থার্টি ফার্স্ট নাইট : বিজাতীয় সংস্কৃতি

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ৩০ ২০১৯, ২৩:৫৫

।। এহসান বিন মুজাহির ।।

পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’। নতুন বছরটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত একটি বছরের পর্যালোচনা ও নতুন এক বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা সচেতন মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব। ইংরেজি নববর্ষের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক সুস্পষ্ট। তাই ইংরেজি নববর্ষ পালন করা মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণকর নয়।

খৃস্টানদের অনুকরণে ইংরেজি বছর শেষে নতুন বছরের শুরুতে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ (১২টা ১ মিনিট) পালন করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। এ রাতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অশ্লীলতা-নগ্নতা ও বেলেল্লাপনার বন্যায় প্লাাবিত হয়। মদ পান, ছেলে মেয়ের যৌন উম্মাদনাসহ বিভিন্ন অনৈতিক, কর্মকান্ড ও নোংরা অনুষ্ঠান করে ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করা হয়। যা ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ।

ইসলামে নৈতিকতাহীন ক্রিয়া কর্মের অশ্লীল উপভোগ নেই। বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও নোংরামীকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ইংরেজি নববর্ষ তথা ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ ইসলামে অবৈধ। এটা খৃষ্টানদের সংস্কৃতি। থার্টি ফার্স্টে অসামাজিক কার্যকলাপ বহুগুণে বেড়ে যায়। জাতীয় পত্র পত্রিকার শিরোনামের অনেকটাই দখল করে থাকে থার্টি ফার্স্ট নাইটের রমরমা কাহিনী। পর্ণো মুভি, নেশাদ্রব্য, আপত্তিকর নাচ-গানসহ বিভিন্ন বেহায়ামিপূর্ণ কীর্তিকলাপ দ্বারা থার্টি ফার্স্ট উদযাপন গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে চলে আসছে।

একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, দশক আগে এ দিবসটি এভাবে উদযাপন করা হতো না। কিন্তু ভিনদেশের সংস্কৃতি আমাদের দেশের দালাল মিডিয়া আমদানি করত: আমরা আজ এ দিবসগুলোতে শরীয়ত বিরোধী ও গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে ঈমানদারগণ তাদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করছেন। থার্ট ফার্স্ট নাইটে রাজধানীর হোটেল, নাইট ক্লাব ও উদ্যানগুলো জেনা- ব্যভিচারের বাজার বসে। নাচ গান,মদ ও নেশা খেয়ে এক তরুণ অপর তরুণীর পবিত্র সতিত্বকে ভোগ করে। বিভিন্ন প্রিন্ট এবং অনলাইন মিডিয়া থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন হোটেল ও স্পটগুলোতে অচেতন অনেক যুবতীদের বীভৎসরূপে পাওয়ার ছবিও জাতীয় দৈনিকে এসেছে।

মূলত এটা খৃস্টানদের সংস্কৃতি হলেও প্রতি বছর এটা মুসলিম উম্মাহগণও পালন করে থাকেন। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ি, শরীয়ত সীমালঙ্ঘন করে ফেলি। অশ্লীলতা ও নোংরামীতে লিপ্ত হয়ে পড়ি। এটা মুসলমানী কোন সভ্যতা, সংস্কৃতি হতে পারে না। বরং এটা একটি অপসংস্কৃতি। ইহুদী খৃস্টানদের কালচারকে মুমিন মুসলমানরা আজ অনুসরণ করছেন। থার্টি ফার্স্ট নাইট বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ এবং অশ্লীলতার মহাপ্লাবন। এটা সম্পূর্ণ বিজাতীয় সংস্কৃতি। একজন ঈমানদার মুসলমান ও রুচিশীল-সচেতন মানুষ কিভাবে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও বেহায়াপনাকে সমর্থন করে তা বোধগম্য নয়।

বিজাতীয় সংস্কৃতি উদযাপন থেকে বিরত থাকতে কুরআন ও হাদিসে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া (ইসলামি রীতিনীতি) অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে তিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। (সূরা আল ইমরান : ৮৫)।

নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে অন্য জাতির সাথে আচার-আচরণে, কৃষ্টি-কালচারে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত বিবেচিত হবে। (সুনানে আবু দাউদ : ২৭৩২)।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক সুস্পষ্ট এরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি’। (সুরা মায়িদাহ : ৪৮)।

রাসুল (সাঃ ) এরশাদ করেন,‘যদি তুমি খারাপ কাজ করো, আর তোমার খারাপ লাগে, ভাল কাজ করে ভাল লাগে তাহলে তুমি মুমিন। কিন্তু যদি খারাপ কাজ করে ভাল এবং ভাল কাজ করে খারাপ লাগে তাহলে তুমি মুমিন হতে পার না’। (মুসলিম : ১৯২৭)।

হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি অনারবীয় দেশে বসবাস করে, সে যদি সে দেশের মেহেরজান (নববর্ষ) উদযাপন করে এবং বাহ্যিকভাবে তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখে এমনকি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে, তা হলে কিয়ামতের দিন তাকে তাদের (কাফিরদের) সাথে হাশর করা হবে’ (বায়হাকি মাজমুয়াতুত তাওহীদ : ২৭০)।

একজন ঈমানদার নর-নারীর প্রতিটি দিন-রাত উৎসব ও আনন্দের। বছরে গুটি কয়েক দিন নয় বরং প্রতিটি দিন আনন্দের। প্রতিটি দিন ক্ষণ আমাদের জন্য মুল্যবান। বিশেষ করে থার্টি ফার্স্ট নাইট আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাত। আমাদের দায়িত্ব ছিল এই রাতে অনুশোচনা ও আত্মসমালোচনা করে আগামী বছরের কল্যাণ কামনা করত: সিজদাবনতে হয়ে থাকা। তাওবাহ, ইস্তেগফার, দোয়া- দুরুদ, নফল নামাজসহ ইত্যাদি ভালো কাজের মধ্যে রাতগুজার করা । আল্লাহ আমাদেরকে বিজাতীয় সংস্কৃতির কবল থেকে হেফাজত করুন।

লেখক : সাংবাদিক ও শিক্ষক