জগলুল হায়দারের ঐতিহাসিক ছড়া- শিকড়

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ২২ ২০২০, ০৮:৩১

৭.

উলটা আবার প্রদেশ ভাগে ওদের কতো দ্রুততা
ম্যাপ নিয়ে তাই রেডক্লিফে দেয় সে ভাগে ভ্রু তো তা।
সরোয়ার্দী-শরৎ বসুর চেষ্টা গেলো বিফলে
শ্যামাপ্রসাদ খ্যাপায় অতো চেষ্টাতে আর কি ফলে?

জিন্না এবং সরোয়ার্দী চায়নি বাংলা বিভক্তি
নেহেরু তাও করলো ভাগা, অখণ্ডতায় কি ভক্তি!
একইভাবে ভাগের দাবি তুলছে তারা পাঞ্জাবে
ভাগ না হলে; খুনের বানে ইংরেজ তোর জান যাবে।

ব্যাপস্থাপক পরিষদে বসলো সভা সে কথা
বলছি শুনেন, ভাঙলো কারা আর চেলো কে একতা।
হিন্দু যতো এমএলএ সব বাংলা ভাগে ভোটালো
অখণ্ডতার আওয়াজ তাদের এইখানে হয় গোটা লো।

আর মুসলিম সদস্য সব নিখিল লীগের আদেশে
একতা চায় এসেম্বলিতে জানলো সবাই তা দেশে।
তাই হলো ভাই যা চেয়েছেন নেহেরু আর পেটেলে
ভারতমাতায় জুড়তে এবার- বাংলা খানিক কেটে লে।

কাটা বাংলা কাটা পাঞ্জাব তবু এলো আজাদি
সেসব নিয়ে ছড়া লিখি আজো কতো ভাজা* দি।
কলকাতা তো জুটলো না তাও ঢাকা লাহোর করাচি
আনন্দে কি কম মেতেছে? অবাক দিল্লী থ রাচি!

এপার ওপার কোটি মানুষ ছুটলো নয়া সাকিনে
এরই মাঝে কোপাকুপি শাবল বটি দা কিনে।
চোদ্দ আগস্ট উঠলো নিশান উনিশ শ পাঁচ ঠিকানা
জ্বললো ঢাকায় আনন্দে ফের সেই পুরাতন শিখা না!

২শ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসান ও কাঙ্ক্ষিত আজাদি উদযাপনে ১৯৪৭ এর ১৪ আগস্ট সারা ঢাকা আনন্দমুখর ছিল। সেইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমনি এক আনন্দ র‍্যালি।

 

 

 

(পর্ব-৮)

মুর্শিদাবাদ মালদা খুলনা প্রশ্নে নানা ঝামেলা
কেউ বলে ভাই পাকিস্তানে, কেউ ভারতে পা মেলা।
ভাসানি তো খাটলো ভীষণ মাত্র ক দিন ক রাতে
আসলো সিলেটে পাকিস্তানে গণভোটের বরাতে।

হাতে বিড়ি মুখে পানের সেই সিনাটান ফুর্তিতে
ভেজাল ঢুকে হতে থাকে পাকিস্তানের গুড় তিতে।
আটচল্লিশেই গোল বেঁধে যায় উর্দু ভাষা চাপাতে
বাঙালিও ঢেলে দিলো ভাষার ভোজে না- পাতে।

টাঙ্গাইলের বাইপোলে তাই শামসুল হকের জাঁতাতে
হঠাৎ করেই ভীষণভাবে লীগ খেলো যে ঘাত আঁতে।
গঠন হলো নয়া পার্টি মুসলিম লীগ আওয়ামী
বাঙালি কয়, সাবেক লীগে থাকবো বসে তাও আমি?

ভাসানী আর শামসুল হকের তাই সে নয়া দলেতে
এক হলো সব, বাঙালিদের বাড়লো মেলা বল এতে।
সেই সে দলে শেখ মুজিবও তরুণ নেতার কাতারে
যোগ দিয়েছেন, মহীরুহ বানায় শেষে যা তারে।

এই আজাদি ঝুটা বলে আওয়াজ দিলো বামেরা
শাসক কালা, নেয়নি সেদিন বাংলা ভাষার নাম এরা।
ভাষায় আবার জাগলো ঢাকা লাগলো আগুন পলাশে
সেই লড়ায়ে বাহান্নতে রক্তে নয়া বল আসে।

চুয়ান্নতে আসলো বিজয় যুক্তফ্রন্টের কাফেলা
পাক ভূমিতে বাঙালিদের নুতুন আশায় পা ফেলা।
বাঙালিরা তুললে আওয়াজ- রাষ্ট্রভাষায় অংশ দে
ভায়ের খুনে বাংলা বিলও পাশ হলো পাক সংসদে।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ কইরা মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্রদের সেই ঐতিহাসিক জমায়েত। এই জমায়েতেই পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, শফিক (শফিউর), জব্বার প্রমুখ।

