতপূর্ণ হবে।

হাদিসে দান-সদকার অশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন, দান-সদকা বিপদ-বিপর্যয় দূরীভূত করে, জীবন সমৃদ্ধ করে। গুনাহ মিটিয়ে দেয়, ক্ষমা লাভের মাধ্যম হয়। আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। অসুখ-বিসুখ থেকে সুস্থতা পাওয়া যায়। দোয়া কবুলে সহায়ক হয়। জীবিকায় বরকত লাভ হয়। আল্লাহর দয়া ও ভালবাসা পাওয়া যায়। ইমানের সাথে মৃত্যু হয়। কবরের আজাব থেকে সুরক্ষা লাভ হয় ইত্যাদি।

বৈশ্বিক এ ক্রান্তিলগ্নে অনেক অভাবী মানুষ রয়েছেন, যারা লজ্জাবোধ করে তাদের দূরাবস্থার কথা কারও কাছে প্রকাশ করতে চান না। বিত্তবানরা সন্ধানী চোখে ওই অভাবগ্রস্থদের প্রতি কল্যাণের হাত প্রসারিত করে উত্তম সদকাকারী হতে পারেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, জনৈক লোক রাসুল (সা.) কে প্রশ্ন করল, ‘ইসলামের উত্তম কাজ কোনটি? রাসুল (সা.) বললেন, ‘কারও মুখে আহার তুলে দেওয়া…।’ (বুখারি)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেবেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

অন্য হাদিসে রাসুল সা. বলেন ‘যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মহান আল্লাহ পুণ্যময় রমজানে আমাদের পারস্পরিক আরোও সহানুভূতিশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। তাঁর অনুগ্রহ ও ভালবাসায় সিক্ত করুন। আমিন।

লেখক : মুফতি, প্রবন্ধকার।