তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে তরুণদের সম্ভাবনার কথা বললেন সজীব ওয়াজেদ জয়

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ১৬ ২০১৮, ০০:৪৭

মুহাম্মাদ তাওহিদ: তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে এ খাতে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। গতকাল রাজধানীতে দুই দিনব্যাপী বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করলে তরুণদের আর সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এ সময় ফেসবুককে ‘ফেকবুক’ উল্লেখ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুণদের আসক্তি বিপদের কারণ হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে গতকাল আরেকটি অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘বক্তৃতা দিতে আমার ভালো লাগে না। আমি তরুণদের কথা শুনতে চাই। তাদের সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগে।’

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী প্রমুখ।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জয় বলেন, আমরা সারাদেশে কোটার আন্দোলন দেখলাম। সরকার প্রথমবারের মতো কোটা সংস্কারের উদ্যোগও নিয়েছে; কিন্তু প্রতিবছর জনপ্রশাসনে আমরা মাত্র ৩-৪ হাজার লোককে নিয়োগ দিতে পারি। সংখ্যায় এটি নগণ্য। এর চেয়ে বেশি চাকরিপ্রার্থীকে কিন্তু আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই চাকরি দিতে পারি। তরুণদের বলবÑ সরকারি চাকরির দিকে এত না ঝুঁকে আইটি সেক্টরের দিকেও ঝুঁকতে পারেন।

তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা এখন ৩০ হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আগামী ২০২১ সালে আমরা এক লাখ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার টার্গেট নিয়েছি। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তরুণরা জনশক্তিতে পরিণত হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুণদের আসক্তি ক্রমেই বিপদের কারণ হয়ে উঠছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তরুণরা বিশাল শক্তির আধার। সমাজের প্রতি তাদের অনেক দায়িত্ব। তাদের ইন্টারনেট আসক্তি দেখে এখন আমাকে বলতে হয়, ‘ফেসবুক’ এখন একটি ‘ফেকবুক’।

ইন্টারনেটে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা, বিদ্বেষপূর্ণ তথ্য ও মন্তব্য প্রচারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বসে গোটা ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। একটা ওয়েবসাইট বন্ধ করব, আরও দশটা দশ মিনিটে তৈরি হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ইন্টারনেটে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য সমাজে সংঘাত ডেকে আনে। এটি সমর্থন করা যাবে না। তিনি তরুণদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন।

সামিটে দেশি-বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, সরকারের নীতিনির্ধারক, গবেষক, শিক্ষার্থী, বিপিও খাতের সঙ্গে জড়িতরা অংশ নিচ্ছেন। ৪০ স্থানীয় বক্তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ২০ আন্তর্জাতিক বক্তা। এতে ১০টি সেমিনার হবে। এটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বেসিস, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, বাংলাদেশ ওমেন ইন টেকনোলজি, আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।

তরুণদের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে

এদিকে গতকাল আরেক অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘বক্তৃতা দিতে আমার ভালো লাগে না। আমি তরুণদের কথা শুনতে চাই। তাদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে।’ রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে ‘লেটস টক’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি গিটার বাজাতে পছন্দ করতাম; কিন্তু পড়ালেখা ও কাজের চাপে তা বন্ধ করে দেই। এখন আবার গিটার বাজানো শুরু করেছি। কম্পিউটার খুব পছন্দের বিষয়। সুযোগ পেলেই কাজ করি কম্পিউটারে। কম্পিউটারে গেম খেলতে পছন্দ করি; গানও আমার খুব পছন্দ। সুযোগ পেলে রাগ সংগীত শুনি। এ ছাড়াও ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। সুযোগ পেলেই পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে সিনেমা দেখি। আমার পছন্দ অ্যাকশন ছবি; কিন্তু তাদের পছন্দ ভিন্ন। তাই তিনজন একসঙ্গে কী সিনেমা দেখব তা বাছাই করতে কষ্ট হয়। ডিজনির সকল সিনেমা আমরা দেখেছি।’

জীবনে প্রথম সাইকেল পাওয়ার কথা স্মরণ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমি তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি। একবার খুব শখ হলো সাইকেলের। এ সময় দিল্লিতে থাকি আমরা। বাবাকে সাইকেল কিনে দিতে বলার পর তিনি বললেন, ক্লাসে প্রথম হলে সাইকেল কিনে দেবেন। জীবনে প্রথম চ্যালেঞ্জ। ক্লাসে প্রথম হওয়ার পর বাবা সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। চ্যালেঞ্জ নিলে তা পূরণের জন্য আরও বেশি কাজ করি। এমনই এক চ্যালেঞ্জ ছিল হাভার্ডে যখন ভর্তির আবেদন করি। ১৯৯৭ সালে ব্যাচেলর শেষ করার ১০ বছর পর প্রথম কোনো পরীক্ষা দেই। আর সেখানে আমার লক্ষ্য ছিল ৯৯% মার্কস রাখা; সেটি করতে পেরেছি।’

নিজ পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময় নিয়ে জয় বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই বুঝতে পারি না, বাবা-মা তার বাচ্চাকে লালনপালন না করে কেনো কাজের লোকের কাছে রেখে যান। আমি এখনো আমার মেয়েকে রাতে নিজে পড়াই। আমার স্ত্রী এবং আমি মেয়েকে নিয়ে যাই যখন তার ফুটবল খেলা থাকে। সুযোগ পেলে মেয়েকে ফুটবল প্র্যাকটিসের জন্য নিয়ে যাই।’