 

(পর্ব-৯)

এরই মাঝে ডাণ্ডা হাতে মার্শাল ল দাঁড়ালো
গণতন্ত্র গায়েব সোজা লুপ্ত হলো তার আলো।
এপার ওপার উভয় পাকে শিকল বাঁধা রাজনীতি
শাসন পাকা করতে আইয়ুব চালায় নানা ভাঁজ নীতি।

আইয়ুব শাহীর খতম দিতে নামলো পথে ফাতেমা
বাঙালিও ভোট লড়ায়ে ছিল তো তার সাথে মা।
কিন্তু আইয়ুব বেসিক ভোটে ভানুমতির চক্করে
আসল ডেমোক্রেসির তালা দিলোই পুরা লক করে।

এরই মাঝে যুদ্ধ হঠাৎ পাকিস্তানের বিপদে
ভারতীয় ট্যাংকের মুখে আমরা দাঁড়াই দ্বি পদে।
প্রতিরোধের প্রবল ত্যাগে মাইন বুকে খেমকারানে
বীর বাঙালি ছাড়া তাতে এতো বেশি নেম কার আনে?

স্বাধিকারের আকাংখাতে গুমরে মরা স্বদেশে
স্বৈরাচারী আইয়ুব চালায় ডাণ্ডাবাজির ল দেশে।
মুজিব দিলো ছয় দফা তাই জাতির মুক্তি সনদে
আইয়ুব বলে আনুগত্যে; আমায় শরীর মনও দে।

ঐতিহাসিক লাহোর থেকে পেশ হওয়া ছয় দফা তো
দেখিয়ে দিলো আমগো সাথে তাদের ফাঁক আর তফাতও।
এরই মাঝে আগরতলা ষড়যন্ত্রের খড়গে
আইয়ুব বলে শেখ মুজিবকে জলদি এবার ধরো গে।

আন্দোলনে বাংলা কাঁপে হুংকার দেয় ভাসানি
বাঁশের লাঠি গড়তে যেন লোকে বলে- বাঁশ আনি।
মিথ্যা মামলা মিথ্যা বিচার মানুষ নামে রাজপথে
সেই সে দিনের চিহ্ন এখন আর মেলে না আজ পথে।

১৯৬৬ সালে লাহোরে ঐতিহাসিক ছয়দফা দাবি পেশের পর তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে সাথে নিয়া ঢাকায় ফিরছেন বঙ্গবন্ধু।

 

(পর্ব- ১০)
ইসলাম নিয়ে আইয়ুব শাহীর ধর্মদ্বেষী আলাপে
ক্ষিপ্ত আলেম সমাজ তাকে করলো ঘৃণার মালা পে।
রাজনীতির অই সংগ্রামীরাও সামিল হলে তাহাতে
ধীরে ধীরে আইয়ুব গেলো আমজনতার বাঁ হাতে।
রাগলো মানুষ জাগলো পথে খুলনা থেকে খাইবারে
আসাদ হলো শহিদ দেখে ক্ষোভের আগুন তাই বাড়ে।
ক্ষোভের মিছিল লম্বা হলো মতিউরও লুটালো
কোনকালে কও তো দেখি ছড়ায় স্বৈর বুট আলো?
ছড়ায়নি তাই ভাসানি কয় রাখবি জেলে তালা কে?
মানুষ জাগলে পথ পায় না শক্তিমান ও চালাকে।
উভয় পাড়ে নামলো মানুষ ফুলিয়ে ছাতি দারাজে
উতল হলো লাহোর ঢাকা মুজিব পেলো ছাড়া যে।
রেসকোর্সে ছাত্রসভায় ভালোবাসার দামেতে
মুজিব পেলো তাদের থেকে বঙ্গবন্ধু নাম এতে।
পুবের আগুন নিভলো কিছু পশ্চিমে তাও জ্বলছিলো
ফুটো হলো আইয়ুব শাহীর যতো না ঢাকঢোল ছিলো।
উন্নয়নের সিলিম দিয়া এক দশকের কড়চাতে
আইয়ুব ভিজায় নিজের গলা দুধ চিনি আর শর চাতে।
বললো লোকে বিচারসহ পদত্যাগের খতও নে
পথে পথে ক্ষিপ্ত মানুষ ভাগলো আইয়ুব পতনে।
আইয়ুব গেলে তার গদিতেই আসলো বসে এহিয়া
বললো সবাই ক্ষমতা নয় দেশের দিকে দে হিয়া।
তাই সে দিলো সবার চাওয়ায় নির্বাচনের ঢেঁড়া তো
শয়তানি না হলে সেটা হয় তো কপাল ফেরাতো।

৬৯ এর গণঅভ্যুথানের এক ঐতিহাসিক মিছিলে দৃপ্তপদে আগুসার সেই লড়াকু কিশোর।

(চলবো)