ছোটবেলার ইলিশ -মীম হুসাইন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ১৩ ২০১৮, ১০:৩৫

ছোটবেলার ইলিশ। আমার ধারনা এই মাছটি বড় হয়ে ইলিশ হয়। আমাদের ছোটবেলায় কুশিয়ারা নদীতে কমবেশ ইলিশ ধরা পড়ত। এখন কেউ নদীতে ইলিশের জাল ফেলেন না,কারণ তারা জানেন, দিনশেষে শূন্য হাতেই ফিরতে হবে। আমার স্পষ্ট মনে আছে, বড় চাচা কেরামত আলী কুশিয়ারায় ইলিশ ধরতেন।

ইলিশ ধরার বিশেষ জাল আছে। বিশেষ নৌকা আছে, হাল্কা গড়নের নৌকা। বিশেষ জালও আছে। ইলিশ খুব প্রতিভাবান মাছ। জলের গভীরে থাকে। জলের উল্টো দিকে চলতে থাকে সারাক্ষণ। ইলিশকে ধরতে হলেও প্রতিভা লাগে। হইচই করে ধরা যায় না। গভীর ভাব নিয়ে জাল ফেলতে হয় জলে। ধ্যান নিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয় নায়ের গুলইয়ে। অপর গুলই থেকে নৌকাকে নিঁখুতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় আরেকজন। জাল ফেলার পর হাতার দিকের জালের একটা অংশ কনিষ্ঠ আঙুলে টেনে ধরতে হয়। ওখানে টান পড়লে বুঝা যাবে ইলিশ ঢুকেছে। তখনই বিলম্ব না করে জাল টেনে তুলতে হয় জলের ওপরে।

আমার চাচা ইলিশ ধরতেন। তাঁর ভাষায় ‘ভাটা’ দিতেন। ইলিশের ভাটা। অর্থাৎ জাল ফেলে অনেক দূর যাওয়ার পর আবার জাল গুটিয়ে নদীর স্রোত ধরে উজানে আসতেন। উজানোর সময় থেকে ভাটার গণনা শুরু হয়। প্রতি ভাটায় অন্তত দুই থেকে তিনটা ইলিশ ধরা পড়ত।

সে সময়ে বাড়িতে ইলিশ এলে অভিভূত হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। ভাবতাম, পুঁটিমাছটা বড় হয়ে কী সুন্দর ইলিশ হয়েছে!

আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। বাঙালিরা অন্তত একদিনের জন্য হলেও সংস্কৃতিকে স্মরণ করছে। পান্তা ইলিশের স্বাদ নিচ্ছে।
এই দিন অত্যন্ত সুদূর প্রসারী। বছরব্যাপী পরিব্যাপ্ত। একদিন বলে এই জাতিকে তুচ্ছ করার কোনো শক্তিমান যুক্তি নেই।

-মীম হুসাইন,
গল্পকার,ছাড়াকার।